Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Government Land

Illegal Construction: সরকারি জমিও অবাধে ‘বিক্রি’ করে গড়ে উঠছে বহুতল, ‘রাজনৈতিক প্রভাবে’ মিলছে কাগজপত্রও!

কিন্তু রেল এত দিনেও রাজ্যের কাছে অধিগৃহীত জমি চায়নি কেন? দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কে এস আনন্দ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমাদের কাছেও এটা রহস্য। সব কাগজপত্র জোগাড় করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

সরকারের জমিতে গড়ে উঠছে বহুতল।

সরকারের জমিতে গড়ে উঠছে বহুতল। ফাইল চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৯
Share: Save:

রেলের জন্য অধিগ্রহণ করা জমি। অথচ, প্রোমোটার বা সাধারণ মানুষের কাছে মোটা টাকায় সেই জমিই বিক্রি করে দিচ্ছে জমি-মাফিয়াদের চক্র। শুধু তা-ই নয়, এই ধরনের সরকারি জমি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে বিক্রি করতে তৈরি হয়েছে জমি-মাফিয়াদের সিন্ডিকেট। এলাকার দুষ্কৃতীরা যোগ দিয়েছে সেই সিন্ডিকেটে। অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ‘প্রভাবে’ ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস থেকে বিক্রি হওয়া জমির কাগজপত্রও বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রোমোটারদের থাবা চেপে বসছে এলাকা জুড়ে।

সরকারি জমি বিক্রির এই রমরমা ব্যবসা শুরু হয়েছে হাওড়া শহর লাগোয়া আন্দুলের দুইল্যা মৌজা ও উনসানির বালি-জগাছা ব্লকে। রেল সূত্রের খবর, ১৯৬১ ও ১৯৬৩ সালের মৌড়িগ্রাম-ডানকুনি লিঙ্ক প্রকল্পের জন্য দক্ষিণ-পূর্ব রেল ওই দু’টি মৌজায় ৩৫২.২৬ একর জমি নিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় অধিগৃহীত জমি ৬০ বছরেও রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর রেলের হাতে দেয়নি বলে অভিযোগ। আর সেই সুযোগে মৌড়িগ্রামের দুইল্যা ও সাঁকরাইলে একরের পর একর রেলের জন্য অধিগৃহীত জমি কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে প্রোমোটারদের। তৈরি হচ্ছে একের পর এক অবৈধ বহুতল। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি বেচাকেনার এই খেলায় রাজনৈতিক দলগুলির অনেক ‘রাঘব বোয়াল’ জড়িত।

এলাকার বাসিন্দা এবং সমাজকর্মী প্রতাপ বসু ২০১৫ সালে তথ্যের অধিকার আইনের বলে হাওড়ার ভূমি অধিগ্রহণ দফতর (সাধারণ) থেকে জানতে পারেন, সাঁকরাইল বা দুইল্যায় যে সব সরকারি জমি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, তা আসলে রেলের। এর পরেই তিনি রেলকে সাক্ষী হিসেবে রেখে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তখনই ঝোলা থেকে বেরিয়ে আসে বেড়াল।

প্রতাপবাবু বলেন, ‘‘২০১৯-এ দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুরের সিনিয়র ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানান, রাজ্যপালের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী জানা গিয়েছে, ১৯৬১ সালে মৌড়িগ্রাম-ডানকুনি লিঙ্ক প্রজেক্টের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের। কিন্তু ৬০ বছরেও সেই জমি অজ্ঞাত কোনও কারণে রেলকে হস্তান্তরিত করেনি রাজ্য। এতে রেলের তরফেও যে গাফিলতি আছে, তা হলফনামায় স্বীকার করা হয়।’’

ওই হলফনামা দেওয়ার পাশাপাশি রেলের পক্ষ থেকে সমস্ত অধিগৃহীত জমি হস্তান্তরের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানানো হয়। চাপে পড়ে রাজ্য ইতিমধ্যেই অধিগ্রহণ করা জমির মধ্যে উনসানি মৌজার ১২৩ একর ও দুইল্যার সাড়ে নয় একরের বেশি জমি রেলকে হস্তান্তরিত করেছে। এখনও বাকি রয়েছে ২১৮ একর জমির হস্তান্তর।

প্রতাপবাবুর অভিযোগ, রাজ্য এবং রেলের এই গাফিলতির সুযোগে স্থানীয় জমি-মাফিয়ারা সরকারি জমি বেচে দিচ্ছে। যা কিনে বিপাকে পড়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। অভিযোগ, ওই জমি-মাফিয়ারা স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক ভূমি রাজস্ব দফতর থেকে জমির পুরনো মালিকের (অধিগ্রহণের আগে যাঁর নামে জমি ছিল) নামে কাগজপত্র বার করে একরের পর একর জমি বিক্রি করে দিয়েছে। অভিযোগ, মাঝখান থেকে কাটমানি পকেটে ভরেছেন হাওড়ার একাধিক রাজনৈতিক কেষ্ট-বিষ্টু।

কিন্তু রেল এত দিনেও রাজ্যের কাছে অধিগৃহীত জমি চায়নি কেন? দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কে এস আনন্দ বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমাদের কাছেও এটা রহস্য। সব কাগজপত্র জোগাড় করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’ অন্য দিকে, রেলের জমি যে হস্তান্তর করা হয়নি, তা মেনে নিয়ে সাঁকরাইল ১-এর ব্লক ভূমি সংস্কার অফিসার কাঞ্চন দে বলেন, ‘‘আমি আসার পরে অনেক জমির মিউটেশন করেছি। জেলা জমি অধিগ্রহণ দফতর থেকে তথ্য আসার পরেই একে একে জমি রেলকে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’’ হাওড়া জেলার ভূমি সংস্কার দফতরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘রেল এত বছর ধরে নিজেরা উদ্যোগী হয়নি, এটাও আশ্চর্যের। ওদেরও তো রাজ্যকে বিষয়টি জানানো উচিত ছিল। এখন ওই সব অধিগৃহীত জমি একে একে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government Land Illegal Construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE