Advertisement
E-Paper

এ বারও পুজোয় রাতভর চলবে মেট্রো, নতুন পরিস্থিতিতে ভিড়ের চাপ সামলানো যাবে তো! কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ?

পঞ্চমী থেকেই মেট্রোর সূচি পরিবর্তন হচ্ছে। দশমী পর্যন্ত পরিবর্তিত সূচিতে চলবে মেট্রো। পুজোর সময় গভীর রাত কিংবা ভোর পর্যন্তও পরিষেবা পাওয়া যাবে। পুজোর দিনগুলিতে ক’টি মেট্রো চলবে, কখন থেকে পরিষেবা শুরু হবে, শেষ মেট্রো কখন? সবটাই জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:২৫
Kolkata metro service revised for durga pujo

পুজোয় বিশেষ পরিষেবা দেবেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। — ফাইল চিত্র।

দুর্গাপুজোয় কলকাতায় উপচে পড়ে ভিড়। কলকাতাবাসী তো বটেই প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখতে দূরদূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীরা আসেন। তবে ঠাকুর দেখতে এলেও বাড়ি ফেরার চিন্তা থাকে। সেই চিন্তা দূর করতে গত কয়েক বছর ধরেই পুজোর ক’টা দিন রাতভর মেট্রো চালান কর্তৃপক্ষ। এ বারও তার ব্যত্যয় হয়নি। কোন লাইনে কখন থেকে কখন অবধি পরিষেবা পাওয়া যাবে, তা জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও প্রশ্ন থাকছে পরিষেবা নিয়ে! নতুন পরিস্থিতিতে পুজোর ভিড় সামলে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন তো মেট্রো কর্তৃপক্ষ?

শনি ও রবিবার বাদ দিলে গত মাসখানেক ধরেই মেট্রো পরিষেবা প্রশ্নের মুখে। বিশেষত, কলকাতা মেট্রোর ‘আদিম’ লাইনের (দক্ষিণেশ্বর-শহিদ ক্ষুদিরাম) পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। কখনও যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনও আবার বিদ্যুৎ সংযোগের সমস্যা— নানা কারণে প্রায় দিনই ব্লু লাইনের পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মেট্রোয় ভিড় যত বেড়েছে, ততই পরিষেবা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে, এমন দাবি তুলেছেন যাত্রীরা। এ ছাড়াও ডিসপ্লে বোর্ডের সমস্যা, নিরাপত্তার ঘাটতি— এমন নানা ‘উপসর্গ’ তো রয়েইছে! প্রশ্ন, পুজোর সময়ে সমস্যা মিটিয়ে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে পারবেন কর্তৃপক্ষ?

কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পিলারে ফাটল দেখা যাওয়ার পর থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। ফাটল দেখতে পাওয়ার পরেই মেট্রোর উত্তর-দক্ষিণ শাখার প্রান্তিক স্টেশন কবি সুভাষ বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। শহিদ ক্ষুদিরামকে ওই লাইনের প্রান্তিক স্টেশন ধরে পরিষেবা শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু শহিদ ক্ষুদিরামে প্রান্তিক স্টেশনের সুবিধা না-থাকায় পরিষেবা ব্যাহত হয়। অনিয়মিত হয়ে পড়ে পরিষেবা। দিনের ব্যস্ত সময় হোক বা অন্য সময়— কখনই সময়ে মেট্রো না-পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। পরিষেবা নিয়ে নিত্যযাত্রীদের ভূরি ভূরি অভিযোগ। যাত্রীদের দাবি, চারদিকে সম্প্রসারণ করে মেট্রোপথ ঢেলে সাজছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পর থেকেই কলকাতা মেট্রোর সবচেয়ে পুরনো পথে দুর্ভোগের ছবি প্রকট হয়েছে।

গত ২২ জুলাই কলকাতায় এসে মেট্রোপথের তিন সম্প্রসারণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসপ্ল্যানেড এবং শিয়ালদহের মধ্যে মেট্রোপথ জুড়ে যাওয়ায় সহজেই হাওড়া ময়দান থেকে পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ (গ্রিন লাইন)। এ ছাড়া নোয়াপাড়া এবং বিমানবন্দরের মধ্যে নতুন মেট্রোপথের (ইয়েলো লাইন) সূচনাও হয়। আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (রুবি) থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত মেট্রোপথের সম্প্রসারণের উদ্বোধন করেন মোদী। যাত্রীদের দাবি, কলকাতা শহরকে ধীরে ধীরে মেট্রোজালের মধ্যে ঘিরে ফেলতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ। তবে পরিষেবা নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই তাঁদের। পুজোর সময়েও সেই পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিষেবা নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। চাপ সামলানোর মতো সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় পুজোর সময় বেশি পরিষেবা চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পঞ্চমীতে ব্লু লাইনে আপ-ডাউন মিলিয়ে ২৬২টি পরিষেবা চলবে। আর ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আপ ডাউন মিলিয়ে ২৪৬টি পরিষেবা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গ্রিন লাইনে পঞ্চমীতে ২২৫টি, ষষ্ঠীতে ১৮২টি এবং সপ্তমী থেকে দশমী ১৯২টি পরিষেবা চলবে। অন্য দিকে, ইয়েলো এবং পার্পল লাইনে অপেক্ষাকৃত কম মেট্রো চালাবেন তাঁরা। পুজোর সময় ভিড় সামাল দিতেই রেকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে প্রস্তুত। আমাদের কাছে দক্ষ কর্মী রয়েছেন। সব রকম পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন তাঁরা।’’

হাতেগোনা আর দু’-তিন দিন। তার পরেই বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গাপুজো। আর পুজো মানেই কলকাতার প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা। আট থেকে আশি— প্রায় সকলেই ঠাকুর দেখার ভিড়ে পা মেলান বা মেলাতে চান। তবে রাতে বাড়ি ফেরা বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ঠাকুর দেখতে যাতে সমস্যায় না পড়েন সাধারণ মানুষ, তার জন্য সপ্তমী থেকে নবমীর ভোর পর্যন্ত মিলবে মেট্রো। ষষ্ঠী এবং দশমীতে মেট্রো পাওয়া যাবে মাঝরাত পর্যন্ত। শুধু গ্রিন লাইন (দক্ষিণেশ্বর-শহিদ ক্ষুদিরাম) নয়, কলকাতা শহর জুড়ে বিছিয়ে থাকা অন্য লাইনগুলিতেও পুজোয় মেট্রো পরিষেবার সূচিতে বদল করলেন কর্তৃপক্ষ।

ব্লু লাইন (দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম)

পঞ্চমী থেকেই মেট্রোর সূচি পরিবর্তন হচ্ছে। দশমী পর্যন্ত পরিবর্তিত সূচিতে চলবে মেট্রো। পুজোর সময় গভীর রাত পর্যন্ত পরিষেবা পাওয়া যাবে। পঞ্চমী সকালে ৮টায় দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে মিলবে প্রথম মেট্রো। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম এবং শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বরগামী শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে রাত ১০টা ৪৮ মিনিট এবং ১০টা ৫১ মিনিটে। তবে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দমদমগামী শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে রাত ১১টায়। ষষ্ঠীতেও একই সূচিতে চলবে মেট্রো।

সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে সকাল থেকে মেট্রো না-চললেও শেষ পরিষেবা পাওয়া যাবে ভোর পর্যন্ত। এই তিন দিন দুপুর ১টা থেকে দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে মেট্রো ছাড়বে। আর দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম এবং শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বরগামী শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে রাত ৩টে ৪৮ এবং ৩টে ৪৭ মিনিটে। তবে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দমদমগামী শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে ভোর ৪টেয়। দশমীতেও দুপুর ১টা থেকে দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে ছাড়বে প্রথম মেট্রো। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরামগামী শেষ মেট্রো মিলবে রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে আর উল্টো পথে শহিদ ক্ষুদিরাম থেকে দক্ষিণেশ্বর এবং দমদমগামী শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে রাত ৯টা ৫০ এবং রাত ১১টায়।

গ্রিন লাইন (হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ)

পঞ্চমীতে মেট্রোর এই শাখায় সেক্টর ফাইভগামী প্রথম ট্রেন হাওড়া ময়দান থেকে পাওয়া যাবে সকাল সাড়ে ৭টায়। আর শেষ মেট্রো মিলবে রাত ১১টায়। অন্য দিকে, হাওড়া ময়দানগামী প্রথম মেট্রো সেক্টর ফাইভ থেকে পাওয়া যাবে সকাল ৭টা ৪৪ মিনিটে। তবে শেষ মেট্রো সেক্টর ফাইভ থেকে ছাড়বে রাত ১১টা ১৬ মিনিটে। ষষ্ঠীতে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ— দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে প্রথম মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে সকাল ৯টা এবং ৯টা ০২ মিনিটে। শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে রাত ১১টা ২০ মিনিট এবং ১১টা ২৮ মিনিটে।

সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ— দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে প্রথম মেট্রো ছাড়বে যথাক্রমে দুপুর দেড়টা এবং ১টা ৩৪ মিনিটে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে শেষ মেট্রো মিলবে যথাক্রমে পরের দিন ভোর ৪টে ০৬ মিনিট এবং ৪টে ১৮ মিনিটে। আর দশমীতে হাওড়া ময়দান থেকে শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে রাত সাড়ে ১১টা এবং সেক্টর ফাইভ থেকে রাত ১১টা ৩২ মিনিটে।

ইয়েলো লাইন (নোয়াপাড়া থেকে বিমানবন্দর)

পঞ্চমী এবং ষষ্ঠীতে নোয়াপাড়া থেকে প্রথম মেট্রো ছাড়বে দুপুর ৩টেয়। আর বিমানবন্দর থেকে পাওয়া যাবে দুপুর ৩টে ২৫ মিনিটে। নোয়াপাড়া এবং বিমানবন্দর- দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে শেষ মেট্রো মিলবে যথাক্রমে রাত ১০টা ১৫ মিনিট এবং ১০টা ৩৫ মিনিটে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমীতে প্রথম মেট্রো ছাড়ার সূচিতে কোনও বদল নেই। তবে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে নোয়াপাড়া এবং বিমানবন্দর- দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকেই শেষ মেট্রো পাওয়া যাবে যথাক্রমে রাত সাড়ে ১০টা এবং রাত ১০টা ৫০ মিনিটে। আর দশমীতে দুই প্রান্তিক স্টেশন থেকে শেষ মেট্রো মিলবে যথাক্রমে রাত ৯টা এবং ৯টা ২০ মিনিটে।

পার্পল লাইন (জোকা থেকে মাঝেরহাট)

মেট্রোর এই লাইনে পঞ্চমী থেকে দশমী একই সূচিতে পরিষেবা মিলবে। জোকা থেকে মাঝেরহাটগামী প্রথম মেট্রো পাওয়া যাবে দুপুর ৩টেয়। এবং শেষ মেট্রো মিলবে রাত সাড়ে ১০টায়। মাঝেরহাট থেকে জোকাগামী প্রথম মেট্রো মিলবে দুপুর ৩টে ২৫ মিনিটে। আর শেষ মেট্রো মাঝারহাট থেকে ছাড়বে রাত ১০টা ৫৫ মিনিটে। পুজোর ক’দিন অরেঞ্জ লাইনে (কবি সুভাষ থেকে বেলেঘাটা) কোনও পরিষেবা থাকবে না।

পুজোয় সূচি বদল করে উৎসবপ্রেমীদের মন পাওয়ার চেষ্টা কি সফল হবে? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে! রাতভর পরিষেবা দিয়েও পুজোর ভিড় সামলাতে পারবেন তো? সময় মেনে চলবে তো, না কি ফের যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্য সমস্যা সামলাতে হিমশিম খেতে হবে কর্তৃপক্ষকে?

Kolkata Metro Metro Services Durga Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy