বিভ্রাট: একই সঙ্গে রয়ে গিয়েছে যাত্রী প্রতীক্ষালয় এবং বাস না থামার বোর্ড।
গোলমেলে ব্যাপার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে! যার জেরে বিশ্ববঙ্গ সরণিতে নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশনের প্রস্তাবিত নামের ধাঁধা মেলাতে পারছে না জিপিএস প্রযুক্তি। আবার চিংড়িঘাটায় যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের সামনে বাস থামবে কি না, তা নিয়েও সমান বিপাকে যাত্রীরা।
যানজট এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে ইএম বাইপাসের পাশাপাশি, বিশ্ববঙ্গ সরণি পছন্দ শহরবাসীর। সেই দুই পথই এখন ভুলভুলাইয়া। যেমন, চিংড়িঘাটা-শান্তিনগর যাত্রী প্রতীক্ষালয়। তার সামনে ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি, পাশে হাসিমুখে বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু। বড় বড় হরফে লেখা, মুখ্যমন্ত্রীর ‘অনুপ্রেরণা’য় যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে প্রতীক্ষালয়টি তৈরি হয়েছে। কিন্তু সুসজ্জিত সেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের গায়ে কলকাতা পুলিশের সাইনবোর্ড ‘এখানে বাস থামিবে না’। বিভ্রান্তির সূত্রপাত সেখানেই।
সম্প্রতি গড়িয়ার বাস ধরার জন্য স্বামী আব্দুল গাজির সঙ্গে ওই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে দাঁড়িয়েছিলেন সাবিনা বিবি। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরে পুলিশের সাইনবোর্ডে চোখে পড়তে স্বামীর উদ্দেশে সাবিনা বলেন, ‘‘বাস দাঁড়াবে না লেখা আছে। তবুও এখানে গাড়ি ধরার জন্য দাঁড়িয়ে আছো?’’ আব্দুল পাল্টা বলেন, ‘‘ও সব বোর্ড দেখে লাভ নেই।’’ বিভ্রান্ত ওই যাত্রীদের কথোপকথন শুনে এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘যাত্রী প্রতীক্ষালয়কে বাতিল না করে বাস না থামার ফরমানে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন।’’
কলকাতা পুলিশ সূত্রের জানা গিয়েছে, চিংড়িঘাটা-শান্তিনগরের ওই অংশের রাস্তা আয়তনে অনেকটাই ছোট। তাই এই জায়গার বদলে ক্যাপ্টেন ভেড়ির কাছে প্রতীক্ষালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাইনবোর্ডটিও লাগানো হয়েছে সেই কারণেই। তবে পুরনো যাত্রী প্রতীক্ষালয় যে বাতিল, সেকথা বলছেন না ট্র্যাফিক পুলিশের আধিকারিকেরা। যার প্রেক্ষিতে এক নিত্যযাত্রীর মন্তব্য, ‘‘পরিবর্তিত প্রতীক্ষালয় এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। সেটি যে প্রতীক্ষালয়, তা দেখে বোঝার উপায় নেই। পুরনো প্রতীক্ষালয় বাতিল না হলে সাইনবোর্ড দেওয়ার অর্থ কী!’’
নবাবপুর মোড়ে প্রস্তাবিত কনভেনশন সেন্টার মেট্রো স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
নাম-বিভ্রাট বিশ্ববঙ্গ সরণিতেও। নিউ গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো প্রকল্পের বেশ কিছু স্টেশন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প এলাকা ঘিরে থাকা আরভিএনএলের (রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড) সাইনবোর্ডে সেই স্টেশনের প্রস্তাবিত নাম লেখা রয়েছে। নিউ টাউন বাসস্ট্যান্ডের কাছে যে স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে, প্রকল্পের মানচিত্রে তার নাম বিধানননগর স্টেশন। অথচ ওই জায়গার প্রায় এক কিলোমিটার আগেই বিধাননগর পুরনিগমের সীমানা শেষ হয়ে গিয়েছে! ইকো পার্কের দু’নম্বর গেট সংলগ্ন স্টেশনের নাম নিউ টাউন মেট্রো স্টেশন। এনকেডিএ (নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) এলাকায় নির্মীয়মাণ স্টেশনের নাম কেন বিধাননগর, তা-ও বোধগম্য হচ্ছে না শহরবাসীর। একই নাম-সমস্যা নবাবপুর মোড়ের নির্মীয়মাণ স্টেশনেও, যার নাম রাখা হয়েছে কনভেনশন সেন্টার। অথচ প্রস্তাবিত মেট্রো স্টেশন থেকে কনভেনশন সেন্টারের দূরত্ব প্রায় আড়াই কিলোমিটার! কনভেনশন সেন্টারের কাছে, হিডকো ভবনের উল্টো দিকে অবশ্য একটি মেট্রো স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। সেই স্টেশনের নাম সিবিডি (সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট)। সিবিডি এবং নিউ টাউন মেট্রো স্টেশনের মধ্যবর্তী স্টেশনের নাম কলাক্ষেত্র। আরও একটু দূরে সুপরিচিত শপিং মল সংলগ্ন স্টেশনের নাম দেওয়া হয়েছে তিতুমীরের নামে!
নিউটাউনের একটি আবাসন কমিটির সম্পাদক বলেন, ‘‘সত্যিই বিভ্রান্তিকর। ভৌগোলিক অবস্থান মেনে স্টেশনের নামকরণ হওয়াই কাম্য। আশা করি, প্রস্তাবের গলদ শুধরে নেওয়া হবে।’’ আরভিএনএলের এক শীর্ষ কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রকল্পের পরিকল্পনা করতে যাতে সুবিধা হয়, সে জন্য কিছু নাম দেওয়া হয়েছে। কোনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত নামকরণের আগে বিতর্ক, আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’’ হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘একেবারে গোড়ার দিকে ওই নামগুলি দেওয়া হয়েছিল। যেখানে সংশোধন প্রয়োজন, তা করে সরকারি ভাবে পরিবর্তিত নামের তালিকা মেট্রো কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy