E-Paper

মেয়েদের কুকথায় অভিযুক্ত কলেজ শিক্ষক, ‘নির্বিকার’ পুলিশ

রাজদীপের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে হাই কোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কলকাতা ও হাওড়া পুলিশের একাধিক থানা, সাইবার অপরাধ বিভাগে অভিযোগেও কেউ নড়ে বসেনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৭:৪৪
রাজদীপ মাইতি।

রাজদীপ মাইতি। ছবি: সংগৃহীত।

তিনি কলকাতার একটি পরিচিত কলেজের শিক্ষক। রাজ‍্যের শাসক দলের একনিষ্ঠ ঘোষিত সমর্থক এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপারও সদস‍্য। রাজদীপ মাইতি নামে সেই কলেজ শিক্ষকই বাম-শিবির তথা সিপিএমের নেত্রী, সমর্থকদের ধরে ধরে কুৎসিত যৌনগন্ধী ভাষায় আক্রমণ করে থাকেন বলে অভিযোগ।

রাজদীপের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ নিয়ে হাই কোর্ট পর্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কলকাতা ও হাওড়া পুলিশের একাধিক থানা, সাইবার অপরাধ বিভাগে অভিযোগেও কেউ নড়ে বসেনি। ফলে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলের একাংশে প্রশ্ন, তবে কি মনোজিৎ মিশ্রের মতো ধর্ষণের অভিযোগ না উঠলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পুলিশ পদক্ষেপই করবে না?

অভিযোগ, মনোজিতের কুকীর্তি ফাঁস হওয়ার পরেও মেয়েদের উদ্দেশে কুৎসিততম ‘ভাষা-সন্ত্রাসে’ রাজদীপ অকুতোভয়। তাঁর অপভাষার সাম্প্রতিকতম নিশানা হলেন সিপিএমের মীনাক্ষী মুখোপাধ‍্যায় এবং ঐশী ঘোষ। সার্বিক ভাবেই যা মেয়েদের প্রতি চরম বিদ্বেষ, অবমাননার পরিচায়ক বলে অনেকের অভিমত। রাজদীপকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, “কী, খারাপ কথা শুনি!” তার পর থেমে বলেন, “আমার দু’জন অ‍্যাডমিন আছে ফেসবুক প্রোফাইলে। আমি তো সব সময়ে দেখি না।” তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ নিয়ে কিছু জানা নেই বলেও তাঁর দাবি।

সমাজমাধ্যমে রাজদীপের পোস্টে বার বার কলকাতা পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও লালবাজারের তাপ-উত্তাপ চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। অতীতে মনোজিতের ক্ষেত্রেও মেয়েদের সঙ্গে অভব‍্যতার অভিযোগ পুলিশের নজরে আনা হয়েছিল। ফল হয়নি। শাসক দলের অনুগামী কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অধ‍্যাপকদের সংগঠন (ওয়েবকুপা) কসবার আইন কলেজে অস্থায়ী শিক্ষাকর্মী মনোজিতের ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁরা কিছু করছেন না কেন? ওয়েবকুপার সহ-সভাপতি সেলিম বক্স মোল্লা বলেন, “আগেও রাজদীপের ভাষার নিন্দা করেছি। ও (রাজদীপ) সংগঠনের একেবারে সাধারণ সদস‍্য, কোনও পদে নেই। অনলাইনে সদস‍্য হয়েছে। দেখি, নিজেই ওকে সরাসরি বলব।” ওয়েবকুপার শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ কিন্তু ঠারেঠোরে জানাচ্ছেন, পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়াতেই রাজদীপ এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

লালবাজারের তরফেও রাজদীপের বিষয়ে নীরবতার ব‍্যাখ‍্যা মেলেনি। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম নগরপাল রূপেশ কুমারকে ফোন করে বা বার্তা পাঠিয়ে সাড়া মেলেনি। আগে অদ্রিজা রাহা নামে এক গবেষককে রাজদীপের অপভাষা প্রয়োগ ও ছুরি নিয়ে হুমকির ঘটনায় হাই কোর্ট পুলিশকে খোঁজ নিতে বলে। সৃজা মুখোপাধ‍্যায় নামে আর এক জনের অভিজ্ঞতা, পুলিশ কথা শুনেছিল, এই পর্যন্তই! কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ‍্যে লিঙ্গসাম‍্য বোধ বা মেয়েদের মর্যাদার ধারণা নির্মাণে নানা পদক্ষেপ করে ইউজিসি। সেখানে কলেজ স্ট্রিটের সিটি কলেজ অব কমার্স অ‍্যান্ড বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের এই শিক্ষকের আচরণ কলেজের ভাবমূর্তির জন‍্যও ক্ষতিকর বলে অনেকের মত। সমাজমাধ্যমে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আচরণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব‍্যবস্থা নেওয়ার একাধিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিবানী বাগচী বলেন, “ব‍্যক্তিগত ভাবে এমন সব কুকথা বলা হচ্ছে শুনে আমি লজ্জিত, মর্মাহত। কিন্তু এ তো কলেজের বাইরের ঘটনা। আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।” কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক বিবেক গুপ্তকে ফোন করলে তাঁর সঙ্গীরা জানান, তিনি ব‍্যস্ত।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

webcupa Kolkata Police

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy