Advertisement
E-Paper

লন্ডন-নিউ ইয়র্কের পথে কলকাতা, শহরের বড় রাস্তায় নতুন বিজ্ঞাপনী ব্যবস্থা, পুরসভার আয় বাড়বে তিন গুণ!

শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞাপন নীতি চালুর লক্ষ্যে কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই এলাকায় কেবলমাত্র নতুন ধাঁচের ‘সিঙ্গল-পোল হোর্ডিং’ বা ইউনিপোল ব্যবস্থাই অনুমোদিত হবে।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৫৫
KMC to introduce new hoarding advertising system on premium streets in hoarding reform plan

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কলকাতার বড় রাস্তাগুলিতে আসছে পরিবর্তন। পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি ও ক্যামাক স্ট্রিটে আর থাকছে না প্রচলিত বিলবোর্ড এবং হোর্ডিং। শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও আধুনিক বিজ্ঞাপন নীতি চালুর লক্ষ্যে কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই এলাকায় কেবলমাত্র নতুন ধাঁচের ‘সিঙ্গল-পোল হোর্ডিং’ বা ইউনিপোল ব্যবস্থাই অনুমোদিত হবে। ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন শহরে এই ধরনের বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং দেখতে পাওয়া যায়।

পুরসভার বিজ্ঞাপন নীতি ২০২৫ অনুযায়ী, তিনটি ব্যস্ত রাস্তা থেকে সমস্ত গৃহ, ভবন ও ফুটপাথ সংলগ্ন হোর্ডিং সরিয়ে ফেলা হবে। বিজ্ঞাপনের অধিকার পেতে হলে বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে ই-নিলামের মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। ইতিমধ্যেই এই ই-নিলাম প্রক্রিয়া চালু করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম দীর্ঘদিন ধরেই পুরসভার আধিকারিকদের নয়া বিজ্ঞাপন হোর্ডিং নীতি চালু করার পক্ষে জোর দিয়ে আসছিলেন। কলকাতা পুরসভার সূত্রে খবর, বছর তিনেকে প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত নতুন হোর্ডিং বিজ্ঞাপন নীতি কার্যকর হতে চলেছে কলকাতায়।

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও হোর্ডিং নিয়ন্ত্রণ

পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, এত দিন পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি ও ক্যামাক স্ট্রিটে প্রায় ২৩,০০০ বর্গফুট বিজ্ঞাপন স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হত। নতুন নিয়মে সেই পরিমাণ কমিয়ে ১৮,০০০ বর্গফুটে আনা হচ্ছে। ফলে প্রায় ৫,০০০ বর্গফুট বিজ্ঞাপনী জায়গা কমানো হবে, যা শহরের ঐতিহ্যবাহী এলাকার সৌন্দর্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে। এ ছাড়া কলকাতা পুরসভার আশা, এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে বছরে প্রায় ১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আসবে। বর্তমানে বিজ্ঞাপন বাবদ আয় হচ্ছে মাত্র ৫ কোটি টাকার কাছাকাছি। অর্থাৎ, নতুন নীতিতে আয় তিনগুণেরও বেশি বাড়তে চলেছে।

আধুনিক নকশা ও নিরাপত্তা নজরদারি

এ বার থেকে রাস্তায় তির্যক ভাবে বসানো কিংবা ফুটপাথ দখল করে দাঁড়ানো হোর্ডিং থাকবে না। পরিবর্তে সিঙ্গল-পোল হোর্ডিং বসানো হবে, যা উঁচু একটি খুঁটির উপর ভর করে দাঁড়াবে। এই ধরনের ইউনিপোল কাঠামোয় বিজ্ঞাপন সরাসরি গাড়ির উইন্ডশিল্ডের সামনে দৃশ্যমান হবে, ফলে যাত্রী বা চালককে আর আলাদা করে ঘাড় ঘোরাতে হবে না। পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ট্রাফিক সুরক্ষা ও দৃশ্যবিভ্রম এড়ানো এই পরিকল্পনার অন্যতম লক্ষ্য। হোর্ডিং বসানোর সময় শহরের নান্দনিকতা, নিরাপত্তা এবং চলাচলের সুবিধাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।

নতুন নিলাম পদ্ধতি ও সময়সীমা

নতুন বিজ্ঞাপন অধিকারের জন্য ই-নিলাম শুরু হওয়ার আগে একটি প্রি-বিড মিটিং আয়োজন করবে পুরসভা। এর মাধ্যমে আগ্রহী সংস্থাগুলি শর্তাবলি বুঝে নিতে পারবে। বিজ্ঞাপন অধিকারের ই-নিলাম শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে এবং আগামী ২১ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য রক্ষার উদ্যোগ

শহরের হৃদয়ে অবস্থিত এই তিনটি রাস্তা শুধু ব্যবসা ও বিনোদনের কেন্দ্রই নয়, কলকাতার ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যেরও প্রতীক। রেস্তরাঁ, পাব, অফিস এবং দর্শনীয় স্থানে ঘেরা পার্ক স্ট্রিট ও তার আশপাশের এলাকা দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র। তাই এই এলাকায় বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, “আমরা চাই শহরের কেন্দ্রস্থল যেন আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়। হোর্ডিং থেকে যেমন রাজস্ব বাড়বে, তেমনই শহরের ঐতিহ্য ও রূপও অক্ষুণ্ণ থাকবে।”

শহরবাসীর একাংশ মনে করছেন, এই উদ্যোগ সফল হলে কলকাতার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

Hoardings KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy