—প্রতীকী চিত্র।
দিল্লি পেরেছে, মুম্বই পেরেছে। পারেনি কলকাতা!
মহানগরের বায়ুদূষণের পিছনে ডিজেলচালিত বাস, ট্যাক্সিকেই মূলত দায়ী করেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের দাবি, বিপদ কমাতে ডিজেলের বদলে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) -এর মতো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। বাস্তব চিত্র বলছে, দিল্লি, মুম্বইয়ে বহু দিন আগেই বাস, ট্যাক্সি, অটোতে সিএনজি চালু হয়ে গিয়েছে। অথচ মেরেকেটে অটোয় এলপিজি চালু হলেও, সিএনজির সরবরাহই শুরু হয়নি কলকাতায়।
এই ব্যর্থতার পিছনে পরিবেশকর্মীরা দায়ী করছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকেই। জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেখানেও বারবার তিরস্কৃত হয়েছে সরকার পক্ষ। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘কেন্দ্র চিরকালই কলকাতাকে অবহেলা করেছে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পোস্ত কিংবা ইলিশের জন্য কেন্দ্রের কাছে দরবার করলেও সিএনজির জন্য করেননি।’’ পরিবেশকর্মীদের ক্ষোভ, পরিবেশ নয়, এখানে রাজনৈতিক স্বার্থই গুরুত্ব পায়। তাই এলপিজি চালু করতে গিয়েই বিরোধীদের বাধায় হিমশিম খেয়েছিল তৎকালীন বাম সরকার।
অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারছে না প্রশাসনের একাংশ। তাঁরাই বলছেন, ২০১১ সালে সিএনজি সরবরাহের জন্য গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া (গেইল), হিন্দুস্থান পেট্রোলিয়াম ও রাজ্যের গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের মধ্যে যৌথ সংস্থা তৈরি নিয়ে মউ স্বাক্ষর হয়েছিল। কিন্তু সেই সংস্থা আজও তৈরি হয়ে ওঠেনি। সম্প্রতি কলকাতায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, জটিলতা কাটিয়ে সংস্থা তৈরি করতে হবে। ১০ নভেম্বর সে ব্যাপারে মুখ্য সচিবের রিপোর্ট পেশ করার কথা।
সুবিধা কোথায়
• কার্বনের মাত্রা কম
• দূষণের মাত্রা কম
• পরিবেশের ক্ষতি হয় না
• দাম তুলনায় কম
• গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম
পরিবেশকর্মীদের মতে, ডিজেল গাড়ির ধোঁয়ায় প্রচুর পরিমাণে কার্বন থাকে। যা দূষণের মাত্রা বাড়ায়। সিএনজি-র ক্ষেত্রে দূষণ অনেক কম। শুধু তাই নয়, দামের দিক থেকেও সিএনজি সস্তা। তাই সিএনজি আনার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ একান্তই জরুরি। কলকাতার বায়ুদূষণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে। পরিবেশ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (সিএসই) এ শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে সমীক্ষা করেছে। দূষণে রাশ টানতে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির পক্ষে সওয়াল করেছে তারাও। সিএনজি এলে যে বায়ুদূষণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে সেই আশা করছেন এ রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তারাও।
প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ রাজ্যে সিএনজি আনতে হলে উত্তরপ্রদেশের জগদীশপুর থেকে হলদিয়া পর্যন্ত পাইপলাইন পাতা হবে। সেখান থেকে ফের পাইপলাইন মারফত গ্যাস পৌঁছবে কলকাতায়। সেই কাজ ২০২০ সাল নাগাদ শেষ হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তা হলে তত দিন কি এ ভাবেই বিষ ধোঁয়া গিলতে হবে নাগরিকদের?
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, আসানসোল, রানিগঞ্জে কোল বেড মিথেন গ্যাস উত্তোলন করে কিছু গাড়ি চলছে। আদালতের সর্বশেষ শুনানিতে বলা হয়েছে, যত দিন না পাইপলাইন তৈরি হচ্ছে তত দিন আসানসোল থেকে ট্যাঙ্কারে চাপিয়ে কোল বেড মিথেন গ্যাস কলকাতায় সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক।
সেই নির্দেশ পালন হতে কত দিন লাগে সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy