Advertisement
১১ মে ২০২৪
KMC

KMC: কেউ কথা শোনে না! আট বছরে একই নির্দেশ চার বার

শহরের অনেক জায়গাতেই নতুন আবাসন, বহুতল, বাড়ি তৈরি হচ্ছে। অথচ নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার তথ্য ঠিক সময়ে রাজস্ব দফতরে পৌঁছচ্ছে না।

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২২ ০৬:৪৭
Share: Save:

আট বছরও তা হলে যথেষ্ট সময় নয় দুই দফতরের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার জন্য? এমনকি, একই নির্দেশ চার বার দেওয়ার পরেও?—এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে। যার মূলে রয়েছে পুর কর্তৃপক্ষের এক সাম্প্রতিক নির্দেশ। যেখানে পুর রাজস্ব ও বিল্ডিং দফতরের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার কথা বলেছেন তাঁরা।

পুর কর্তৃপক্ষ বলেছেন, বিল্ডিং দফতর শহরের যে কোনও আবাসন বা বিল্ডিংয়ের নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণের শংসাপত্র (কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি) দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা জানাবে রাজস্ব দফতরকে। যাতে রাজস্ব দফতর অবিলম্বে সেই নতুন সম্পত্তি থেকে কর আদায় করতে পারে।

কারণ দেখা যাচ্ছে, শহরের অনেক জায়গাতেই নতুন আবাসন, বহুতল, বাড়ি তৈরি হচ্ছে। অথচ নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার তথ্য ঠিক সময়ে রাজস্ব দফতরে পৌঁছচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, রাজস্ব এবং বিল্ডিং দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। যে কারণে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে সম্পত্তিকর আদায়ে।

যদিও কলকাতা পুরসভার নথি জানাচ্ছে, এমন নির্দেশ এই প্রথম নয়। রাজস্ব আদায় বাড়াতে আট বছর আগেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও একাধিক বার পুর বিল্ডিং এবং রাজস্ব দফতরকে পারস্পরিক তথ্যের আদানপ্রদান করতে বলা হয়েছে। তবে সেই আদানপ্রদান সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে শুধু কাগজে-কলমে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আট বছরে দুই দফতরের মধ্যে যে সমন্বয় গড়ে ওঠেনি, তা যে এ বার গড়ে উঠবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?

পুর নথি জানাচ্ছে, ২০১৪ সালের অগস্টে দফতরের আধিকারিকদের উদ্দেশে জারি করা এক অন্তর্বর্তী নির্দেশিকায় (বিল্ডিং দফতর বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৬) বিল্ডিং দফতর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব দফতরের চিফ ম্যানেজারকে ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেটাই প্রথম নয়। তার পরে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে (পুর কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৪৪) ও নভেম্বরে (পুর কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৮৬), ফের ২০২১ সালের ডিসেম্বরে (পুর কমিশনারের বিজ্ঞপ্তি নম্বর-৪৪) ওই একই নির্দেশ দেওয়া হয়। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘এত কিছুর পরেও বিল্ডিং ও রাজস্ব দফতরের মধ্যে তথ্যের আদানপ্রদানে ঘাটতি থাকছে। তাই ফের একই নির্দেশ দিতে হচ্ছে।’’

পুর প্রশাসনের একাংশ জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রেই শহরের কোনও বিল্ডিং ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ পাওয়া সত্ত্বেও তা পুর করের আওতায় আসেনি। কারণ, রাজস্ব বিভাগ তা জানেই না। এ দিকে, পুর কোষাগারের অবস্থা ভাল নয়। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘২০১৭ সালের পরে শহরের সমস্ত আবাসন, বহুতল বা বাড়ির ক্ষেত্রে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখার কথা বলা হয়েছে। কারণ অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনায় ধরা পড়েছে, অনেক আবাসন বা বহুতলেরই সম্পত্তিকর আপডেটেড নেই।’’

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, এর পাশাপাশি শহরে মূল্যায়ন না হয়ে পড়ে থাকা (আনঅ্যাসেসড) সম্পত্তির দ্রুত মূল্যায়ন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহৃত কোনও সম্পত্তির ট্রেড লাইসেন্স অনুযায়ী কর বকেয়া রয়েছে না আপডেটেড রয়েছে, সেই তথ্য যাচাইয়ের জন্য পুর লাইসেন্স দফতরকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুর কোষাগারের অবস্থা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা, পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

কিন্তু এক দফতরের সঙ্গে অন্য দফতরের সমন্বয় গড়ে না উঠলে হাজারো পরিকল্পনা করলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কি?—প্রশ্ন পুর প্রশাসনের একাংশের। এক পুরকর্তার আক্ষেপ, ‘‘পুরসভার কোনও দফতর অন্য কোনও দফতরের কথা শোনে না। শুনলে বার বার একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করতে হয় না। রাজস্বেরও ক্ষতি হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE