Advertisement
E-Paper

জলে নেমে নিখোঁজ সাঁতারু, রহস্য

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ সাঁতারু কাজলবাবু কলেজ স্কোয়ারের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন। তার পরে আর ওঠেননি। তিনি বৌবাজার ব্যায়াম সমিতির সুইমিং ক্লাবের সদস্য ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০১:৩১
কাজল দত্তের খোঁজে নামছে ডুবুরি। শুক্রবার, কলেজ স্কোয়ারে। নিজস্ব চিত্র

কাজল দত্তের খোঁজে নামছে ডুবুরি। শুক্রবার, কলেজ স্কোয়ারে। নিজস্ব চিত্র

সাঁতার কাটার সময় দুর্ঘটনা থেকে অন্যদের রক্ষা করাই ছিল তাঁর কাজ। কিন্তু শুক্রবার সকালে সাঁতার কাটতে নেমে নিজেই নিখোঁজ হয়ে গেলেন ৬৭ বছরের কাজল দত্ত।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ সাঁতারু কাজলবাবু কলেজ স্কোয়ারের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে নেমেছিলেন। তার পরে আর ওঠেননি। তিনি বৌবাজার ব্যায়াম সমিতির সুইমিং ক্লাবের সদস্য ছিলেন। রামনাথ বিশ্বাস লেনের বাসিন্দা কাজল বাবুকে সাঁতার কাটার জন্য জলে নামতে দেখেন ক্লাবের অন্যান্য সদস্যেরা। পৌনে এক ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি উঠেও আসতেন পুল থেকে। এ দিন বেশ কিছু ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও তিনি না-ওঠায় খোঁজ শুরু হয়। পুকুরের পাড়ে তাঁর তোয়ালে এবং ক্লাবের ঘরে তাঁর ব্যাগটি থাকলেও কাজলবাবুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পরেই ক্লাবের তরফ থেকে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় খবর পাঠানো হয়।

কাজলবাবুর তল্লাশির জন্য এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর থেকে ডুবুরি নামানো হয়। প্রথমে এক জন ডুবুরি পুকুরের নির্দিষ্ট অংশে তল্লাশি চালান। তার পরে আরও দু’জন ডুবুরিকে নামানো হয়। ক্লাবের সাঁতারুরাও কাজলবাবুকে খুঁজতে জলে নামেন। দিনভর দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ মেলেনি। রাতে পুরসভা থেকে পাম্প পাঠিয়ে পুলের জল নামানোর ব্যবস্থা হয়। সারা রাত চলে পাম্প। পুলের চার দিকে লাগানো হয় সার্চ লাইটও। তল্লাশি অভিযান চলে রাত পর্যন্ত। আজ, শনিবার সকাল থেকে ফের শুরু হবে তল্লাশি।

আরও পড়ুন: শত কষ্টেও মুখ ফুটত না মেয়ের

ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানান, কাজলবাবু দক্ষ সাঁতারু ছিলেন। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস’ থেকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। ‘ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি’ থেকে ‘লাইফ সেভার’-এর শংসাপত্র ছিল। দীর্ঘদিন ওই পুকুরে সাঁতার শেখান কাজলবাবু। অন্যদের ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচানোর কাজটাও তিনি প্রায়ই সামলাতেন। ওই সাঁতার ক্লাবের সম্পাদক বিপ্লব ঘোষ বলেন, ‘‘ওঁর ৬৭ বছর বয়স হলেও শারীরিক ভাবে খুবই সক্ষম ছিলেন। অসুখ-বিসুখ হতে দেখা যায়নি বললেই চলে। ফি-দিন সকালে এখানে সাঁতার কাটতে নামতেন। ক্লাবের সকলে তো বটেই, এমনকী যাঁরা বাইরে থেকে সাঁতার কাটতে আসতেন, সকলেই ওঁর ওপরে ভরসা করতেন।’’

সাঁতার কাটার সময় ক্লাবের তরফ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে না? বিপ্লববাবুর কথায়, ‘‘সাঁতার শেখানোর সময় প্রত্যেকের ওপর কড়া নজরদারি থাকে। দুর্ঘটনা এড়ানোর সব রকম ব্যবস্থা থাকে। শুধু প্রশিক্ষক নয়, সঙ্গে থাকেন ‘লাইফ সেভার’-ও। কিন্তু কাজলবাবু নিজেই এক জন দক্ষ সাঁতারু এবং লাইফ সেভার ছিলেন। তাই তিনি জলে নামলে বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন পড়ত না।’’

বিপর্যস্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন কাজলবাবুর ভাইঝি। (ডান দিকে) তল্লাশিতে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দল। শুক্রবার, কলেজ স্কোয়ারে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য ও স্বাতী চক্রবর্তী

সাঁতার প্রশিক্ষকদের অনেকেই জানাচ্ছেন, জলে নেমে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাত তুলে ইঙ্গিত করার নির্দেশ দেওয়া হয় সাঁতারুদের। সেটা দেখেই তাঁকে সাহায্যের জন্যে এগিয়ে যান প্রশিক্ষকেরা। জলে নামার আগে নির্দেশ দেওয়া হয়, যদি পেশিতে টান ধরে কিংবা শরীরে কোনও অস্বস্তি অনুভব হয়, তা হলে সাঁতার না-কেটে লেনের পাশের দড়ির সাহায্যে পাড়ে উঠে আসতে হবে। তবে তার পরেও যে কোনও সাঁতারুর জলে নেমে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সাঁতার প্রশিক্ষকদের অনেকেরই ধারনা, সম্ভবত কাজলবাবু ডুব দিয়ে জলের নীচে যাওয়ার পরে তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকবে। তার ফলেই দক্ষ সাঁতারু হওয়া সত্ত্বেও তিনি আর উঠতে পারেননি।

শুধু সাঁতার নয়, শুল্ক দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কাজলবাবুর নেশা ছিল চিংড়ি মাছ ধরাও, জানাচ্ছেন তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু সাঁতারু অনুভা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘আজ সকালে হাঁটতে গিয়ে দেখা হয়েছিল। বললেন, চিংড়ি মাছ ধরবেন, তাই জলে নামছেন। কিন্তু ঘণ্টা খানেক পরে খবর পেলাম খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বাস করতে পারছি না!’’ ক্লাবের অন্য সদস্য অসীম পাইন বলেন, ‘‘জলে চিংড়ি ধরতে না পারলে ওর মন খারাপ হয়ে যেত। এটা ওঁর নতুন নেশা হয়েছিল। মাছ ধরে ক্লাবের সদস্যদের দিত।’’

‘লাইফ সেভার’ কী ভাবে জলে নিখোঁজ হতে পারেন?

• অন্যকে রক্ষা করার প্রশিক্ষণ থাকলেও সব বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচানো সহজ নয়।

• নিজেকে বাঁচানোর কৌশল জানা থাকলেও সঙ্কটে সাহায্য দরকার হয় ‘লাইফ সেভার’-এর।

• গভীর জলে হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হলে বা পেশিতে টান ধরলে বিপদে পড়তে পারেন দক্ষ সাঁতারুও।

• এমন ক্ষেত্রে সাঁতার কাটার মাঝেই দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।

• পায়ের পেশিতে আচমকা টান ধরলে সাঁতার কেটে ফেরা কঠিন যে কারও পক্ষেই।

• মাছ ধরার জন্য যদি গভীরে গিয়ে থাকেন কাজলবাবু, তবে এমন ঝুঁকি আরও বাড়ে।

• হঠাৎ লাফ দিয়ে জলে নামলে মাথায় চোট পাওয়ার আশঙ্কাও থাকতে পারে।

• সেই অবস্থায় গভীর জলে চলে গিয়ে থাকলে সাহায্য চেয়ে ইঙ্গিত দেওয়াও কঠিন।

প্রদীপ্ত ঘোষাল

‘লাইফ সেভিং সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার ম্যানেজিং ট্রাস্টি’

কাজলবাবু এ দিন সকালে জলের যেখানে নেমেছিলেন, সেখানে জলের গভীরতা ১০ থেকে ১২ ফুট বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলের মাঝখানের গভীরতা ১৮ ফুট। এই জলে কাজলবাবুর মতো অভিজ্ঞ সাঁতারু ডুবে যাওয়া অস্বাভাবিক, মনে করছেন তাঁর সহ-সাঁতারুরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, কলেজ স্কোয়ার সুইমিং পুলে সরাসরি গঙ্গা থেকে পরিশোধিত জল ঢোকে। সেই জলের সঙ্গেই চিংড়ি মাছ এসে পড়ে পুলের জলে। চিংড়ি মাছ সাধারণত থাকে জলের নীচে, কাদা মটির উপরে। ডুব দিয়ে রোজ সেই মাছ তিনি তুলে আনতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সহ-সাঁতারুদের কেউ কেউ। এক জন বলেন, ‘‘ও (কাজলবাবু) পুলের নীচে সব কিছু জানত। তাই কোথাও ঢুকে আটকে থাকাটা মানতে পারছি না। একমাত্র জলের নীচে হার্ট অ্যাটাক হলেই এমনটা হওয়া সম্ভব।

কাজলবাবুর আত্মীয় বাসব ঘোষ বলেন, ‘‘উনি অবিবাহিত ছিলেন। বাড়িতে নব্বই বছরের বৃদ্ধ মা রয়েছেন। কী ভাবে তাঁকে সামলানো হবে বুঝতে পারছি না।’’

College Square Swimming Pool Kajol Dutta Death কাজল দত্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy