পার্থপ্রতিম হাজারি ও মোহন গুপ্ত।
মুখোমুখি দু’টো মিছিল। উত্তর কলকাতার মসজিদ বাড়ি স্ট্রিটে। একটিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কর্মী-সমর্থকেরা, অন্য দলটির ঝান্ডার রং আবার নীল-সাদা। ওই দলের নেতারাই জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর দল বলেই ওই রঙের পতাকা বাছা হয়েছে। যদিও তাঁদের মূল প্রতিপক্ষ তৃণমূলই। মিছিলে ঘাসফুল প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জনা চল্লিশের সেই মিছিলের স্লোগান ছিল, ‘এলাকায় ব্যর্থ, কাউন্সিলর পার্থ’।
পার্থ মানে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর-প্রতিনিধি তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ ডাক্তার পার্থপ্রতিম হাজারি। তৃণমূলের ওই প্রার্থীকে বেগ দিতেই সেখানে মরিয়া নীল-সাদা পতাকাবাহী নির্দল প্রার্থী মোহন গুপ্ত।
আপাতদৃষ্টিতে তৃণমূলের নিরাপদ আসন বলেই চিহ্নিত এই ওয়ার্ড। গত ৫ বছর ধরে সব নির্বাচনেই তৃণমূল এগিয়ে থেকেছে ওই ওয়ার্ডে। যিনি কাউন্সিলর ছিলেন তাঁকেই আবার প্রার্থী করেছে দল। তা সত্ত্বেও এই ওয়ার্ড নজর কাড়ছে নির্দল প্রার্থীর মোহন গুপ্ত ওরফে মনার কারণেই।
কে এই মনা?
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলে ছিলেন। এমনকী, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতিও হয়েছেন। এ বার দল তাঁকে প্রার্থী পদে মনোনয়ন না দেওয়ায় বিদ্রোহী হয়েছেন মোহন। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে গিয়ে প্রথম দিকে তৃণমূলের নামও ব্যবহার করেন। যা নিয়ে পার্থবাবু আবার প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছিলেন, ‘‘স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজার অনুগামী মোহন। দলীয় প্রার্থী না হয়েও তৃণমূলের নাম ভাঙিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন।’’ তা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। তাতেই প্রায় নিস্তরঙ্গ একটি ওয়ার্ডের লড়াই জমে ওঠে।
তৃণমূলের ওই ঘরোয়া কোন্দল তাঁদের বাড়তি ‘অ্যাডভান্টেজ’ বলে মনে করে সিপিএম। বিজেপিও বলতে শুরু করে, ডাক্তারবাবু আর মনার লড়াই মানে তৃণমূলের ভোট কাটাকাটি। আখেরে তাদেরই লাভ। পরে অবশ্য দলবিরোধী কাজের জন্য মনাকে বহিষ্কার করে তৃণমূল।
এলাকায় গুঞ্জন, পার্থ বনাম মোহনের দ্বন্দ্বের পিছনে ‘ইন্ধন’ জুগিয়েছেন রাজ্যেরই দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং সাধন পাণ্ডে। মোহনেরও অভিযোগ ছিল, ‘‘সাধনবাবুর কারসাজিতেই এ বার তিনি প্রার্থী হতে পারেননি।’’ তবে মোহনকে বহিষ্কারের পরে সেই বিতর্কে আপাতত ধামাচাপা পড়েছে। আর মোহনের ‘নেত্রী’ বলে যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তিনি অর্থাৎ, স্থানীয় বিধায়ক শশী পাঁজা ইতিমধ্যেই ডাক্তারবাবুর সমর্থনে তিন বার প্রচার করেছেন। বললেন, ‘‘মোহন কোনও ফ্যাক্টর নয়, এখানে তৃণমূলই জিতবে।’’
তবে মোহনকে মদত দেওয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন এখন আর তুলছেন না কেউই। উল্টে পার্থ-মোহন নিয়ে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে সরগরম ওয়ার্ডের দর্জিপাড়া, ছিদাম মুদি লেন, দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের ভোটমঞ্চ।
নির্দল প্রার্থী হলেও শাসক দলের প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন মোহন। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত তেলেভাজা দোকান লক্ষ্মীনারায়ণ সাউ-এর মালিক মোহন গুপ্ত। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেতেই পুরসভার মেয়র পারিষদ করা হয় পার্থবাবুকে। যদিও নিজের জয় সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী পার্থ হাজারি বললেন, ‘‘শহর জুড়ে যে উন্নয়ন হয়েছে, তা পৌঁচেছে এই ওয়ার্ডেও।’’
আর ওয়ার্ডে গিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলে এসেছেন, ‘‘তেলেভাজা যতক্ষণ গরম থাকে, ততক্ষণই খেতে ভাল লাগে। ঠান্ডা হলে কেউ চেয়েও দেখে না।’’ তিনি বুঝিয়ে দিতে চান, তৃণমূল থাকলেই গরম থাকে। নচেৎ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy