— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কখনও বড় ছাড়, কখনও ‘লাকি ড্র’, কখনও আবার ভ্রমণের টিকিট জেতার সুযোগ রয়েছে বলে পথ আটকে দাঁড়ান কেউ না কেউ। জানানো হয়, ইমেল আইডি বললে খুব ভাল হয়। নয়তো নাম, ফোন নম্বর দিলেই হবে। কুপনের একাংশে সে সব লিখে নিয়ে অন্য অংশ ছিঁড়ে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলা হয়, অপেক্ষা করুন। উপহার জিতলেই জানানো হবে ফোনে বা ইমেলে!
কিন্তু সাবধান! বইমেলায় গিয়ে এ ভাবে নাম, ফোন নম্বর জানিয়ে দিয়েই গত বছর প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত বইমেলায় ১২ দিনে বিধাননগর ও কলকাতা পুলিশে এমন প্রতারণা এবং প্রতারণার চেষ্টার অভিযোগ জমা পড়েছে ১৪৭টি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রতারিতেরা নিজের নাম, ফোন নম্বর, ইমেল আইডি-র মধ্যে কোনও না কোনওটা জানিয়ে এসেছিলেন কুপন লেখাতে গিয়ে। কারও ক্ষেত্রে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকাকড়ি, কারও ক্ষেত্রে অজানতেই ঘাড়ে চেপেছে ঋণের বোঝা! এমনও অভিযোগ জমা পড়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়া হয়েছে দিনের পর দিন।
বেহালার বাসিন্দা এক অভিযোগকারিণী বললেন, ‘‘বইমেলায় ঘুরে আসার দিন তিনেক পরে ফোন করে বলা হয়েছে, বইয়ে দারুণ ছাড় রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট কিউআর কোড স্ক্যান করলেই হবে। স্ক্যানের পরে ওটিপি পাওয়া যাবে ফোনে। তা নির্দিষ্ট জায়গায় বসিয়ে দিলেই হবে। পছন্দের কিছু বই অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে ভেবে এগিয়েই বিপদ হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে জানি না, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।’’ নিউ টাউনের বাসিন্দা এক ব্যক্তির আবার অভিযোগ, ‘‘এক দিন একটি ফোন আসে। দেখি, আমার নাম, ফোন নম্বর, আধার ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য ওই ব্যক্তির জানা। লাকি ড্র-তে আমি নাকি পরিবারের তিন জনকে নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ার ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ জিতেছি। এর পরে একটি লিঙ্ক ফোনে নামাতে বলা হয়। তা করতেই চার দফায় মোট ১১ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে।’’ এক দম্পতিকে আবার ফোনে জানানো হয়, ভ্রমণ সংস্থার লটারিতে পুরস্কার জিতেছেন তাঁরা। নির্দিষ্ট ঠিকানায় যেতেই তাঁদের হাতে মাঝারি মাপের একটি উপহারের প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। বলা হয়, এটা নিছকই নিয়মরক্ষা। আসলে তাঁরা পাচ্ছেন বিশেষ বেড়ানোর প্যাকেজ! পাঁচতারা বন্দোবস্ত। আলাদা খরচ লাগবে না। সবই প্যাকেজে। ৭০ হাজার টাকার ওই প্যাকেজ নেওয়ার পর থেকে ভ্রমণ তো দূর, সংস্থার কাউকেই দেখতে পাননি তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে এ বার কলকাতা পুলিশ এবং বিধাননগর কমিশনারেট কড়া পদক্ষেপ করতে চলেছে। লালবাজারের এক গোয়েন্দার দাবি, শপিং মল, বাজার এলাকা বা মেলা চত্বর থেকে জোগাড় করা মানুষের এই সব তথ্যই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জামতাড়া-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রতারকদের কাছে। আদতে দেশ জুড়ে ব্যক্তিগত তথ্য লেনদেনের কারবার চলছে। সংগ্রহ করা ফোন নম্বর তথ্যভান্ডার হিসাবেও বিক্রি হচ্ছে ডার্ক ওয়েবে। টাকা দিতে পারলে মিলছে কারও ইমেল আইডি, আধার বা ভোটার কার্ডের নম্বরও! বিধাননগরের এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এই ভাবে তথ্য সংগ্রহ আটকাতে শুরু থেকেই মেলা প্রাঙ্গণে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। কুপন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এমন লোকজন সম্পর্কে তথ্য লিখে রাখার পরিকল্পনা হয়েছে। কোন সংস্থার হয়ে তাঁরা কাজ করছেন, তা-ও দেখা হবে।’’
সেই সঙ্গেই কলকাতা পুলিশ নাগরিকদের সতর্ক করার লক্ষ্যে সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত স্টিকার তৈরি করেছে বলে খবর। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রতি বছর লিফলেট রাখা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেগুলি হাত মুছে ফেলে দেওয়ার কাজে লাগানো হয়। এ বার স্টিকার ছাপানো হচ্ছে। যাতে সেগুলি বাড়ির আশপাশে কেউ নিয়ে গিয়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন। প্রতিদিন দেখলে সচেতনতা এমনিই তৈরি হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy