Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Mrinal sen

মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষে কুণাল সেনের স্মৃতিরোমন্থন

মৃণাল সেনের নানা ছবির কথার পাশাপাশি বেশ কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা, তাঁর জীবন দর্শন, জীবনে ওঠাপড়া নিয়ে এক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা, আয়োজনে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন।

আলোচনায় কুণাল সেন ও ইনা পুরী। ছবি: অমিত দত্ত

আলোচনায় কুণাল সেন ও ইনা পুরী। ছবি: অমিত দত্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ১৫:০৪
Share: Save:

প্রবাদপ্রতিম পরিচালক মৃণাল সেনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গত ১১মে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন শ্রী সিমেন্ট লিমিটেড বেঙ্গল ক্লাবে আয়োজন করেছিল এক মনোজ্ঞ আলোচনা সভার। সভাতে প্রধান বক্তা ছিলেন মৃণাল সেনের পুত্র কুণাল সেন। এই আলাপচারিতার সঞ্চালনা করেন লেখক আর্ট কিউরেটর ইনা পুরী।

মৃণাল সেনের নানা ছবির কথার পাশাপাশি বেশ কিছু টুকরো টুকরো ঘটনা, তাঁর জীবন দর্শন, জীবনে ওঠাপড়া নিয়েএক অন্তরঙ্গ আলাপচারিতা। অনুষ্ঠানটির ডিজিটাল পার্টনার ছিল আনন্দবাজার ডট কম।

আমার বাবা

বাবা খুব সংবেদনশীল এবং সৎ মানুষ ছিলেন। সাংসারিক যে কোনও ব‌্যাপারে বাবা ছিলেন উদাসীন। মা (গীতা সেন) পুরো সংসারটিকে আগলে রেখেছিলেন। এমনও দিন গিয়েছে যখন মা চুলা জ্বালিয়ে হাঁড়িতে জল দিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন, কখন বাবা চাল আনবেন। মিনিট যায়, ঘণ্টা যায় বাবার কোনও খোঁজ নেই। জানা গেল তিনি কাছের কোনও পার্কে বসে আড্ডা মারছেন।

একবার মাঠে খেলতে গিয়ে আমার থুঁতনি ফেটে যায়। আমার থেকে যারা বয়সে বড় ছিল, তারা আমাকে পাড়ার একটি ওষুধের দোকানে নিয়ে গিয়ে স্টিচ করে আনে। বাড়িতে মা-তো হুলস্থুল আরম্ভ করে দেন। আমার হালকা জ্বর এসেছিল। বাবা ফিরে এসে সবটা শুনে আমার হাতে থার্মোমিটার দিয়ে মা-কে সম্প্রতি শেষ হওয়া ট‌্যুরের গল্প করতে শুরু করে দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করছেন এষা দত্ত

অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করছেন এষা দত্ত

ক‌্যামেরা চলছে

সিনেমার ক্ষেত্রে কোনও রকমের আড়ম্বর বাবার পছন্দ ছিল না। খুব অল্প ব‌্যয়ে সিনেমা বানাতে স্বচ্ছন্দ‌্য বোধ করতেন। একেবারে ভিন্ন ধারার ছবি বানাতেন। তাঁর বেশিরভাগ ছবি বাংলাতে। এছাড়া হিন্দি, তেলেগু এবং উড়িয়া ভাষাতেও ছবি বানিয়েছিলেন তিনি। ছবিতে সংগীতের ব‌্যবহারও ছিল একেবারে নুন‌্যতম। কলকাতার প্রতি ছিল তাঁর অমোঘ টান। আর সেই ভালবাসার প্রতিফলন তাঁর ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়। দূরদর্শনে ছবি দেখানোর বিষয় নিয়ে বেশ কিছু কথা বললেন কুণাল সেন। টেলিভিশনে ছবির মাঝে কমার্শিয়াল বিরতির তীব্র নিন্দা করতেন। এই কারণে প্রথমে তিনি দূরদর্শনের ছবি করতে রাজি হননি। তবে পরবর্তী সময়ে দূরদর্শনের জন‌্য ১২টা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলেন। শর্ত ছিল ছবির প্রথম এবং শেষে বিজ্ঞাপন দেখানো যাবে, মাঝে নয়। দুর্ভাগ‌্যবশত দূরদর্শনের এই সব ক’টি ছবি হারিয়ে গিয়েছে। কুণাল সেন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করলেও খুব একটা ফল মেলেনি। এইরকম নানা ছোট বড় ঘটনা, স্মৃতিরোমন্থন শ্রোতারা একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে শোনেন। অনুষ্ঠান শেষে অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী অভিন্দন জানান তাঁকে।

প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাঁকে ধন‌্যবাদ জানান সম্মানীয় কনভেনার অফ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া অ‌্যাফেয়ার প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন অ‌্যান্ড এহসাস উওম‌্যান অফ কলকাতা, এষা দত্ত

নন্দিতা পাল চৌধুরি (কনসালটেন্ট কিউরেটর অফ ইন্ডিয়ান ফোক আর্ট, ক্রাফট অন্ড পারফরম‌্যান্স)

মৃণাল সেন যে কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খুব অল্প বয়স থেকেই তাঁর ছবির ভক্ত আমি। আমার সবথেকে প্রিয় ছবিখান্দার। আমার একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে চাই এই প্রেক্ষিতে। আমি তখন কলেজে পড়ি।মৃগয়া সিক্যুয়েলের জন‌্য মৃণালদা আমাকে কাস্ট করবেনই আর আমি খালি ইতস্তত বোধ করছি। আমাকে খুব বকাঝকা করেছিলেন যখন আমি না বলতে চেয়েছিলাম। সেই ছবি কোনওকারণে রূপায়িত হয়নি। কিন্তু আমার কাছে এই অভিজ্ঞতা অমূল‌্য।

এষা দত্ত (কনভেনার অফ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া অ‌্যাফেয়ার প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন অ‌্যান্ড এহসাস উওম‌্যান অফ কলকাতা)

ছোট থেকে মৃণালবাবুর ছবি দেখে বড় হয়েছি। ওঁর তিনটে ছবি আমরা ডিস্ট্রিবিউটও করেছিলাম। ওঁর ছবির যে বিষয়টা আমাকে সব থেকে মুগ্ধ করে তা হল ওঁর সামাজিক, রাজনৈতিক দৃশ‌্যপট। ব‌্যাপারে আমি মনে করি উনি অদ্বিতীয়। এত সূক্ষ্মভাবে উনি সমাজের প্রতিটি স্তরকে ফুটিয়ে তুলেছেন যা সত‌্যি পরবর্তী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার সবথেকে প্রিয় ছবিমৃগয়া আমার তখন কলেজ লাইফ। ছবিটির সঙ্গে খুব রিলেট করতে পারতাম। আজকের এই সেশনে ওঁর জীবনের বেশ কিছু কথা আমাদের উপহার দিয়েছেন তাঁর পুত্র কুণাল সেন। শুধু পরিচালক মৃণাল সেন নয়, মৃণাল সেনের জীবন সম্পর্কিত নানা কথা আমাদের সকলকে ঋদ্ধ করেছে।

কুণাল সেনকে উত্তরীয় পরাচ্ছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী

কুণাল সেনকে উত্তরীয় পরাচ্ছেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী

সুদীপ্তা চক্রবর্তী (অভিনেত্রী)

আমি খুব ছোট থেকেই মৃণাল সেনের ছবি দেখি। খুব ভাল লাগত। আমার বন্ধুরা আমায় বলত তুই আঁতেল, তাই ওঁর ছবি তোর ভাল লাগে। আমার শুধু যে ভালই লাগত এমনটা নয়। একটা টান ছিল তাঁর ছবির প্রতি। একেক বয়সে একই ছবি একেক রকম ভাললাগা তৈরি করেছে। আমার সব থেকে প্রিয় ছবি হলখারিজ রান্নাঘরে একটা বাচ্চাকে শুয়ে রাখা হয়েছে সেই দেখে যেমন খুব কষ্ট হত আবার আমার বেশ কিছু পরিচিতরা ছবিটিতে অভিনয় করেছেন। তাই কষ্টের পাশাপাশি একটা ভাললাগাও ছিল। একটা বড় বয়সের অভিজ্ঞতার কথা বলি।বাড়িওয়ালিছবিটি তখন রিলিজ করেছে। একদিন বেশ সকালে একটা ফোন। ফোনের ওপার থেকে গলা ভেসে এল আপনি কি সুদীপ্তা? আমি মৃণাল সেন। প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ওঁর সঙ্গে কাজ না করার অনুশোচনা রয়েছে মনে কিন্তু ওঁর ওই একটি কল আমার কাছে চিরস্মরণীয়।

বাকরুদ্ধ দর্শক-শ্রোতারা

বাকরুদ্ধ দর্শক-শ্রোতারা

নিশা রূপারেল সেন (মৃণাল সেনের পুত্রবধূ)

মৃণাল সেন আমার শ্বশুরমশাই ছিলেন। আমাদের খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমার আর কুণালের প্রণয় পর্বের সময় তাঁর সঙ্গে আলাপ। বিয়ের আগেও ওদের বাড়িতে আমার অনায়াস যাতায়াত ছিল। উনি খুব একটা সাংসারিক মনস্ক ছিলেন না। আমার জন্মদিনে উইশ করতে ভুলে গেলে পরে হয়তো ফোন করে বলতেন মা-কে বলিস না। যেখানেই যেতেন আমার আর মায়ের জন‌্য একই উপহার আনতেন। জিগ‌্যেস করাতে, হেসে বলতেন যাতে ঝগড়া না লাগে তাই এই ব‌্যবস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mrinal sen Kunal Sen Centenary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE