Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
KMC

KMC: বাণিজ্যিক কাজে বসতবাড়ি, ব্যবস্থা নিতে চলেছে কলকাতা পুরসভা

শহরের বহু বসতবাড়িতে যে দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই বাণিজ্যিক কাজকর্ম চলছে, সে কথা মানছেন দমকলের আধিকারিকেরাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ০৬:০৮
Share: Save:

শহর কলকাতায় বাণিজ্যিক কাজে অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে অসংখ্য বসতবাড়ি। এর ফলে পুরসভা বা দমকলের ছাড়পত্র না থাকায় এক দিকে বিপদের আশঙ্কা যেমন থাকছে, অন্য দিকে আবার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ।

বাণিজ্যিক কাজে বসতবাড়িকে ব্যবহারের ঘটনা যে শহর জুড়েই ঘটে চলেছে, পুর অধিবেশনে সম্প্রতি সেই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। এর পরে তাঁরই প্রস্তাব অনুযায়ী পুরসভার কর ও রাজস্ব বিভাগকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম নির্দেশ দিয়েছেন, ওয়ার্ডভিত্তিক পরিদর্শন চালিয়ে করখেলাপিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

গত শুক্রবার পুরসভার মাসিক অধিবেশনে বিশ্বরূপ বলেছিলেন, ‘‘কলকাতা পুরসভার অধীনে এমন অনেক বসতবাড়ি রয়েছে, যেগুলি পুরোপুরি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ, ওই সমস্ত বাড়ির মালিকেরা সেই বাবদ কর দিচ্ছেন না পুরসভাকে।’’

বিশ্বরূপ আরও জানান, পুরসভার কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই বেআইনি ভাবে বসতবাড়িতে ব্যবসা করছেন অনেকে। ওই সমস্ত ব্যবসায়ীর কাছে দমকলের ছাড়পত্র বা পরিবেশ দফতরের শংসাপত্র, কিছুই নেই। এর ফলে পুরসভা প্রাপ্য কর থেকে বঞ্চিত তো হচ্ছেই, পাশাপাশি ওই সমস্ত বাড়িতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। কাউন্সিলর তাঁর প্রস্তাবে বলেন, ‘‘অবিলম্বে কলকাতাপুরসভার কর ও রাজস্ব বিভাগকে দিয়ে ওই সমস্ত বসতবাড়ি পরিদর্শন করানো হোক এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হোক।’’ প্রসঙ্গত, বড়বাজার, জোড়াবাগান থেকে শুরু করে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে এ ভাবেই চলছে অসংখ্য অবৈধ ব্যবসা।

কাউন্সিলরের প্রস্তাব মতো ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখতে বলেছেন মেয়র। পুরসভা সূত্রের খবর, সারা শহরে বসতবাড়িকে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করার ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। পুরসভার কর ও রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কলকাতা পুর এলাকায় বসতবাড়িকে ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের অভিযোগ পেলে পুরসভা ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু পুরসভার লোকবলের এতটাই অভাব যে, ১৪৪টি ওয়ার্ড ধরে ধরে পরিদর্শন করার মতো কর্মী নেই।’’ পুরসভার লাইসেন্স বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে লাইসেন্স দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়া অনলাইনে হয়ে যাওয়ায় কোন বসতবাড়িকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ না এলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রায় অসম্ভব বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে লাইসেন্স বিভাগে কর্মীরও অভাব। তাই ওয়ার্ড ধরে ধরে পরিদর্শন কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

শহরের বহু বসতবাড়িতে যে দমকলের ছাড়পত্র ছাড়াই বাণিজ্যিক কাজকর্ম চলছে, সে কথা মানছেন দমকলের আধিকারিকেরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগুন নেভানোর কাজের জন্যই পর্যাপ্ত কর্মী পাওয়া যায় না। তার উপরে আবার ওই বাড়িগুলির দমকলের লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রায় অসম্ভব।

বর্তমানে পুরসভা আর্থিক দিক থেকে খুবই রুগ্‌ণ। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন দেওয়া হচ্ছে অনিয়মিত ভাবে। এই পরিস্থিতিতে করখেলাপি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে পুরসভার রাজস্ব আদায় বাড়বে বলেই মনে করছেন পদস্থ আধিকারিকেরা। কর ফাঁকি দেওয়া ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে এলাকার কাউন্সিলরদেরও সাহায্য নিতে চায় পুরসভা। গত শুক্রবার বিশ্বরূপের অভিযোগ পাওয়ার পরেই ওয়ার্ডভিত্তিক ভাবে বসতবাড়িগুলিতে পরিদর্শনে জোর দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE