Advertisement
E-Paper

পাঁচিল ভাঙার আওয়াজে ঘর থেকে বেরোতেই ধসে পড়ল ছাদ, ‘বেঁচে আছি? এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না’!

যে ঘরের ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে, সেখানেই রয়েছে বইপত্র। আগামী সোমবার থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে পৌষালির। কী করবেন, আপাতত কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না আইনের ছাত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:১১
image of student

বৌবাজারে অল্পের জন্য প্রাণ বাঁচল পৌষালি পাত্রের। — নিজস্ব চিত্র।

কী ভাবে যে প্রাণটা বেঁচে গেল! তা ভেবে এখনও শিউরে উঠছেন পৌষালি পাত্র। ঘুমের মধ্যেই হঠাৎ করে কাঁপুনি টের পেয়েছিলেন। বুঝতে পারছিলেন, কিছু একটা ভেঙে পড়ছে। দোতলার ঘর থেকে বেরিয়ে নীচে নেমে জানতে পারেন বাড়ির পাঁচিলের একাংশ ভেঙে পড়েছে। সেটা দেখতে পৌষালি যখন বাইরে বেরিয়েছেন, ঠিক তখনই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাঁদের দোতলার ঘরের ছাদের একাংশ। যে ঘরের বিছানায় মিনিট কয়েক আগেই ঘুমোচ্ছিলেন পৌষালি।

তখন থেকেই পৌষালি ভেবে চলেছেন, ঘর থেকে বেরিয়ে না এলে কী হত! বৌবাজারে রামকানাই অধিকারী লেনের যে বাড়ির দেওয়াল-সহ ঘরের একাংশ আচমকা ভেঙে পড়েছে, সেখানেই থাকেন পৌষালি। মঙ্গলবার সকালে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছেন আইনের এই ছাত্রী। যে ঘরের ছাদের অংশ ভেঙে পড়েছে, সেখানেই রয়েছে বইপত্র। আগামী সোমবার থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে পৌষালির। কী করবেন, আপাতত কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।

৬/১এ, রামকানাই অধিকারী লেন। এই ঠিকানাতেই পৌষালিদের বাড়ি। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় তরুণীর। পুরনো বাড়িটির পাশে রয়েছে নিচু পাঁচিল। সেটি ভেঙে যায়। চারপাশ ঢেকে যায় বালির আস্তরণে। পৌষালি জানান, পাঁচিল ভাঙার কারণে কেঁপে ওঠে আস্ত বাড়ি। সেই কম্পনই আসলে প্রাণ বাঁচিয়েছে তাঁর। তাঁর কথায়, ‘‘আমি ভয়ে নীচে নেমে আসি। তার কিছু ক্ষণের মধ্যে আমার ঘরের ছাদের একটা বড় অংশ ভেঙে পড়ে।’’ পৌষালি জানান, কিছু ক্ষণ আগেও সেখানে শুয়েছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি যেখানটায় শুয়ে ছিলাম, আমার মাথার কাছটাতেই ভেঙে পড়ে ছাদের অংশ। আমি বিছানায় থাকলে নির্ঘাত আমার মাথাতেই ভেঙে পড়ত। মরেই যেতাম। এখনও ভয়ে হাত-পা কাঁপছে।’’

পৌষালিদের বাড়িটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। শতাধিক বছরের পুরনো। ওই বাড়িতে ৮-১০ থাকেন। ওই ৬/১এ নম্বরের পাশের বাড়িটি ভাঙা হচ্ছিল। অভিযোগ, তারই অভিঘাতে পুরনো বাড়িটির ঘরের অংশ মঙ্গলবার ভেঙে পড়েছে। তবে এই প্রথম নয়। পৌষালি জানিয়েছেন, পাশের বাড়ি ভাঙার কারণ তাঁদের ছাদ দিয়ে জল চুইয়ে পড়ছিল। চাঙড় ভেঙেছে। এ বার ঘরের একাংশ ভেঙে পড়ল। তাঁর অভিযোগ, যাঁর বাড়ি, তিনি বিক্রি করে চলে গিয়েছেন। কাজ চললেও প্রোমোটার নিজে আসেন না। কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছে। বৈঠকও হয়। তবে ব্যবস্থা হয়নি। পৌষালির প্রশ্ন, ‘‘আমাদের কী হবে?’’

পৌষালির গলায় এখন শুধুই আতঙ্ক। কাল কী হবে, তা জানেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ভয় লাগছে। বাড়ির ছাদের একাংশ ভেঙে পড়েছে। ছাদের ঢালাই ভেঙে আসছে। ওটা কারও মাথায় পড়লে কী হবে?’’ তিনি এ-ও জানিয়েছেন, পাশের বাড়িটি ভাঙার কারণে তাঁদের ঠাকুরঘরে ফাটল ধরেছে। সদরের চৌকাঠে ফাটল ধরেছে। বালি পড়ছে ঝুরঝুর করে। পৌষালির অভিযোগ, ‘‘প্রোমোটারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। ওই ঘরে ঢুকতে পারছি না। জিনিসপত্র পড়ে রয়েছে। আমার বইপত্রও ওখানেই পড়ে রয়েছে। সামনের সোমবার থেকে মৌখিক পরীক্ষা শুরু। পড়াশোনা কী করে করব?’’

পৌষালির মতো স্থানীয় বাসিন্দাদেরও দাবি, বিষয়টি তাঁরা বার বার স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছেন। কিন্তু তার পরও বাড়ি ভাঙার ব্যাপারে কোনও সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি। এই ঘটনায় আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে ফোন করা হয়েছিল এলাকার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে-কে। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘বাড়ি নির্মাণের অনেক নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বাড়ি ভাঙার কিছু নিয়ম রয়েছে কি?’’ তাঁর কথায়, বৌবাজারের ওই এলাকার বাড়িটি ভেঙে একটি চার তলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিশ্বরূপ সে বিষয়ে জানতেনও। তিনি বলেন, ‘‘কাজ শুরু হওয়ার পর এলাকার মানুষ আমার কাছে অভিযোগ জানায়। আমি আমার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে প্রোমোটার এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলি। বৈঠকও করি। কিন্তু বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয়নি, তা জানতে হবে। আপাতত আমি বিষয়টি পুরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাঁরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁদের দিকটিও খতিয়ে দেখা হবে।’’

Bowbazar Building Collapse Collapse
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy