Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বিসর্জনের প্রথমার্ধে পাশ নম্বর দিচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা

দুর্গাপুজো শেষ। পেরিয়ে গিয়েছে দু’টি দিন। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং হাওড়ার বেশ কিছু পুজোর প্রতিমা বিসর্জনও ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে।

সুষ্ঠু: বিসর্জনের পরেই কুমোরটুলি ঘাট থেকে তুলে ফেলা হয়েছে কাঠামো। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সুষ্ঠু: বিসর্জনের পরেই কুমোরটুলি ঘাট থেকে তুলে ফেলা হয়েছে কাঠামো। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৫
Share: Save:

দুর্গাপুজো শেষ। পেরিয়ে গিয়েছে দু’টি দিন। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং হাওড়ার বেশ কিছু পুজোর প্রতিমা বিসর্জনও ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। একাধিক ঘাট ঘুরে দেখা গেল, গঙ্গা দূষণ রোধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশ মেনে গঙ্গা থেকে কাঠামো তুলতে অন্য বারের তুলনায় বেশি তৎপর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাড়ই।

কলকাতায় গণেশ ও বিশ্বকর্মা পুজোর শেষে সব কাঠামো গঙ্গা থেকে তোলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা পুলিশই সে সব তুলেছিল বলে দাবি। তবে দুর্গাপুজোয় এখনও সেই পরিস্থিতি হয়নি। শুক্রবার, দশমীতে বিসর্জন শুরুর কিছু ক্ষণ পরে কলকাতা পুরসভা ক্রেন দিয়ে কাঠামো জল থেকে তুলে নিয়েছে। প্রতিমার সাজও জল থেকে তোলা হয়েছে। সেই কাঠামো লরিতে করে পাঠানো হচ্ছে ধাপায়। শনিবারও তেমনটাই হয়েছে। এ কাজে পুরকর্মীদের সাহায্য করছেন কলকাতা বন্দর ও কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।

এ দিন সকাল থেকে বাজেকদমতলা, বাবুঘাট, নিমতলা, বাগবাজার ঘাট, কুমোরটুলি ঘাট-সহ একাধিক ঘাটের যে চিত্র উঠে এসেছে তাতে পরিবেশবিদদের একাংশের মত, বিসর্জনের ‘হাফ ইয়ার্লি’ পরীক্ষায় পাশ করেছে পুরসভা। গঙ্গা দূষণ রোধে জাতীয় পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশ এর কারণ। পরিবেশবিদদের মতে, মূল পরীক্ষা এখনও বাকি। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘ব্যবস্থা ঠিকই আছে। তবে যত ক্ষণ বিসর্জন না মিটছে কিছু বলা যাবে না।’’

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, পুর এলাকার ঘাটগুলিতে প্রায় এক হাজার কর্মী নিয়োগ হয়েছে। বড় ঘাটে ক্রেন, বার্জ, পে-লোডার ও লরি রয়েছে। এক পুরকর্মী জানান, মঙ্গলবারের পরে কোনও ঘাটে কাঠামো বা খড় থাকবে না। ঘাট সাফাইয়ে ব্যস্ত এক পুর অফিসার জানান, পাড় থেকে কোনও কাঠামোই যাতে ফের জলে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে সেগুলি দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই বিসর্জনের ব্যবস্থা হচ্ছে।’’ কলকাতা বন্দর সূত্রে খবর, বিসর্জন সুষ্ঠু ভাবে শেষ করতে প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা খরচ করছে দফতর। এ দিন বাজেকদমতলা ঘাটে কাঠামো তুলতে গিয়ে একটি ক্রেন ঘাটের ঢাল থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জলে নেমে বিপত্তি ঘটায়। অন্য দু’টি ক্রেন সেটিকে তোলে।

লালবাজার সূত্রে খবর, বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে শহরে প্রায় চার হাজার পুজো হয়। কলকাতা পুলিশ এলাকায় ২৪টি গঙ্গার ঘাট-সহ পুকুর, জলাশয় মিলিয়ে ৭০টি জায়গায় শুক্রবার থেকেই বিসর্জন শুরু হয়েছে। ওই দিন কলকাতা পুলিশ এলাকায় ২,৬৫০টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। গঙ্গায় বিসর্জন হয়েছে প্রায় ১,৮০০টি প্রতিমা। ঘাটের নিরাপত্তার কারণে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ একাধিক জেট-স্কি নিয়ে টহল দিচ্ছে। এ ছাড়াও ঘাটের নজরদারি করছেন উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তারা। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, বাজেকদমতলা ঘাট-সহ বিভিন্ন ঘাটে এ বারই প্রথম পুলিশের তরফে বিসর্জনে ট্রলি দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে।

মানুষের শ্রমের পাশাপাশি হাওড়ার বিসর্জনে এ বছর অনেকটাই সহায়ক হয়েছে গঙ্গা থেকে কাঠামো পরিষ্কারের ‘ট্র্যাশ স্কিমার’ যন্ত্রটি। এই দুইয়ের সমন্বয়ে বিসর্জনের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত ঘাটগুলি অনেকটাই আবর্জনামুক্ত বলে দাবি হাওড়া পুরসভার। এ বছরও জল থেকে কাঠামো তুলতে বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের নিয়োগ করেছিল পুরসভা। ছিল পুরসভার প্রশিক্ষিত বাহিনীও। পুরসভার দাবি, বেসরকারি সংস্থার ৮০ জন কর্মী ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে এই কাজ করছেন। পাশাপাশি পুরসভার ৫০ জন কর্মী সাফাইয়ে নিযুক্ত ছিলেন।

দীর্ঘদিন রামকৃষ্ণপুর ঘাটে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে থাকার পরে দশমী থেকে কাজে নেমেছে ট্র্যাশ স্কিমার। হাওড়ার পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘দশমীতে ছাতুবাবুর ঘাটে এক জনের তলিয়ে যাওয়া ছাড়া বিসর্জন ভাল ভাবেই হয়েছে। দশমীতেই অধিকাংশ বিসর্জন হয়েছে। পুরসভার প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঘাটে দাঁড়িয়ে নিজেরাই কাঠামো তোলার কাজ করেছেন। এ কাজে সাহায্য করছে ট্র্যাশ স্কিমার।’’ তিনি জানান, প্রতিটি ঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়ার ঘাটগুলি ঢালু হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে সব ঘাটে ক্রেন রাখা হয়নি। জঞ্জাল অপসারণ দফতরের এক অফিসার সত্যজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহার করতে দু’টি ক্রেন উত্তর ও দক্ষিণ হাওড়ার দু’টি ঘাটে রাখা হয়েছে। তবে এখনও তা লাগেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Environment Immersion Durga Puja Durga Puja 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE