Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

গতির পথেই বিপদ, চিন্তায় পুলিশ

দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর মাধ্যমই যেন হয়ে উঠছে মরণফাঁদ। যানজট এড়াতে কলকাতা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে এখন একের পর এক উড়ালপুল। কিন্তু সেই উড়ালপুলই হয়ে উঠেছে ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা’। ‘মা’ উড়ালপুল থেকে এজেসি বসু রোড বা লেক গার্ডেন্স— বেশির ভাগ উড়ালপুলেই পথ-দুর্ঘটনা এখন কার্যত রোজকার বিষয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনোর মাধ্যমই যেন হয়ে উঠছে মরণফাঁদ।

যানজট এড়াতে কলকাতা শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে এখন একের পর এক উড়ালপুল। কিন্তু সেই উড়ালপুলই হয়ে উঠেছে ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা’। ‘মা’ উড়ালপুল থেকে এজেসি বসু রোড বা লেক গার্ডেন্স— বেশির ভাগ উড়ালপুলেই পথ-দুর্ঘটনা এখন কার্যত রোজকার বিষয়। গত সাত দিনে ছ’টি দুর্ঘটনার মধ্যে চারটি দুর্ঘটনাই ঘটেছে শহরের বিভিন্ন উড়ালপুলে। যা দেখে কপালে ভাঁজ লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের।

কলকাতা শহরের যত রাস্তা রয়েছে, তার মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশে গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু এ শহরে এখন নিত্যদিনই গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শহরকে যানজটমুক্ত রাখা এখন কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এ কাজে যা পুলিশের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, উল্টে সেই উড়ালপুলেই এই পরিস্থিতি তাই পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে এক দুর্ঘটনার জেরে যানজট হয় মা উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকায়। পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ উড়ালপুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাড়ি উল্টে যায়। চালক বা আরোহী কেউ আহত না হলেও এই ঘটনার জেরে রাস্তা আটকে যায়। যানজটে নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা। তদন্তকারী এক পুলিশকর্তা জানান, বেপরোয়া গতির জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও গাড়ি চালকের দাবি, যান্ত্রিক গোলমালেই এই বিপত্তি। গাড়ি-সহ চালককে আটক করেছে পুলিশ।

মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। এক পুলিশকর্তার কথায়, শহরের বিভিন্ন উড়ালপুল এখন কার্যত মরণফাঁদ। দুর্ঘটনার খতিয়ান অন্তত তেমনটাই বলছে— নিত্যদিন উড়ালপুলে গাড়ি উল্টে যাচ্ছে, বা ডিভাইডারে ধাক্কা মারছে। পুলিশকর্তারা মনে করছেন, ট্রাফিক আইন না মানা বা বেপরোয়া গতির জেরেই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন চালক ও আরোহীরা। উৎসবের মরসুমে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। হেলমেট ও সিটবেল্টের ব্যবহার না করাই যেন ‘স্টাইল’। তা ছাড়া উড়ালপুলে সাধারণত যানজট থাকে না। সিগন্যালের বালাইও নেই। ফলে উড়ালপুলে উঠে গাড়ি বা মোটরবাইকের গতি আরও বাড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। আইন অনুযায়ী, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো কিংবা রাত ১০টার পরে শহরের বিভিন্ন উড়ালপুলে বাইক চালানো নিষিদ্ধ। কিন্তু সেই ট্রাফিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে গতিতে ভর করে ছুটে চলতে গিয়েই বিপদ ডেকে আনছেন গাড়ি চালকেরা।

এ বছর পঞ্চমীর রাতে অর্থাৎ ৬ অক্টোবর মা ও অম্বেদকর উড়ালপুলে জো়ড়া দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চার যুবক। দুর্ঘটনার পরে তদন্তকারীরা জানান, দু’টি ক্ষেত্রেই হেলমেট না পরে বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক চালানো হচ্ছিল। ফলে দু’টি বাইকই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারে। দিন কয়েক পরে ২২ অক্টোবরও লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে উল্টে যায় একটি বিলাসবহুল গাড়ি। সোমবারও লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলে চারু মার্কেটমুখী একটি বাইক এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে। হাতে-পায়ে চোট পান সাইকেল আরোহী, বাইকটিতে তিন আরোহীর মাথাতেই হেলমেট ছিল না। তার আগে রবিবার সকালেও ওই একই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি স্কুটি ডিভাইডারে ধাক্কা মারলে প্রাণ হারান আরোহী।

পথ-দুর্ঘটনা কমাতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না, এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, আরোহী, গাড়িচালকেরা সচেতন না হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না বলেই মনে করছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিনীত গোয়েলের কথায়, ‘‘পথ-দুর্ঘটনা রুখতে কলকাতা পুলিশ খুব সক্রিয়। স্কুলপড়ুয়া থেকে অটোচালক— সর্বস্তরেই সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE