Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হাজিরা নিয়ে পরিদর্শনের পুর-দাওয়াই

সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কর্মী-আধিকারিকেরা কখন ঢুকছেন, কখনই বা বেরোচ্ছেন, তা দেখার জন্য কন্ট্রোলিং অফিসার বা অফিসার-ইন-চার্জেরা আচমকা পরিদর্শন চালাবেন বিভিন্ন দফতরে।

নির্দেশিকার প্রতিলিপি।

নির্দেশিকার প্রতিলিপি।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

সদর দফতর-সহ কলকাতা পুরসভার সমস্ত অফিসে কর্মীদের ঠিক সময়ে ঢোকা ও বেরোনো সুনিশ্চিত করতে এক সময়ে পরীক্ষামূলক ভাবে বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই সেই উদ্যোগে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ, বায়োমেট্রিক যন্ত্রে বালি ঘষে দিয়েছিল কেউ বা কারা! তার পরেও অবশ্য চেষ্টা করা হয়েছিল। ঠিক সময়ে না ঢুকলে কাজের অনুমতি না দেওয়া বা ছুটি কেটে নেওয়া, এমন অনেক নিদান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও পুরসভার কর্মী ও আধিকারিকদের নিয়মে বাঁধা যায়নি। এ বার ফের ঘ়ড়ির কাঁটা ধরে কর্মী-আধিকারিকদের অফিসে ঢোকা ও বেরোনোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে ‘মরিয়া’ চেষ্টা করছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি একটি নির্দেশিকা জারি করে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কর্মী-আধিকারিকেরা কখন ঢুকছেন, কখনই বা বেরোচ্ছেন, তা দেখার জন্য কন্ট্রোলিং অফিসার বা অফিসার-ইন-চার্জেরা আচমকা পরিদর্শন চালাবেন বিভিন্ন দফতরে। শুধু পাঁচ নম্বর এস এন ব্যানার্জি রোডের সদর দফতরই নয়, পুরসভার যত অফিস রয়েছে, সর্বত্রই মাসে অন্তত এক বার ওই আচমকা পরিদর্শন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সময়ানুবর্তিতাকে যাতে মান্য করা হয়, তার জন্য অনিয়মিত হাজিরা বা হাজিরার ক্ষেত্রে গয়ংগচ্ছ সংস্কৃতির খোলনলচেই পাল্টে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।

যদিও পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, হাজিরা নিয়ে ‘কড়াকড়ি’র বিষয়টি শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন এক বার শুরু করেছিল পুরসভা। কিন্তু তাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। কয়েক দিন কড়াকড়ির পরেই ফের ‘যখন খুশি আসি-যাই’ সংস্কৃতি ফিরে এসেছিল। যাঁরা নিয়ম মেনে হাজিরা দেন, তাঁরা প্রবল প্রতিবাদও করেছিলেন হাজিরার গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়ে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে এ বারও কড়াকড়ি হলে কতটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অফিসে ঢোকা-বেরোনোর ‘অনিয়ম’ বহুদিন ধরেই পুরসভায় রয়েছে। যা আটকাতে ২০০৬-’০৭ নাগাদ ১০ নম্বর বরো অফিসের একাংশে ‘বায়োমেট্রিক যন্ত্র’ বসানো হয়েছিল। কিন্তু তার কিছু দিনের মধ্যেই ওই যন্ত্রের সেন্সর-এ বালি ঘষে দেওয়া হয়। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘২০০৮-’০৯ সাল নাগাদও আর এক দফায় বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর চেষ্টা করা হয়েছিল। যন্ত্রও আনা হয়েছিল। কিন্তু নীতিগত ভাবে সিদ্ধান্ত না নেওয়ার জন্য তা চালু হয়নি।’’

শুধু কি তা-ই! ২০১৩-’১৪ সালে হাজিরা নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, অফিসে ঢোকার নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ মিনিট পর্যন্ত ‘গ্রেস পিরিয়ড’ থাকবে। তার পরে কেউ অফিসে ঢুকলে তাঁর হাজিরা ‘লেট’ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর আধ ঘণ্টা পরে কেউ অফিসে ঢুকলে তাঁকে ‘অ্যাবসেন্ট’ ধরা হবে। তাঁকে কাজে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন, তা হলে ওই বিলম্বকে ‘হাফ ডে ক্যাজুয়াল লিভ’ হিসেবে ধরে সংশ্লিষ্ট কর্মীকে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন। পরপর তিন দিন দেরিতে ঢুকলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর ছুটির হিসেব থেকে একটি ‘ক্যাজুয়াল লিভ’ কাটা হবে। অন্য সরকারি হাজিরার ক্ষেত্রে যেমনটা নিয়ম, এ ক্ষেত্রেও তেমন নিয়মেরই উল্লেখ করা হয়েছিল। ধারাবাহিক ভাবে অনিয়মিত হাজিরার ক্ষেত্রে বা অফিসে দেরিতে আসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের (‘ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন’) কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই পর্যন্তই!

তাই নতুন জারি হওয়া নির্দেশিকায় পুরনো সমস্ত নিয়ম (২০১৩-’১৪ সালের নির্দেশিকার নিয়ম) মানার পাশাপাশি এক ধাপ এগিয়ে আচমকা পরিদর্শনের কথা বলা হয়েছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘হাজিরার অনিয়ম আটকাতে বহুদিন ধরেই চেষ্টা হচ্ছে। কিছুই তো করা যাচ্ছে না। দেখা যাক, এ বার কী হয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Attendance Biometric KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE