Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Crime

‘ভুয়ো রিপোর্ট’ নিয়ে তদন্তে গোয়েন্দা বিভাগ 

আলিপুরের বাসিন্দা ঋষভ অধিকারী নামে এক যুবকের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০২:২৪
Share: Save:

ব্যক্তিগত চেম্বারে বসেই সরকারি হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে করোনা পরীক্ষার ভুয়ো রিপোর্ট লিখে দেওয়ার যে অভিযোগ এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার তদন্ত শুরু করল কলকাতা পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মার নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার নিয়েছেন গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা। এ দিকে, অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরও। ওই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তিনি নিজেই তদন্তভার নিয়ে ওই চিকিৎসককে শো-কজ করেছেন।

আলিপুরের বাসিন্দা ঋষভ অধিকারী নামে এক যুবকের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। জুলাইয়ের শেষ দিকে অমিত বিক্রম নামে আলিপুরেরই এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখাতে যান তিনি। এর পরে কয়েক দফা ইঞ্জেকশন এবং ওষুধে রোগী যখন প্রায় সুস্থ, তখন তাঁকে করোনা পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলা হয়। সেই পরীক্ষা করানোর নামে ৩১০০ টাকা নিয়ে ওই চিকিৎসক নিজেই হাতে লিখে রিপোর্ট দিয়ে দেন বলে অভিযোগ। রিপোর্টটি আবার দেওয়া হয় একটি সরকারি হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের আকারে।

ঋষভ বলেন, ‘‘নমুনা সংগ্রহের কয়েক দিন পরে ওই চিকিৎসক ফোন করে জানান, আমি কোভিড পজ়িটিভ। তবে কোনও লিখিত রিপোর্ট দিতে রাজি হননি তিনি। এর পরে রিপোর্টের জন্য বার বার বলা হলে নিজের চেম্বারে ডেকে একটি সরকারি হাসপাতালের ভুয়ো ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেন ওই চিকিৎসক। তাতে নিজের হাতে লিখে দেন, আমার করোনা নেগেটিভ। কিন্তু প্রথমে কেন পজ়িটিভ বলা হল, এই প্রশ্ন করলে চিকিৎসক বলেন, ভুল বলেছিলাম। আসলে নেগেটিভ।’’ ঋষভ আরও বলেন, ‘‘এতেই শেষ নয়। আমি কোনও হাসপাতালে ভর্তিই হইনি। তবু ওই ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে তিনি লিখে দেন যে, গত ১৯ থেকে ২২ জুলাই আমি হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এ কী রকম রিপোর্ট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হতে হল না, অথচ ৩১০০ টাকায় সব হয়েও গেল, ভাল না?’’

অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে হাওড়া জেলা হাসপাতাল। সেখানকার সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, অমিত বিক্রম নামে ওই অভিযুক্ত চিকিৎসক তাঁদের হাসপাতালের ডিএনবি পিজিটি। এ কাজ তাঁরই কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস এ দিন বলেন, ‘‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ১৯ থেকে ২২ জুলাই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ঋষভ অধিকারী নামে কেউ ভর্তি ছিলেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি ওই ডিসচার্জ সার্টিফিকেট কী করে পেলেন, তা দেখা হচ্ছে। ডিসচার্জ সার্টিফিকেটটি হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকেই বেরিয়েছিল কি না, তা-ও দেখছি। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককেও শো-কজ করা হয়েছে। ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে যে চিকিৎসকের অধীনে রোগী ভর্তি ছিলেন বলে লেখা হয়েছে, সেটিও ভুয়ো।’’ তাঁর দাবি, অভিযোগকারীর সঙ্গেও কথা বলা হবে।

বুধবারই অবশ্য আলিপুর থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসকের চেম্বারে যান লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখার আধিকারিকেরা। ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি চেম্বার থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিও তাঁরা সংগ্রহ করেছেন বলে খবর। অভিযুক্ত চিকিৎসককে শহর ছেড়ে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। এর পরে অভিযোগকারী ঋষভের সঙ্গে দেখা করে কথা বলে ওই ভুয়ো ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের প্রতিলিপিও পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে খবর।

অভিযুক্ত চিকিৎসক অমিত এ দিন বলেন, ‘‘আমি যা করেছি, তা ওই যুবককে বাঁচানোর জন্যই করেছি। ছোট একটা ভুলের জন্য এত বড় ব্যাপার করে দেওয়া হবে ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Coronavirus Doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE