Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ছুটির শহরে অবিরাম প্রচার

সাতসকালের পার্কে প্রাতর্ভ্রমণে প্রার্থীরা আছেন। ভরদুপুরে রক্তদান শিবির বা সম্ভাব্য ভোটদাতাদের নিয়ে বৈঠকেও থাকছেন। আবার সন্ধ্যার জনসভা কিংবা ভোটারের সঙ্গে চা-কফিচক্র, তাতেও দেখা মিলতে পারে তাঁদের। 

রবি-ছবি: (১) গরম থেকে বাঁচতে ডাবের জল ভরসা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

রবি-ছবি: (১) গরম থেকে বাঁচতে ডাবের জল ভরসা দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৯ ০১:৪৩
Share: Save:

এক কথায় ‘মর্মান্তিক’! ভোটপ্রার্থীর রবিবার কখন শুরু হবে তার আঁচ মিললেও, রাত পর্যন্ত ছিটেফোঁটা বিরাম নেই।

সাতসকালের পার্কে প্রাতর্ভ্রমণে প্রার্থীরা আছেন। ভরদুপুরে রক্তদান শিবির বা সম্ভাব্য ভোটদাতাদের নিয়ে বৈঠকেও থাকছেন। আবার সন্ধ্যার জনসভা কিংবা ভোটারের সঙ্গে চা-কফিচক্র, তাতেও দেখা মিলতে পারে তাঁদের।

কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের রাহুল সিংহই যেমন, বেলেঘাটার সুভাষ সরোবর থেকে দিন শুরু করেছেন। রবিবাসরীয় সকালে শহরের বাতাসে এ ভাবেই মিশেছে ভোটের গন্ধ। দক্ষিণ কলকাতায় সকালে পাটুলির কাছে শাসক দলের কয়েকটা পোস্টার মাটিতে লুটোচ্ছে দেখে সমর্থকদের কারও কারও গোঁসা ধরেছিল। কিন্তু দুপুরে উত্তরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের ডাকা একটি রক্তদান শিবিরেও বিজেপি প্রার্থীকে দেখা গেল। কাছেই ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে রক্তদান শিবিরে আবার শাসক দলের কাউন্সিলর ইলোরা সাহার মুখোমুখি সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। ভোটযুদ্ধের দমকা হাওয়া তলে তলে বইলেও সৌজন্যের আবহ টাল খায়নি।

কলকাতা দক্ষিণের কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী ঢাকুরিয়ায় কালীমন্দিরে প্রণাম করে দিন শুরু করেছেন, সন্ধ্যায় তাঁর গন্তব্য মেটিয়াবুরুজ। রাত পোহালে রমজানের প্রাক্কালে মেটিয়াবুরুজ-খিদিরপুর তল্লাটে বড় রোড শোয়ের কাজটা শেষ করতে চাইলেন তিনি। বিজেপি-র চন্দ্র বসুও লেক গার্ডেন্সের কাছে গলিতে ঢুকতে জিপ থেকে নামলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের উত্তরপুরুষ চন্দ্রবাবু লেক গার্ডেন্সের হনুমান মন্দিরে নারকেল ফাটিয়েই দিন শুরু করেছেন।

লেক গার্ডেন্স এলাকায় প্রচারে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী চন্দ্র বসু।

শহর কলকাতার এক-একটি সাংসদ এলাকার যা ব্যাপ্তি, তাতে জিপে বা ম্যাটাডরে রোড শো ছাড়া গোটা তল্লাট ‘কভার’ করা অসম্ভব। কিন্তু শুধু রাস্তায় জোড় হাতে ঘুরেও প্রার্থীরা স্বস্তি পাচ্ছেন কই! কসবা-ঢাকুরিয়ায় মন্ত্রী জাভেদ খানকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছিলেন কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। রোড শো কখনও-সখনও ছোটখাটো জনসভারও আদল নিচ্ছে। তবে বেলা এগারোটা বাজতে না বাজতেই মালা তড়িঘড়ি বেহালায় ছুটলেন।

বেহালা থানার কাছে ১১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কয়েকটি বাড়িতে স্থানীয় কাউন্সিলর অশোকা মণ্ডলের সঙ্গে দিল্লি যাওয়ার তাড়নায় হাজির প্রার্থী। ওই তল্লাটে প্রধানত অ-বাংলাভাষী পরিবারেরই বাস। মালা তাঁদের সঙ্গে বসে নরম পানীয়ে চুমুক দিতে দিতে গল্পে মাতলেন। বাড়ির মেয়েরা প্রার্থীকে শোনালেন, আবাসনে কে কে নাচ-গানে দড়! ‘আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপনাকে এর পর থেকে থাকতে হবেই’— প্রার্থীর থেকে কথা আদায়ের হিড়িক। একটু বাদে এমন অন্তরঙ্গ আড্ডায় খুশ মালা বলছিলেন, ‘‘আত্মসন্তুষ্টির জায়গা নেই! সব ধরনের ভোটারের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি।’’

কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী প্রবীণ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও খাটতে কসুর করছেন না। সকালে টানা আড়াই ঘণ্টা ট্যাংরা-বেলেঘাটায় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা, কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দারদের সঙ্গে নিয়ে রোড শোয়ে ছাতা মাথায় দিয়ে তিনি ঘুরলেন। বিকেলেই আবার কাশীপুরে এক নম্বর ওয়ার্ডে জনসভা। যাদবপুর কেন্দ্রের তারকা-প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীকে বেশ কয়েকটি রবিবার বাদে এ দিনই শহরে রোড শোয়ে দেখা গিয়েছে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মিমি ঘুরছেন টালিগঞ্জ বিধানসভার এলাকায়। সকালে গাঙ্গুলিবাগান-বাঘা যতীন তো সন্ধ্যায় ১১, ১১২, ১১৩, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে।

ফণীর আশঙ্কা কাটার পরে রোদের তেজ ফের স্বমহিমায়। সকালে টালাপার্কে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে রাহুল সিংহের রোড শোয়ে মোদী-মোদী স্লোগান উঠলেও ক্লান্তিতে গলা মেলানোর স্বর ক্ষীণতর হচ্ছে। সন্ধ্যায় দমদমের গোরাবাজারে বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে জোরালো বক্তৃতা দিলেন।

আর ঠিক দু’টো রবিবার পরেই ভোট! তার প্রাক্কালে প্রতিপক্ষকে এক ছটাক জমি ছাড়তে কোনও প্রার্থীই এখন কসুর করছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE