E-Paper

থার্মোকলে পুলিশি নিষেধাজ্ঞা, হঠাৎ শোলার খোঁজ কুমোরটুলিতে

থার্মোকলের উপরে নিষেধাজ্ঞায় এ বার কুমোরপাড়ায় শোলার খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শিল্পীদের বড় অংশ। কিন্তু তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে শোলার চাষ কম হচ্ছে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫০
বর্তমানে শোলার চাষ কম হচ্ছে। কারণ, চাহিদা তেমন নেই। দামও বেশি।

বর্তমানে শোলার চাষ কম হচ্ছে। কারণ, চাহিদা তেমন নেই। দামও বেশি। —প্রতীকী চিত্র।

আর মাসখানেক পরেই দুর্গাপুজো। তাই কাজের ব্যস্ততা তুঙ্গে কুমোরটুলিতে। এরই মধ্যে গত ৬ অগস্ট সেখানে হানা দেয় শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। মৃৎশিল্পীদের তারা সাফ জানায়, কোনও ভাবেই প্রতিমা সাজাতে থার্মোকল (পলিস্টাইরিন) ব্যবহার করা যাবে না। হঠাৎ এই নির্দেশে বিপাকে পড়ে যান পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের বেশির ভাগ প্রতিমাই তৈরি। থার্মোকল দিয়ে সাজানোর কাজও শেষের মুখে। এখন থার্মোকল নিষিদ্ধ করার কথা বললে আমরা কী করব?’’ যদিও পরিবেশবিদ থেকে পরিবেশকর্মীরা জানাচ্ছেন, থার্মোকলের বদলে পরিবেশবান্ধব শোলা ব্যবহার করা যেতে পারে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র মঙ্গলবার বলেন, ‘‘থার্মোকল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ। থার্মোকল পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। স্বাভাবিক উপায়ে মাটিতে মিশে যায় না।’’

থার্মোকলের উপরে এই নিষেধাজ্ঞায় এ বার কুমোরপাড়ায় শোলার খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শিল্পীদের বড় অংশ। কিন্তু তাঁরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে শোলার চাষ কম হচ্ছে। কারণ, চাহিদা তেমন নেই। দামও বেশি। কুমোরটুলির শিল্পী সুবল পালের কথায়, ‘‘পুলিশ থার্মোকলের ব্যবহার বন্ধ করতে বলায় এখন বেশি দাম দিয়ে শোলা কিনতে বাধ্য হচ্ছি। আমার বেশ কিছু প্রতিমা শোলার তৈরি সরঞ্জামে সেজেছে।’’ আর এক শিল্পী সুজিত পালের কথায়, ‘‘আগে তো শোলা দিয়েই প্রতিমা সাজানো হত। পরে শোলার বিকল্প হিসাবে থার্মোকল এল। এখন পুলিশি নির্দেশে ফের শোলার খোঁজ করতে শুরু করেছি।’’ কুমোরটুলি পাড়ার শোলাশিল্পী শম্ভুনাথ মালাকারের কথায়, ‘‘শোলার জোগান নেই। খুব কষ্ট করে শোলা কিনি। আগে কলকাতার আশপাশের জলাজমিতে শোলার চাষ হত। এখন জলাজমি বুজে বহুতল উঠছে। শোলা পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠেছে।’’ ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতি’র যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার বলছেন, ‘‘শোলা ফিরে এলে তো ভালই হয়। কিন্তু শোলার চাষ তেমন হয় না। জলাজমি বুজে নির্মাণকাজ হচ্ছে। সরকার শোলা চাষে আগ্রহ বাড়াতে সচেষ্ট হোক।’’

এ রাজ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুরে শোলার চাষ বেশি হয়। সেখান থেকেই কুমোরটুলিতে শোলা সরবরাহ করা হয়। ওই এলাকার শোলা চাষি খোকন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘দিনকয়েক হল, কুমোরটুলি থেকে হঠাৎ করেই শোলার অর্ডার বেশি আসছে।’’ রাজারহাটের শোলা চাষি আসগর আলি মণ্ডল বললেন, ‘‘গত কুড়ি দিনে কুমোরটুলি থেকে শোলার বায়না বেড়েছে।’’

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে থার্মোকলের পাশাপাশি এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের জিনিসের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, বিতরণ, বিক্রি এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের পর্যবেক্ষণ, ‘‘থার্মোকল পচনশীল নয়। তাই পরিবেশ-বান্ধব নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও বিয়েবাড়িতে থার্মোকলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় তা পরিবেশ দূষণের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গা প্রতিমার সজ্জায় থার্মোকলের বিকল্প হিসাবে শোলা কী ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারকে ভাবতে হবে।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যানের মতে, ‘‘প্রতিমার সাজে শোলার ব্যবহার তো ভালই। এটি পরিবেশবান্ধবও।’’

পুলিশ জানিয়েছে, থার্মোকল নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও এ রাজ্যের প্রতিমা শিল্পীরা তা ব্যবহার করছিলেন। গত বছরেও জনাকয়েক শিল্পীকে এর জন্য জরিমানা করেছিল পুলিশ। তা সত্ত্বেও থার্মোকলের ব্যবহার না কমায় এ মাসের শুরুতে পুলিশ এসে শিল্পীদের সতর্ক করেছিল। যদিও কুমোরটুলির শিল্পীদের অভিমত, ‘‘সরকার তথা পুলিশের তরফে যদি আরও আগে থেকে পরিবেশের উপরে থার্মোকলের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচার করা হত, তা হলে ভাল হত। কারণ, অধিকাংশ শিল্পীই প্রতিমার সাজে থার্মোকল ব্যবহার করেছিলেন।’’ ‘কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতি’র যুগ্ম সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘আগামী বছর শিল্পীরা থার্মোকলের পরিবর্তে শোলার সাজ ব্যবহারে উদ্যোগী হবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kumartuli Thermocol

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy