Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নিকির স্মৃতিতে শ্বেতপাথরের ফলক, খুশি বন্ধু অ্যানি

বেহালার শকুন্তলা পার্কের দুই আলাদা বাড়ির বাসিন্দা, ল্যাব্রাডর নিকি এবং সেন্ট বার্নার্ড অ্যানির সেই প্রথম দেখা। তাদের সে দিনের হঠাৎ পরিচয় অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বে বদলে যায় কয়েক মাসেই।

স্মরণ: বাখরাহাটের সমাধিতে সেই ফলক। নিজস্ব চিত্র

স্মরণ: বাখরাহাটের সমাধিতে সেই ফলক। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

এক জন গলা জলে হাবুডুবু খাচ্ছে। অন্য জন পাড়ে দাঁড়িয়ে চিল-চিৎকার করে চলেছে।নিকি-র সেই চিৎকার শুনে সকলের চোখ যখন তার দিকে গিয়ে পড়ে, তখন দেখা যায় অ্যানি গলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছে। নিজে জলে না ঝাঁপালেও অ্যানিকে বাঁচানোর জন্য জলের কাছে দাঁড়িয়ে আপ্রাণ চেঁচিয়ে চলেছে নিকি। যাঁরা সে দিন অ্যানিকে জল থেকে উদ্ধার করেছিলেন, পরে তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘উফ! এক জনকে বাঁচাতে আরেক জনের কী আকুতি! দু’টি পোষ্যের অভিব্যক্তি বিনিময়ের সে দৃশ্য ভোলার নয়।’’

বেহালার শকুন্তলা পার্কের দুই আলাদা বাড়ির বাসিন্দা, ল্যাব্রাডর নিকি এবং সেন্ট বার্নার্ড অ্যানির সেই প্রথম দেখা। তাদের সে দিনের হঠাৎ পরিচয় অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বে

বদলে যায় কয়েক মাসেই। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, প্রায়শ তাদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখা যেত এলাকায়। তারা যাতে একসঙ্গে অনেকটা সময় কাটাতে পারে সে জন্য মালিকেরা একে অপরের বাড়িতে তাদের পৌঁছে দিতেন। গত ২২ জানুয়ারি সরস্বতী পুজোর দিন হঠাৎ ছন্দপতন। জ্বরে মৃত্যু হয় নিকির। তার পর থেকে বন্ধুর শোকে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছে অ্যানি।

একা অ্যানি নয়। নিকির জন্য শোকাহত বাড়ির প্রত্যেকে। প্রিয় পোষ্যের স্মৃতিতে শ্বেত পাথরের ফলক তৈরি করিয়েছেন তাঁরা। পায়েল দাস নামে ওই বাড়ির এক সদস্য জানান, ফলকটি বসানো হয়েছে বাখরাহাটে নিকির সমাধিক্ষেত্র করুণাকুঞ্জে। ফলকটি বসানোর আগে নাকি সেটি দেখানো হয়েছিল অ্যানিকে। পায়েলের কথায়, ‘‘প্রিয় বন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে সে জিভ দিয়ে চেটে সাফ করে দিয়েছে ফলকটি।’’

হঠাৎ ফলক তৈরির উদ্যোগ কেন? পায়েল জানান, আগামী এপ্রিলে নিকির চার বছর পূর্ণ হতো। সরস্বতী পুজোর দিন হঠাৎ জ্বর। বাড়িতে চিকিৎসক এসেও বাঁচাতে পারেননি। তাঁর মা বন্দনাদেবীর কাছেও নিকি ছিল মেয়ের মতোই। নিকির মৃত্যুর পরে ঠিক হয় করুণাকুঞ্জে তাকে সমাধিস্থ করা হবে। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন সমাধিক্ষেত্রে নানা ধরনের ফলক লাগানো। বন্দনাদেবীরাও ঠিক করেন, নিকির জন্য তাঁরাও স্মৃতিফলক বানাবেন।

প্রথমে ঠিক হয় একটি ফলক বাড়ির কাছে, একটি ফলক সমাধিক্ষেত্রে বসানো হবে। পায়েল চাকরি করেন লালবাজার এলাকায়। তিনিই ফলক তৈরির দোকান

খুঁজে বার করেন। গত জানুয়ারিতে বরাত দিলেও ফলক হাতে পেতে ফেব্রুয়ারি হয়ে যায়। ঠিক হয়, এই ফলকটি আপাতত সমাধিক্ষেত্রেই বসানো হবে। পরে নিকির জন্মদিনে পা়ড়ায় একটি ফলক বসানো হবে। সেই মতো গত রবিবার ফলক বসে সমাধিক্ষেত্রে। বন্দনাদেবী বলেন, ‘‘কত লোক তাঁদের ছেলে-মেয়ের জন্য কত কিছু করেন। আমি ফলক বানিয়েছি। মানুষের ফলক হলে আমার নিকির হবে না কেন?’’

আর অ্যানি! সে প্রিয় বন্ধুর খোঁজে মাঝে মধ্যে ঘুরে যায় বন্দনাদেবীদের বারান্দার সামনে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

St. Bernard Marbel plate Labrador
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE