Advertisement
E-Paper

ব্যাকফুটে মাংস, রান তুলছে ডিম আর নিরামিষ

কলকাতায় ফুটপাথের খাবারে এত দিন আমিষের যে আধিপত্য ছিল, ভাগাড়-আতঙ্কের জেরে তাতে থাবা বসিয়েছে নিরামিষ। এখনও অফিসপাড়ায় লাইন দিয়ে বেঞ্চে বসে অনেকেই চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছেন।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৪২
রেস্তরাঁয় নিয়ে যাওয়া এই পচা মাংসের সূত্রেই নিউ টাউনের খামারে হানা দেয় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

রেস্তরাঁয় নিয়ে যাওয়া এই পচা মাংসের সূত্রেই নিউ টাউনের খামারে হানা দেয় পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

এক দল বলছেন, যতই ভাগাড়ের মাংস নিয়ে বিতর্ক হোক, এখনও তাঁরা ভরসা রাখছেন বিরিয়ানির চিকেন বা মাটনে। ভরসা রাখছেন চিকেন স্টু-তেও। কারও কারও আবার নিরামিষ মুখে না রুচলেও গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে বিরিয়ানির বদলে হাত বাড়িয়েছেন খিচুড়ি বা ভেজ মোমোর দিকে। আর আমিষের ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী অবশ্যই এগ রোলের।

কলকাতায় ফুটপাথের খাবারে এত দিন আমিষের যে আধিপত্য ছিল, ভাগাড়-আতঙ্কের জেরে তাতে থাবা বসিয়েছে নিরামিষ। এখনও অফিসপাড়ায় লাইন দিয়ে বেঞ্চে বসে অনেকেই চিকেন বিরিয়ানি খাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের মনেও দানা বেঁধেছে সন্দেহ, চিকেন ভেবে চিকেনই খাচ্ছি তো?

যেমন, মহাকরণের পিছনে লায়ন্স রেঞ্জের এক দোকানে এত দিন নিশ্চিন্তে তিরিশ টাকার বিরিয়ানি খেয়ে গিয়েছেন রোহিতকুমার সিংহ। শুক্রবার দুপুরে সেই চিকেন বিরিয়ানির লেগ পিস খেতে গিয়েই দ্বিধায় পড়ে গেলেন তিনি। বিরিয়ানির চিকেন ভাগাড়ের মাংস নয় তো? দোকানি সঞ্জয় পাত্র তাঁকে আশ্বাস দেন, ‘‘জ্যান্ত চিকেন টেরিটিবাজার থেকে কেনা হয়েছে। ফ্রিজে জমানো বাসি মাংস নয়। আপনি নিশ্চিতে খান।’’ তবু নিশ্চিন্ত হতে পারলেন না রোহিত। বললেন, ‘‘সব কিছু জানার পরে এখন আর নিশ্চিন্তে বিরিয়ানি খাই কী করে? ভাবছি, কাল থেকে এগ রোল খাব। অথবা ভেজ মোমো।’’

রোহিতের মতো দ্বিধায় অনেকেই। আর সেই দ্বিধা থেকেই শহরের পথখাবারে চিকেনের বিভিন্ন পদের সঙ্গেই পাল্লা দিচ্ছে নিরামিষের হরেক পদ। যেমন, ফেয়ারলি প্লেসের সামনে খিচুড়ির দোকানি জানালেন, গত কয়েক দিন ধরে মাত্র ২৫ টাকা প্লেটের নিরামিষ খিচুড়ি এত বিক্রি হচ্ছে যে, দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর খিচুড়িও যে কোনও দিন চিকেন-মাটনের সঙ্গে পাল্লা দেবে, তা ভাবতে পারেননি ওই দোকানি। চিলি চিকেন বিক্রেতা সালাউদ্দিন যেমন বললেন, ‘‘এত দিন পাঁচ কেজি বোনলেস চিকেন কিনতাম বাজার থেকে। এখন দু’ থেকে আড়াই কিলো চিকেন কিনছি।’’

শুধু ডালহৌসির অফিসপাড়াই নয়, ডেকার্স লেন, গড়িয়াহাট বা শিয়ালদহ— সর্বত্রই কিন্তু গত কয়েক দিনে ব্যাকফুটে আমিষ। পাল্লা অনেক বেশি ভারী নিরামিষের। লড়াইয়ে আমিষকে টিকিয়ে রেখেছে শুধু এগ রোল। গড়িয়াহাটের এক এগরোলের দোকানদার বললেন, ‘‘আমাদের বাঁধা খদ্দেররা চিকেন বা মাটনের উপরে ভরসা রেখেছেন ঠিকই, কিন্তু যাঁরা নিয়মিত খদ্দের নন, তাঁদের বেশির ভাগই কিন্তু অর্ডার দিচ্ছেন এগ রোল বা পনির রোল। এগ রোলের এত ভাল বাজার, বহু দিনের মধ্যে আসেনি।’’

ডিমের যে কোনও পদ, বিশেষ করে এগ রোলের বাজার যে গত কয়েক দিন খুব ভাল, তা স্বীকার করে নিয়েছেন ডেকার্স লেনের দোকানিরাও। এক দোকানি বললেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে লক্ষ করে দেখছি যে, অনেক ভেবেচিন্তে খদ্দেররা অর্ডার দিচ্ছেন নিরামিষ স্টু অথবা অন্য কোনও নিরামিষ খাবার। খাবার অর্ডার দেওয়ার আগে এত ভাবনাচিন্তা করতে আগে দেখিনি।’’

তবে, ফুটপাতের দোকানগুলিতে মাংসে এমন বৈরাগ্য দেখা গেলেও বড় রেস্তরাঁর মালিকেরা কিন্তু দাবি করেছেন, মাংস বিক্রিতে কোনও ভাটা পড়েনি। চাঁদনি চক এলাকার এক নামী রেস্তরাঁর ফ্লোর ম্যানেজার অরূপ রায় বললেন, ‘‘মানুষ একশো শতাংশ বিশ্বাস নিয়েই আমাদের মাংসের পদ খাচ্ছেন।’’ যদিও এ দিনই বিমানবন্দর এলাকার একটি রেস্তরাঁয় সরবরাহ করার মুখে ধরা পড়েছে খামার থেকে আসা মুরগির পচা মাংস।

meat business egg vegetables
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy