দেশে প্রথম বিধবাবিবাহের সাক্ষী, কলকাতার ৪৮-এ কৈলাস বোস স্ট্রিটের বাড়িটি এ বার ‘ঐতিহ্যশালী’ তকমা পেতে চলেছে। কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে বাড়িটিকে ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কারণ, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় এই বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের প্রথম বিধবাবিবাহ। বিদ্যাসাগরের লড়াইয়ের ফসল হিসাবে ব্রিটিশশাসিত ভারতে ১৮৫৬ সালের ২৬ জুলাই পাশ হয় বিধবা বিবাহ আইন। সেই বছরেরই ৭ ডিসেম্বর কলকাতার ৪৮-এ কৈলাস বোস স্ট্রিটের বাড়িতে প্রথম বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিদ্যাসাগর নিজে উপস্থিত থেকে এক বিধবা তরুণীর বিয়ে সম্পন্ন করেন। স্থানীয়দের দাবি এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক পত্রপত্রিকা অনুযায়ী, সেই সময় বাড়িটির ঠিকানা ছিল ১২ সুকেশ স্ট্রিট, যা পরবর্তী কালে হয় ৪৮ এবং ৪৮-এ কৈলাস বোস স্ট্রিট।
আরও পড়ুন:
প্রায় পৌনে দুশো বছরের প্রাচীন সেই বাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে আছে গর্বিত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মিত হলেও ভবনের অধিকাংশই পরিত্যক্ত। বসবাস করেন না কেউ। বাড়িটির বর্তমান মালিক থাকেন শহরের বাইরে। এক জন পরিচারিকা, এক পুরোহিত এবং এক বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন দেখভালের দায়িত্বে। সম্প্রতি বাড়িটির কথা জানতে পারেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হেরিটেজ) স্বপন সমাদ্দার। বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে তিনিই কলকাতার এই ঐতিহ্যকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, শহরের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে এই বাড়িটি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘ঐতিহ্যশালী বাড়ি’র তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে ভবিষ্যতে এই বাড়ির সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যাবে। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এমন একটি ঐতিহ্যশালী এবং ঐতিহাসিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত বাড়ি যে কলকাতা শহরে রয়েছে তা পুরসভা কর্তৃপক্ষের জানাই ছিল না। মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার যখন বিষয়টি নিয়ে পুরসভার আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, তখনই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে। আমরা দ্রুততার সঙ্গে বাড়িটিকে ঐতিহ্যশালী তকমা দিতে উদ্যোগী হয়েছি।’’ দ্রুততার সঙ্গে কলকাতার এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষিত করাই লক্ষ্য পুরসভার।