Advertisement
E-Paper

Nilanjana Chatterjee: সাহসিকতার নজির গড়া মামলায় এখনও হয়নি চার্জ গঠন

নীলাঞ্জনা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যেতেই গাড়িটির চালক দরজা খুলে তরুণীকে ধাক্কা মেরে বাইরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৮:৪৯
লড়াকু: গত বছর সেরে ওঠার দিনগুলিতে নীলাঞ্জনা। ফাইল চিত্র

লড়াকু: গত বছর সেরে ওঠার দিনগুলিতে নীলাঞ্জনা। ফাইল চিত্র

আনন্দপুরে তরুণীকে বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়া মহিলাকে গাড়ি চাপা দিয়ে পিষে মারার চেষ্টার ঘটনায় বছর ঘুরতে চলল। তবে সেই ঘটনায় এখনও চার্জ গঠন হল না। পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত জামিন পেয়েছে। নিগৃহীতার সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। তদন্তকারী অফিসার থেকে সরকারি আইনজীবী, কেউই জানেন না মামলাটি কী অবস্থায় রয়েছে। অথচ এই মামলারই দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিগৃহীতাকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় নামে ওই মহিলার সাহসিকতার প্রশংসা করে তাঁর চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভারও গ্রহণ করেছিল সরকার। নীলাঞ্জনা রবিবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু এত লড়াইয়ের ফল কী হল? বছর ঘুরতে চললেও বিচার তো পাওয়া গেল না।” তাঁর স্বামীর মন্তব্য, “এর পরে এমন ঘটনায় লোকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাবেন তো?”

গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে আনন্দপুরের আর আর প্লট সংলগ্ন এক আবাসনের কাছে একটি গাড়ির ভিতর থেকে এক তরুণীর চিৎকার শুনতে পান নীলাঞ্জনা ও তাঁর স্বামী দীপ শতপথী। নীলাঞ্জনা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যেতেই গাড়িটির চালক দরজা খুলে তরুণীকে ধাক্কা মেরে বাইরে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। তত ক্ষণে নেমে এসেছিলেন দীপও। নীলাঞ্জনা তরুণীকে ধরে তুলতে গেলে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে চালক। তখনই গাড়িটি ধাক্কা মারে নীলাঞ্জনাকে। তিনি ছিটকে পড়লে তাঁর পায়ের উপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেয় অভিযুক্ত। দীপ জানান, তরুণীর পোশাক ছেঁড়া ছিল। মুখ থেকে রক্ত ঝরছিল। সারা শরীরে মারধরের ছাপ ছিল স্পষ্ট। হাসপাতালে চিকিৎসকেরা জানান, বাঁ পায়ের শিন বোন (হাঁটু ও গোড়ালির মধ্যের সামনের হাড়) টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে নীলাঞ্জনার।

পুলিশ তিন দিন হন্যে হয়ে খুঁজেও ধরতে পারছিল না অভিযুক্ত অভিষেককুমার পাণ্ডেকে। তদন্তে জানা যায়, তরুণী নিজেই পুলিশের গতিবিধি জানাচ্ছিলেন অভিযুক্তকে। কারণ, অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা রয়েছে। নিজেদের ফ্ল্যাট কেনা নিয়ে তাঁদের বিবাদের শুরু। রাস্তাতেই ঝগড়ার মধ্যে তরুণী গাড়ি থেকে নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। অভিযুক্ত বাধা দিলে তরুণী হাতে কামড়ে দেন। রাগে অভিযুক্ত তরুণীর মাথা ঠুকে দেন ড্যাশবোর্ডে। তাতেই রক্তারক্তি কাণ্ড। পুলিশ তরুণীকে নিগ্রহের পাশাপাশি নীলাঞ্জনাকে খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করে। তরুণী অবশ্য আদালতে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানান। ৩৩ দিনের মাথায় আলিপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। চার্জশিটে তরুণীরও নাম রাখা হয়। কিন্তু তার পরে আর কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। তরুণীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, “মামলা নিয়ে কিছু বলব না।” তরুণীর বাবা বলেন, “ওই ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের কথা চলছে।’’

দীপের দাবি, “গত কালীপুজোর পরে যখন অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যায়, আমরা জানতেও পারিনি। তরুণী অভিযোগ তুলে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন, তাই নিগ্রহের মামলা আর চলছে না। এখন মামলা চলছে নীলাঞ্জনাকে পিষে মারার চেষ্টার। পুলিশের বড় কর্তারা বলেছিলেন, মামলা সম্পর্কে সব জানানো হবে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। নীলাঞ্জনার সাহসিকতা নিয়ে যে এত কথা হল, তার এই পরিণতি?”

তিন বার অস্ত্রোপচারে পায়ে ঢোকানো হয়েছে রড, স্ক্রু। তবু নীলাঞ্জনা দ্রুত ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনে। নিজেই জানালেন, এখন অনেকটাই স্বাভাবিক তাঁর হাঁটাচলা। নীলাঞ্জনা বললেন, “আমি সব সময়ে আশাবাদী। নিশ্চয় দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হবে। এক বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আর একটা অনুরোধ, মামলাটার যেন দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। বহু মানুষের মনোবল জড়িত এই মামলার সঙ্গে।” সোমবারই কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মার সঙ্গে কথা বলেন নীলাঞ্জনারা। তিনি আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই যাতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়, তা দেখা হবে। সংশ্লিষ্ট সরকারি আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে।

Anandapur Molestation Crime against Women
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy