Advertisement
E-Paper

ভাগাড়ের বর্জ্য থেকেও এ বার হবে জৈব গ্যাস

কেএমডিএ সূত্রের খবর, ওই ভাগাড়ের বর্জ্য থেকে বায়ো-মিথেন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হবে। তৈরি করা হবে তরল বর্জ্য-শোধন কেন্দ্রও।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৬

বিমানবন্দর থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ধরে ডানকুনির দিকে যেতে গিয়ে ধোঁয়ার দাপটে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা। সৌজন্য প্রমোদনগরের ভাগাড়! পরিবেশবিদেরা বলছেন, ভাগা়ড়ের বর্জ্যে আগুন লেগেই দিনরাত গলগল করে ধোঁয়া বেরোয়। ক্রমাগত জঞ্জাল ফেলতে থাকায় পাহাড়ের চেহারা নিয়েছে বর্জ্যের স্তূপ। এই বিপদ সামলাতে এ বার মাঠে নেমেছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)।

কেএমডিএ সূত্রের খবর, ওই ভাগাড়ের বর্জ্য থেকে বায়ো-মিথেন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন করা হবে। তৈরি করা হবে তরল বর্জ্য-শোধন কেন্দ্রও। প্রমোদনগর ভাগাড়ের দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। সম্প্রতি সেই মামলায় কেএমডিএ-র আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতেও এই সব পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ভাগা়ড়ে ছ’টি পুরসভার জঞ্জাল ফেলা হয়। ফলে কোনও একটি পুরসভার পক্ষে দূষণ রোখা সম্ভব নয়। তাই আমরাই দায়িত্ব নিয়েছি।’’

কেএমডিএ-র একটি সূত্র জানাচ্ছে, তরল বর্জ্য-শোধন কেন্দ্রে দৈনিক ৩০ কিলোলিটার বর্জ্য শোধন করা যাবে। দু’টি বায়ো-মিথেন গ্যাস তৈরির কেন্দ্র হচ্ছে। বর্জ্য পৃথকীকরণের পরে তার একাংশ দিয়ে জ্বালানির কাজ করা হবে। এ ভাবেই ঠেকানো যাবে ভাগাড়ের দূষণ। এ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে কেএমডিএ। ওই ভাগাড়ের অবস্থা যে সামাল দেওয়া একান্ত প্রয়োজন, তা মেনে নিয়েছেন পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র। তিনি বলেন, ‘‘ছ’টি পুরসভার জঞ্জাল ফেলা হয় ওখানে। ক্রমশ জায়গা কমছে। জঞ্জালের পাহাড়ে যে ভাবে চিল-সহ নানা পাখি ওড়ে, তাতে ভবিষ্যতে বিমানবন্দরের পক্ষেও বিপজ্জনক হতে
পারে।’’ বস্তুত, ধাপার পরে শহর এলাকায় এত বড় ভাগাড় কমই আছে।

তবে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অনেক নিখুঁত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন পরিবেশ-বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। তাঁর মতে, ভাগাড়ে বৈদ্যুতিন বর্জ্য-সহ নানা ধাতব জিনিস থাকে। সেগুলি পৃথক না করে চুল্লিতে ঢোকালে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হবে। তাতে বিপদ আরও বা়ড়তে পারে। ফলে এই ধরনের বর্জ্যের বিপদ সামলাতেও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা উচিত। পাশাপাশি ওই ভাগা়ড়ে যে ধরনের বর্জ্য রয়েছে তাতে কতটা শক্তি তৈরি করা যাবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একাংশেরও।

এক বিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘প্লাস্টিকের মতো জ্বালানি থেকে বেশি শক্তি তৈরি হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভাগাড় থেকে প্লাস্টিক ও বোতল নিয়ে যায় জঞ্জাল কুড়ানিরা। জৈব বর্জ্য থেকে গ্যাস বা সার তৈরি হলেও বিদ্যুৎ খুব বেশি তৈরি হয় না। ফলে যা ছাই তৈরি হবে, তার তুলনায় লাভ তেমন হবে না। এ বিষয়টি কেএমডিএ-কে মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।’’ ব্যারাকপুরে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একটি ভাগাড়ে সার হিসেবে পুনর্ব্যবহার করছে রান্নাঘরের বর্জ্য। এ সব ক্ষেত্রে জৈব বর্জ্য খুব কার্যকর। কেউ কেউ অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন, এমন প্রকল্প হাওড়া-সহ একাধিক জায়গায় ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু কাজ এগোয়নি।

কেএমডিএ সূত্রের খবর, কী ভাবে প্রকল্প করলে লাভজনক হবে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়া-সহ দেশের যেখানে যেখানে এমন প্রকল্প রয়েছে, সেগুলিও দেখে এসেছেন কর্তারা। এ রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। ‘‘আদালতে হলফনামা দিয়ে দরপত্র আহ্বানের কথা জানানো হয়েছে। ফলে কাজ শুধু ঘোষণাতেই থেমে থাকবে না, এটা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি,’’ মন্তব্য কেএমডিএ-র এক কর্তার।

BIO Gas Garbage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy