Advertisement
১৭ মে ২০২৪
সোদপুর

স্ত্রী-ছেলেকে ‘কুপিয়ে’ আত্মঘাতী

অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ মিলল। মৃত ওই ব্যক্তির নাম বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০)। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৬) এবং ছেলে সুমনকে (৩৫)। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি।

হাসপাতালে তন্দ্রাদেবী। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতালে তন্দ্রাদেবী। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৪৫
Share: Save:

অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ মিলল। মৃত ওই ব্যক্তির নাম বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায় (৬০)। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৬) এবং ছেলে সুমনকে (৩৫)। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশের অনুমান, ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি। ঘটনাস্থলে মিলেছে সুইসাইড নোটও। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে সোদপুরের নীলগঞ্জ রোডে তাঁদের ফ্ল্যাটে।

পুলিশ জানিয়েছে, বিপ্লববাবুর আসল বাড়ি ছিল সোদপুরের ইন্দ্রলোকে। বছর খানেক আগে সেই বাড়ি বিক্রি করে নীলগঞ্জ রোডের একটি আবাসনে তিনতলায় ফ্ল্যাট কেনেন। সেখানে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এ দিন ভোর পৌনে পাঁচটা নাগাদ ওই ফ্ল্যাট থেকে চিত্কার শুনতে পান তাঁরা। সেখানে গিয়ে দেখেন, ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবল গেটে তালা দেওয়া এবং মূল দরজা ভেজানো। কোল্যাপসিবল গেটের মধ্যে দিয়ে হাত বাড়িয়ে দরজাটা খুলতেই রক্তাক্ত অবস্থায় সুমনকে পড়ে থাকতে দেখেন পড়শিরা। গেট খুলতে না পেরে খড়দহ থানায় ফোন করে খবর দেন তাঁরা। পুলিশ এসে গেট ভেঙে ঘরে ঢোকে। পুলিশ জানায়, ড্রয়িং রুমে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন সুমন। পাশের ঘরে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়েছিলেন তন্দ্রাদেবী। তাঁর বুকে, পেটে, হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ। রক্তে ভেসে যাচ্ছিল বিছানা। অন্য একটি ঘর থেকে বিপ্লববাবুর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। সেখানেই টেবিল থেকে একটি সুইসাইড নোট মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, মানসিক ভাবে তিনি বিধ্বস্ত। নিজেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। পরিবারকে টানতে গিয়ে বাজারে অনেক ধার-দেনা হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি আত্মহত্যা করছেন। তবে সুইসাইড নোটে কোথাও লেখা ছিল না স্ত্রী ও ছেলেকে কোপানোর কথা।

ঘর থেকে একটি লাল ডায়েরিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তা খতিয়ে দেখে জানা যায়, বাইরে প্রায় ৭০ হাজার টাকা দেনা ছিল বিপ্লববাবুর। পুলিশের অনুমান, শুধু দেনা নয়, মানসিক অবসাদে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, ছেলে সুমনের চাকরি নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করতেন বিপ্লববাবু। সুমন টিউশন করতেন। বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় বসছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন বারবার। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই অশান্তি চলত। পুলিশ জেনেছে, সম্প্রতি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর পরীক্ষায় বসেছিলেন সুমন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও মৌখিক পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। এটা কোনও ভাবে মেনে নিতে পারেননি বিপ্লববাবু। তাতেই অশান্তি চরমে ওঠে। পুলিশের অনুমান, তার জেরেই এই ঘটনা। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে অবসাদ ও দেনার কারণে বিপ্লববাবু আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে সুস্থ হলে পুরো ঘটনাটা পরিষ্কার হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

man Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE