Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Calcutta News

দিনেদুপুরে খুন যুবক, ফের সেই ট্যাংরায়

ট্যাংরা থানা এলাকার ডি সি দে রোডের বস্তির ঘুপচি ঘরে স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা ও এক পুত্রকে নিয়ে সংসার পেশায় রিকশাচালক ইস্তিকারের।

ইস্তিকার হোসেন।

ইস্তিকার হোসেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০২:৩৫
Share: Save:

আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ফের খুন ট্যাংরায়। মৃতের নাম ইস্তিকার হোসেন (৩৪)। তাঁর বা়ড়ি ট্যাংরার ডি সি দে রোেড। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত অভিষেক ঢালিকে গ্রেফতার করেছে শিয়ালদহ রেলপুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সকালে ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে রেলপাড়ের পাশে নেশা করছিল ৫-৬ জন যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, ডি সি দে রোডের বাসিন্দা ইস্তিকার দিন কয়েক আগে স্থানীয় বাসিন্দা অভিষেককে তিনশো টাকা ধার দিয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, টাকা ফিরিয়ে দিতে এ দিন রেলপাড়ে নেশার আসরে ইস্তিকার অভিষেককে চাপ দেন। অভিষেক ওই টাকা দিতে নারাজ হওয়ায় উভয়ের মধ্যে উত্তপ্ত কথা বিনিময় হয়। অভিযোগ, কথা কাটাকাটির ফাঁকে নিজের প্যান্টের পকেট থেকে একটি ধারালো ছুরি বার করে ইস্তিকারের বুকের বাঁ দিকে কোপ মারে অভিষেক। ইস্তিকারের কব্জিও কেটে দেওয়া হয়। রেললাইনের পাশে রক্তে ভেসে যায় ইস্তিকারের জামাকাপড়। এর পরেই ঘটনাস্থলে থাকা যুবকেরা অভিষেককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ওই যুবকেরাই ইস্তিকারকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রায়ই অভিষেক, ইস্তিকার-সহ একাধিক যুবক রেলপাড়ের পাশে নেশা করেন। এ দিন রেলপাড়ে ঘটনাস্থলে থাকা যুবক মহম্মদ রাজা বলেন, ‘‘নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ইস্তিকারের সঙ্গে অভিষেকের তর্কাতর্কি শুরু হয়েছিল। আমি বাধা দিতে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই অভিষেক ছুরি বার করে সজোরে ইস্তিকারের বুকে আঘাত করে।’’

বুকভাঙা: ভেঙে পড়েছেন ইস্তিকারের পরিজনেরা। রবিবার সকালে, ট্যাংরায়। —নিজস্ব চিত্র

ট্যাংরা থানা এলাকার ডি সি দে রোডের বস্তির ঘুপচি ঘরে স্ত্রী, দুই শিশুকন্যা ও এক পুত্রকে নিয়ে সংসার পেশায় রিকশাচালক ইস্তিকারের। এ দিন দুপুরে ডি সি দে রোডে ইস্তিকারের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন স্ত্রী রেণু বিবি। ঘরে ভিড় করেছেন পড়শিরা। রেণু বিবির কথায়, ‘‘আমার স্বামীর কোনও শত্রু ছিল না। তা সত্ত্বেও ওকে খুন করা হল। অভিযুক্তের কঠোর সাজা হোক এটাই চাইছি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘আমার স্বামী রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। বছর কয়েক আগেই এলাকার কয়েক জন নেশাগ্রস্ত যুবকের খপ্পরে পড়ে আমার স্বামীও নিয়মিত নেশা করতে শুরু করেন। আমাদের এখানে অবৈধ ভাবে নেশার ট্যাবলেট থেকে শুরু করে পাতা, মদ দেদারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পুলিশ সব জেনেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ এ দিন ডি সি দে রোডের মুসলিম বস্তির বাসিন্দারা পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের কাজ নেশাগ্রস্তদের মূল স্রোতে ফেরানো। কিন্তু ট্যাংরা থানার পুলিশ উল্টো কাজ করছে। এই এলাকায় রমরমিয়ে নেশার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। পুলিশকে বারবার বলা সত্ত্বেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ ওই অভিযোগ প্রসঙ্গে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ট্যাংরার রেলপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে নেশাগ্রস্তদের ঠেক রয়েছে। ওটা শিয়ালদহ রেলপুলিশের এলাকা। আমরা কিছু বলতে পারব না।’’ ওই কর্তা আরও জানান, ট্যাংরার ডি সি দে রোড-সহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে নেশার সামগ্রী বিক্রির নিয়মিত অভিযান চলে। খবর পেলেই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

গত শুক্রবার বিকেলে ট্যাংরার চায়না টাউনে পুলিশ কিয়স্কের সামনেই ছুরি দিয়ে কুপিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবু সরকারকে খুন করা হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের রবিবার সকালে যুবক খুনের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এ দিন সকালে ঘটনার পরে রেলপা়ড়ের সামনে পুলিশ পিকেট বসানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Istikar Hussain Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE