Advertisement
E-Paper

কলকাতার রাজপথে এ বার সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকায় চলবে ইসকনের রথ! হয়ে গেল ২৪ কিলোমিটারের মহড়াও

এ বছর ইসকনের রথযাত্রার ৫৪তম বর্ষ। প্রতি বছর রথযাত্রার দিন পার্ক সার্কাস থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত চলে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথ। উল্টোরথ উৎসবের দিন পর্যন্ত কলকাতা ময়দানে অস্থায়ী মাসির বাড়িতে থাকেন জগন্নাথ। উল্টোরথের দিন আবার রথে করে তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইসকনের মন্দিরে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২৫ ১৩:০৭
জগন্নাথের রথে সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা লাগানোর শেষ পর্যায়ের কাজে নজর ইসকন কর্তা রাধারমণ দাসের।

জগন্নাথের রথে সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা লাগানোর শেষ পর্যায়ের কাজে নজর ইসকন কর্তা রাধারমণ দাসের। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার রথযাত্রায় ইসকনের রথের ঐতিহ্য বরাবরের। এ বার সেই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে যুদ্ধবিমান সুখোইয়ের নাম। আগামী ২৭ জুন রথযাত্রা। সেই উপলক্ষে ইসকন প্রতি বছরের মতো এ বারও কলকাতায় রথযাত্রা এবং রথের মেলার আয়োজন করেছে। এ বছর সেই উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হতে চলেছে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথের চাকা। এ বছর সুখোই যুদ্ধবিমানের ‘ফোর্থ জেনারেশন’-এর চাকা লাগানো হয়েছে ইসকনের রথে। শনিবার ইসকনের তরফে সেই চাকা লাগানোর পর ২৪ কিলোমিটার রথ চালিয়ে পরীক্ষা মূলকভাবে বিষয়টি দেখে নেওয়ার পর ওই রথগুলিকে এ বার রথযাত্রায় পথে নামানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরীর রীতি মেনে পৃথক তিনটি রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা। তাই কলকাতা ইসকনের রথযাত্রাতেও সে ভাবেই পৃথক তিনটি রথ গড়া হয়েছিল প্রথম থেকে। ৫৪ বছর আগে যখন প্রথম পৃথক তিনটি রথ তৈরি করা হয়েছিল, তাতে বোয়িং-৪৭৪ বিমানের চাকা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ দশকের বেশি সময় পরিষেবা দেওয়ার পর রথের চাকাগুলো পুরনো হয়ে গিয়েছিল। তাতেই প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল নতুন করে রথের চাকা লাগানোর।

যখন রথগুলি তৈরি করা হয়েছিল, তখন তিনটি রথের চাকা তৈরি করেছিল ডানলপ। ২০০৯ সালেই রথের চাকার অবস্থা দেখে যোগাযোগ করা হয় ডানলপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ইসকনের তরফে চিঠি দিয়ে তাঁদের জানানো হয়, বোয়িং-৪৭৪ চাকাগুলি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। তাই সেই চাকাগুলিকে বদল করে দেওয়া হোক। কিন্তু পাল্টা ডানলপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, বোয়িং -৪৭৪ চাকা আর তাঁদের কাছে নেই, আর উৎপাদন বহু দিন তাঁরা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই ইসকনকে এ বিষয়ে বিকল্প বন্দোবস্ত করতে হবে। সেই মতোই খোঁজ শুরু হয় নতুন চাকার। কয়েক বছর আগে এমআরএফ চাকা প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইসকন। লিখিত ভাবে আবেদন জানানো হয়, সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা জগন্নাথের রথে লাগাতে আগ্রহী তারা। এ বিষয়ে এমআরএম কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কাম্য।

ডানলপ কর্তৃপক্ষ পাল্টা চিঠি দিয়ে জানতে চান, সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা কেবলমাত্র ভারতীয় বায়ুসেনা তাঁদের কাছ থেকে কিনে থাকে। এ ক্ষেত্রে কেন সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা চাওয়া হচ্ছে? ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে এই চিঠিটি পাওয়ার পরেই এমআরএফ কর্তৃপক্ষকে ইসকনের রথ দেখতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। চলতি বছর ওই চাকা নির্মাণকারী সংস্থার এক শীর্ষকর্তা ইসকনে এসে জগন্নাথের নন্দীঘোষ, বলরামের তালধ্বজ এবং সুভদ্রার দর্পদলনের পরিস্থিতি দেখে যান। পরে ইসকন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সেই তিন রথে যুদ্ধবিমান সুখোইয়ের ‘ফোর্থ জেনারেশন’-এর অত্যাধুনিক চাকা লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে বলেই জানিয়েছে ইসকন।

ইসকনের তরফে রাধারমণ দাস বলেন, ‘‘আমরা বহু দিন ধরেই জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রার রথের চাকা বদলানোর চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে আমাদের সেই প্রয়াস সফল হওয়ায় আমরা সকলেই খুশি। সুখোই যুদ্ধবিমানের চাকা লাগানোর ফলে রথ চালানো আমাদের পক্ষে আরও মসৃণ হবে। আগামী রথযাত্রার দিনে নতুন চাকা লাগানোর পর প্রথম বার রাস্তায় নামবে ইসকনের রথ। আমাদের এই চাকা লাগাতে এমআরএফ কর্তৃপক্ষ যে সহযোগিতা করেছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’’ এ বছর ইসকনের রথযাত্রার ৫৪ তম বর্ষ। প্রতি বছর রথযাত্রা দিন পার্ক সার্কাস থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত চলে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথ। উল্টোরথ উৎসবের দিন পর্যন্ত কলকাতা ময়দানে অস্থায়ী মাসির বাড়িতে থাকেন জগন্নাথ। উল্টোরথের দিন আবারও রথে করে তাঁদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ইসকনের মন্দিরে। এ বার সেই রথযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হল যুদ্ধবিমানের চাকা।

Rath Yatra ISKON
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy