যান্ত্রিক কারসাজির মাধ্যমে শহরে পর পর এটিএম ‘হ্যাক’ করে টাকা লুটের মতোই আরও একটি ঘটনা ঘটেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, পর্ণশ্রী এলাকায়। সেই ঘটনায় মঙ্গলবার গ্রেফতার হল এক যুবক। তার নাম আশফাক খান। উত্তর ২৪ পরগনার রহড়া থেকে গ্রেফতার করা হলেও তার আদি বাড়ি হরিয়ানার মেওয়াটে।
লালবাজার সূত্রের খবর, পর্ণশ্রী থানা এলাকার বীরেন রায় রোডের এই ঘটনার সঙ্গে সম্প্রতি এটিএম হ্যাকের ঘটনার ‘অপারেশনে’ মিল রয়েছে। পুলিশের দাবি, ধৃত যুবক জেরায় স্বীকার করেছে যে, সে একটি দুষ্কৃতী দলের সদস্য। যারা এটিএমে ঢুকে যান্ত্রিক কারসাজির মাধ্যমে টাকা বার করে নেয়। গত মাসে শহরের সাতটি এটিএম থেকে দু’কোটি টাকা লুটের ঘটনাতেও এই যুবক জড়িত কি না, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। পর্ণশ্রীর ওই ঘটনায় আরও এক অভিযুক্ত বেপাত্তা। লালবাজারের আশা, ওই ঘটনার অভিযুক্তেরা ধরা পড়লে শহরে এটিএম-জালিয়াতি রহস্য ভেদ হতে পারে। ধৃত আশফাককে বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল তার পুলিশি হেফাজতের আবেদন করে জানান, ধৃত যুবক এটিএম কারসাজি করে টাকা লুটে জড়িত। অন্য অভিযুক্তকে ধরতে তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। সেই মতো আশফাকের সাত দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।
গত জানুয়ারিতে পর্ণশ্রীর ঘটনাটি ঘটে। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেহালা শাখার ম্যানেজার অভিযোগ করেছিলেন, ৩ জানুয়ারি তাঁদের বীরেন রায় রোডের এটিএমে ঢুকে দুষ্কৃতীরা কারসাজি করে দু’লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে। তদন্তে নেমে পর্ণশ্রী থানা এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দু’জনের উপস্থিতি নজরে আসে পুলিশের। আরও জানা যায়, ব্যাঙ্কের সার্ভারের সঙ্গে এটিএমের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দুষ্কৃতীরা ১৮টি এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ওই টাকা তুলেছে। তদন্তে উঠে আসে, উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ এলাকার বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে সেখানকারই একটি ব্যাঙ্ক থেকে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে এটিএম কার্ডগুলি বানানো হয়েছিল। অ্যাকাউন্টের সঙ্গে থাকা ফোন নম্বরও একই কায়দায় সংগ্ৰহ করা হয়েছে। যার সঙ্গে এটিএমের কার্ড যাঁদের নামে রয়েছে, তাঁদের কোনও সম্পর্ক নেই।
এতেই দুষ্কৃতীদের খুঁজে বার করা মুশকিল হয়ে যায়। কারণ সব তথ্যই ভুয়ো! তবে গ্রাহকের কার্ড ব্যবহার করা হলেও তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা যায়নি। টাকা তোলা হয়েছে সরাসরি এটিএম থেকে। তদন্তকারীরা জানান, এর পরেই ফোনের ‘টাওয়ার ডাম্পিং’ পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়। দেখা যায়, ঘটনার দিন হাজার পনেরো কল হয়েছে ওই এলাকায়। যার মধ্যে ২০টি ফোন নম্বর রহড়া বা খড়দহ এলাকার। এর মধ্যে কয়েকটি ফোন নম্বর হরিয়ানার। তদন্তকারী এক অফিসার জানান, ওই ফোনের সূত্র ধরেই খড়দহ-রহড়া এলাকায় হানা দিয়েও খালি হাতে ফিরতে হয়। তবে জানতে পারা যায়, হরিয়ানার বাসিন্দা কয়েক জন ওখানে থাকে। তাতেই আশফাক-সহ কয়েক জনের নাম উঠে আসে। সিসি ক্যামেরা থেকে পাওয়া ছবি দেখাতেই এলাকার মানুষ তাকে চিনতে পারেন। আশফাক হরিয়ানা থেকে ওই এলাকায় ফিরতেই মঙ্গলবার তাকে পাকড়াও করে পর্ণশ্রী থানার পুলিশ। বাকিরা অবশ্য পলাতক।
ধৃত যুবক জেরায় জানিয়েছে, গত জানুয়ারিতে ওই একই কায়দায় উত্তর ২৪ পরগনার কয়েকটি জায়গায় সে এটিএম লুট করেছে। তার সঙ্গে গত মাসের সাতটি এটিএম লুটের যোগ সরাসরি না থাকলেও তা একই দুষ্কৃতী দলের হতে পারে বলে অনুমান পুলিশের। কারণ, ফরিদাবাদ গ্যাং এই লুট চালিয়েছে বলে সন্দেহ লালবাজারের। আর আশফাকের বাড়ি ফরিদাবাদ সংলগ্ন মেওয়াটে।