মুখ্যমন্ত্রীও তার সরাতে বলেছিলেন

কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় কেব্‌ল স‌ংযোগের তার যে ভাবে ঝুলে থাকে, তা ঘোরতর অপছন্দ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। শহরকে তারের জঙ্গল থেকে মুক্ত করার নির্দেশ তিনি আগেই দিয়েছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, মাস আটেক আগে মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের পরেই পুর ভবনে ‘মাল্টিপল সিস্টেম অপারেটর’ (এমএসও) সংস্থাগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরে এ বিষয়ে কাজ এগোয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, পুর প্রশাসন মমতার ওই নির্দেশ পালন করল না কেন? তা হলে তো পার্ক সার্কাসের চার নম্বর সেতুতে মোটরবাইক-আরোহী এক যুবককে তারের জটে আটকে মরতে হত না। এ বিষয়ে মেয়রের বক্তব্য মেলেনি। তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের জবাব দেননি।

বৃহস্পতিবার ফের মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ওই কাজ করতে বলেছেন পুরসভা এবং নগরোন্নয়ন দফতরকে। কার্যত সেই চাপেই শহর থেকে তারের কুণ্ডলী সরাতে জরুরি পদক্ষেপ করতে চায় পুর প্রশাসন। শীঘ্রই এ ব্যাপারে পুর ভবনে আবার বৈঠক করা হবে। একই সঙ্গে রাজ্যের প্রতিটি পুর বোর্ডের কাছেও নির্দেশ যাচ্ছে, মাটির উপরে কেব্‌ল টিভি সংযোগের তার রাখা যাবে না। শুক্রবার রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, কলকাতা-সহ যে সব শহরে ফুটপাথ রয়েছে, সেখানে ফুটপাথের নীচ দিয়ে ওই তার নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আর অন্যত্র মাটির নীচ দিয়ে তা পাঠানো হবে। প্রতিটি পুরসভাকে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করতে বলা হচ্ছে।

কিন্তু ভূগর্ভে তার নেওয়ার খরচও তো প্রচুর। তা দেবে কে? পুরমন্ত্রী জানান, দু’-তিনটি পদ্ধতির কথা ভাবা হয়েছে। এক, কেব্‌ল অপারেটরেরা নিজেদের খরচে তা করতে পারেন। সংশ্লিষ্ট পুরসভা জায়গা দেখিয়ে দেবে। আলাদা করে ভাড়া দিতে হবে না। দুই, পুরসভা পিপিপি মডেলে কারও সহায়তা নিয়ে তা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেব্‌ল সংস্থাকে তার ভাড়া দিতে হবে। তিন, পুরসভা নিজেও করে দিতে পারে। প্রয়োজনে নগরোন্নয়ন দফতরও পুরসভাকে আর্থিক সহায়তা দেবে। সে ক্ষেত্রে কেব্‌ল অপারেটরদের কাছ থেকে সরকার বা পুরসভা নির্ধারিত হারে ভাড়া নেবে।

পদ্ধতি যা-ই হোক, প্রকাশ্যে তার ঝোলানোর দিন শেষ করতে চায় নগরোন্নয়ন দফতর। পুরমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিউ টাউন তো করে দেখিয়েছে। তা হলে অন্যত্র হবে না কেন?’’ কলকাতা পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, নতুন সংযোগ দেওয়ার সময়ে অনেক অপারেটরই পুরনো তার সরান না। তাই শহর জুড়ে তারের কুণ্ডলী ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তিনি জানান, পার্ক সার্কাসে ওই দুর্ঘটনার পরে পুর ভবন লাগোয়া চৌরঙ্গি প্লেস, এস এন ব্যানার্জি রোডের একাধিক জায়গায় রাস্তায় কেব্‌ল সংযোগের তার পড়ে থাকার ছবি দেখানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তা-ও হুঁশ ফেরেনি পুরসভার সংশ্লিষ্ট কারও।