Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আগুন জ্বেলে রান্না নীলরতনের পাশে

কলকাতা পুরসভা সম্প্রতি শহর জুড়ে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ছাউনি খুলে ফেলতে উদ্যোগী হলেও শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতুর গায়ে ফুটপাতে ব্যবসা চালানো হোটেল-মালিকদের কোনও হেলদোল নেই।

 অনিয়ম: পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে হাসপাতালের পাশেই চলছে রান্না। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অনিয়ম: পলিথিনের ছাউনি টাঙিয়ে হাসপাতালের পাশেই চলছে রান্না। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

পাঁচিলের এ পারে নীচের তলায় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। উপরের বিভিন্ন তলে একাধিক পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড। আর পাঁচিলের ঠিক ও পারেই দেওয়াল ঘেঁষে চলছে আগুন জ্বালিয়ে রান্না। উপরে পলিথিনের ছাউনি। তা বাঁধা রয়েছে হাসপাতালের পাঁচিলের সঙ্গেই। ওই পলিথিনে এক বার আগুন লাগলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে হাসপাতালের ভিতরেও। পুলিশ, পুর প্রশাসন বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ— এই দৃশ্য সকলেই দেখছেন বছরের পর বছর। কিন্তু কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।

কলকাতা পুরসভা সম্প্রতি শহর জুড়ে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ছাউনি খুলে ফেলতে উদ্যোগী হলেও শিয়ালদহের বিদ্যাপতি সেতুর গায়ে ফুটপাতে ব্যবসা চালানো হোটেল-মালিকদের কোনও হেলদোল নেই। তাঁরা বলছেন, ‘‘এখানে আমরা অনেক দিন ধরে ব্যবসা চালাচ্ছি। সব সময়ে সতর্ক থাকি। কিছু হবে না।’’ তবে ওই সমস্ত দোকানে যাঁরা ভাত খেতে আসেন, তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভয় যে করে, সে কথা সত্যি। তবে হাসপাতালে থাকতে হলে খেতে তো হবেই। এত কাছে হোটেল থাকায় সুবিধাও হয়। আগুন লাগার আতঙ্কে অবশ্য তাঁরাও ভোগেন। এমনই এক জন বললেন, ‘‘এটা যাঁদের দেখার কথা, তাঁরা যদি না দেখেন, আমরা কী-ই বা করতে পারি?’’

বিষয়টি যে রীতিমতো আশঙ্কার, তা ওই তল্লাটে গেলেই মালুম হবে।

এক দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, হাসপাতালের পাঁচিল থেকে পলিথিনের ছাউনি টাঙানো হয়েছে সেতুর রেলিং পর্যন্ত। তার নীচে সার দিয়ে পরপর বেশ কয়েকটি হোটেল। প্রতিটিতেই জ্বলছে আগুন। কোথাও চাপানো রয়েছে বড় বড় কড়াই, ভাতের হাঁড়ি। চিৎকার করে বলা হচ্ছে, ‘গরম গরম মাছ-ভাত খান।’ ফুটপাতের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ আটকে রাখা হয়েছে জ্বলন্ত স্টোভ। সেখানেই বঁটিতে কাটা হচ্ছে আনাজ আর মাছ। ওই ফুটপাতেই আবার লাগানো রয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল। রান্না, খাওয়া সবই সেখানে। তার মধ্যেই সেখান দিয়ে যাতায়াত করছেন শিয়ালদহে আসা বাস ও ট্রেনের যাত্রীরা। সেটাই তাঁদের যাতায়াতের একমাত্র পথ। তাই সব সময়ে ভিড়ে ঠাসা ওই ফুটপাত।

এ তো গেল পাঁচিলের এ পারের দৃশ্য। ও পারে হাসপাতাল ভবনের এসি মেশিনে লাগছে আগুনের তাপ। ধোঁয়ার আঁচ। সেখানকার এক নিরাপত্তারক্ষীর কথায়, ‘‘যদি আগুন ধরে যায় পলিথিনে? সব সময়ে সেই আতঙ্কে থাকি। উপরে তো অনেক রোগী।’’

এ সব তো পুরসভার নজরে থাকার কথা। তা হলে ওই দোকানগুলি চলছে কী ভাবে? পুরসভার এক অফিসারের কথায়, ‘‘এ সব নতুন কিছু নয়। অনেক দিন ধরেই চলছে। শাসক দলের নেতাদের সহায়তা না পেলে কিছুই করা যায় না।’’ যদিও সম্প্রতি গড়িয়াহাটের ঘটনার পরে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কড়া নিদান, ‘‘মানুষের সুরক্ষার কথা ভেবে শহরের ফুটপাত ও রাস্তায় থাকা পলিথিনের ছাউনি সরানো হবে। সেখানে কোনও বাধা মানা হবে না।’’ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন জায়গায় হকারদের জন্য পুরসভা স্টল বানিয়ে দেবে।

যে হাসপাতালের দেওয়াল ঘেঁষে চলছে এই বিপজ্জনক ব্যবসা, কী ভাবছেন সেখানকার কর্তারা? হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দ্বৈপায়ন বিশ্বাস বলেন, ‘‘জায়গাটা হাসপাতালের বাইরে হওয়ায় আমাদের এক্তিয়ারেরও বাইরে। তাই কিছু করা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire NRS Hospital Hotel KMC Firhad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE