E-Paper

ইন্টারভিউয়ে নাম নেই, ফের পথে নামার বার্তা অপেক্ষমাণদের

অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছর ধরে এসএসসি-র দুর্নীতি নিয়ে সব চেয়ে বেশি সরব ছিলেন তাঁরাই। ১৩০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ-অবস্থান করেছেন। তাঁদের সেই আন্দোলন ঘিরে এক সময়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:২৩

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

এসএসসি-র ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে— এই অভিযোগ করে প্রতিবাদে মস্তক মুণ্ডন করিয়েছিলেন এক মহিলা চাকরিপ্রার্থী, রাসমণি পাত্র। তাঁর মাথা মোড়ানো নিয়ে সে সময়ে সংবাদমাধ্যমে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। তিনি ছিলেন ২০১৬ সালের প্যানেলে অপেক্ষমাণদের তালিকায়। সেই রাসমণি বুধবার জানাচ্ছেন, একাদশ-দ্বাদশে শিক্ষকতার জন্য চলতি বছরে তিনি ফের এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইন্টারভিউয়ের তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি। তাই তিনিও এখন চাকরিহারা।

শুধু রাসমণি নন, তাঁর মতো ২০১৬ সালের প্যানেলের নবম থেকে দ্বাদশের অপেক্ষমাণ প্রায় ৪৫০০ জন চাকরিপ্রার্থী জানাচ্ছেন, একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ তালিকায় তাঁদের বেশির ভাগেরই নাম ওঠেনি। তাই তাঁরাই সব থেকে বেশি বঞ্চিত হলেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। তাঁদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের এসএসসি-তে দুর্নীতি হয়েছিল বলেই তাঁরা চূড়ান্ত প্যানেলে আসতে পারেননি। অপেক্ষমাণদের তালিকায় চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের অধিকাংশের এখন চাকরি পাওয়ার বয়সের ঊর্ধ্বসীমাও পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে, তাঁরাই সব দিক থেকে বঞ্চিত। এসএসসি-র নতুন চাকরিপ্রার্থীদের মতো তাঁদেরও দাবি, অভিজ্ঞদের ১০ নম্বর দেওয়া যাবে না। এ জন্য তাঁরা ফের আন্দোলনে নামতে পারেন।

ওই অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, গত পাঁচ বছর ধরে এসএসসি-র দুর্নীতি নিয়ে সব চেয়ে বেশি সরব ছিলেন তাঁরাই। ১৩০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে বিক্ষোভ-অবস্থান করেছেন। তাঁদের সেই আন্দোলন ঘিরে এক সময়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। অভিষেক সেন নামে এক অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীর মতে, তাঁরাই প্রথম ২০১৬ সালের এসএসসি-দুর্নীতি নিয়ে মামলা করেন। ২০১৬-র প্যানেলে ‘র‌্যাঙ্ক জাম্প’ নিয়ে প্রথম মামলা হয়। গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তাঁদের লাগাতার আন্দোলনের জেরে সরকার নানা প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। তাঁদের নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত শূন্য পদ তৈরি করার কথাও বলেছিল সরকার। তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিকাশ ভবনে কয়েক দফা আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষা দফতরের বড় বড় কর্তারা, এমনকি, কুণাল ঘোষও। তাঁদের দাবি নিয়ে আলোচনায় ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে বসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ‘‘আমরা অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীরাই প্রথম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলাম যে, ২০১৬ সালের এসএসসি-তে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও একাদশ-দ্বাদশের ফল বেরোনোর পরে দেখা যাচ্ছে, আমরাই সব দিক থেকে বঞ্চিত। আমরা ১০ নম্বরের সুবিধাও পেলাম না, আবার চাকরি পাওয়ার বয়সও চলে গিয়েছে।’’— বলছেন অভিষেক।

রাসমণি বলেন, ‘‘যে দিন গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আমাদের ১০০০ দিন পূর্ণ হল, সে দিন এসএসসি-র দুর্নীতির প্রতিবাদে আমি মাথা মুড়িয়ে বার্তা দিয়েছিলাম যে, দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে আমার প্রিয় চুল ফেলে দিতেও দ্বিধা করলাম না। আমাদের ১০০০ দিনের পূর্তিতে মঞ্চে এসেছিলেন শাসকদল এবং বিরোধী দলের নেতারা। কিন্তু আজ তাঁরা কেউই আমাদের পাশে নেই। আমাদের সেই নতুনদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হল। অথচ, নতুনদের মতো আমাদের চাকরির বয়স নেই। আমি আজ মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত।’’ তিনি আরও জানান, তাঁর বিষয় শিক্ষাতত্ত্ব (এডুকেশন)। কিন্তু অভিজ্ঞদের জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বরের সঙ্গে পেরে না ওঠায় একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি। রাসমণি বলেন, ‘‘শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বোধহয় আর পূর্ণ হল না। কিন্তু এর জন্য আমরা দায়ী নই। এসএসসি-র দুর্নীতিকে যাঁরা সামনে আনলেন, আজ তাঁরাই সব থেকে বেশি উপেক্ষিত।’’

যদিও শিক্ষা দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এসএসসি হয়েছে আদালতের নির্দেশে। যে বিধি ঠিক করা হয়েছিল, সেই অনুসারেই নতুন এসএসসি হয়েছে। পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়াও সেই নিয়ম মেনেই হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC SSC Recruitment Case

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy