Advertisement
E-Paper

নিমেষে ধ্বংসস্তূপ বাজার, মৃত দুই

রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ বাজারের ভিতরে হঠাৎ আগুন দেখতে পান কয়েক জন। প্রত্যক্ষদর্শী নিমাই চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রথমে বাজারের এক দিকে চাল-মুড়ির দোকান থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। তখনই দমদম থানায় খবর দেওয়া হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫২
তখনও চলছে অগ্নিযুদ্ধ। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে

তখনও চলছে অগ্নিযুদ্ধ। সোমবার। ছবি: শৌভিক দে

মধ্যরাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কবলে এ বার দমদমের গোরাবাজার। রবিবারের এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আগুনে পুড়ে গিয়েছে প্রায় ২৫০ দোকান। পুড়ে গিয়েছে বহু মুরগি, পায়রাও। রাতে ওই আগুন ছড়িয়েছিল
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখাতেও। যদিও ব্যাঙ্কের ভল্ট ও লকার অক্ষত বলেই পুলিশকে জানিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দফায় দফায় ঘটনাস্থলে যায় দমকলের ২২টি ইঞ্জিন। মাঝরাত থেকে শুরু হওয়া লড়াই চলে সোমবার দুপুর পর্যন্ত। দমকলের প্রাথমিক অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই লেগেছে আগুন। তবে দমকল দেরিতে কাজ শুরু করায় ক্ষয়-ক্ষতি বেড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাজারের ব্যবসায়ী থেকে স্থানীয় মানুষ।

রবিবার রাত দেড়টা নাগাদ বাজারের ভিতরে হঠাৎ আগুন দেখতে পান কয়েক জন। প্রত্যক্ষদর্শী নিমাই চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রথমে বাজারের এক দিকে চাল-মুড়ির দোকান থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। তখনই দমদম থানায় খবর দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে চালপট্টি থেকে মাছ বাজার-সহ ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও আনাজের দোকানগুলিতে। কিছু ক্ষণেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় কয়েকশো দোকান। পুলিশ জানিয়েছে, দোকানের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে যে দু’জন মারা গিয়েছেন সুনীল দাস (৪৫) ও ভিকি কুমার সিংহ (২১)। দু’জনেই বাজারে কাজ করতেন। পুলিশের ধারণা, আগুন ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা বেরিয়ে আসতে পারেননি। মৃতদের এক জনের বাড়ি ওড়িশায়, অন্য জন বিহারের বাসিন্দা। নূর মহম্মদ নামে আর এক দোকান কর্মচারীরও খোঁজ মিলছে না।

বাজার সমিতির অন্যতম কর্তা দেবাশিস দত্ত বলেন, ‘‘দমকল যদি সঠিক সময়ে পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারত, তা হলেও বাজারের বেশ কিছু দোকান বাঁচানো যেত।’’ খবর পাওয়ার অনেক পরে দমকল এসেছে বলেও তাঁর অভিযোগ। অভিযোগ অস্বীকার করে দমকলের উপ-অধিকর্তা সমীর চৌধুরী বলেন, সরু রাস্তা তার সঙ্গে জলের কিছুটা অভাবের কারণে আগুনের সঙ্গে লড়াই করতে তাঁদের প্রথম দিকে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। সংস্কারের কাজ চলায় বাজারের পাশেই ধোপা পুকুরের জল তুলে ফেলা হয়েছে। একটু দূরের পুকুর থেকে জল ভরে নিয়ে এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না বলেও পাল্টা অভিযোগ দমকলের।

সোমবার সকালে গোরাবাজারে গিয়ে দেখা গেল, সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে পুড়ে যাওয়া চাল, ডিম, আনাজ, মাছ। চার দিক তখনও ধোঁয়ায় ভরে। মাথায় হাত দিয়ে পোড়া দোকানের সামনে বসে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারও চোখ ছলছল, কারও বা পরিজনেরা এসে ভস্মীভূত দোকানের সামনে হাউ-হাউ করে কাঁদছেন। আবার কবে বাজার চালু হবে, তা নিয়েই সংশয়ে অনেকে।

দমদমের পুরনো বাজারগুলির মধ্যে গোরাবাজার অন্যতম। বাজারে কমবেশি ৩৫০টি দোকান রয়েছে। কয়েক হাজার পরিবারের জীবন-জীবিকা এই বাজারের উপরে নির্ভরশীল। মূল বাজার ছাড়াও অলিগলির মধ্যে দু’-পাশে দোকানের সারি। বাজারের গা ঘেঁষে পরপর বহুতল বাজার। বাজারে প্রবেশের জন্য ছোট বড় প্রায় ৮-৯টি পথ রয়েছে। তবে দমকলের একেবারে ছোট গাড়ি ঢোকার মতো পথ নেই। বাজারের বাইরে দু’টি বড় রাস্তা থাকলেও ভীষণ ঘিঞ্জি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগেও বাজারে
আগুন লাগলেও কারওর হুঁশ ফেরেনি। এ দিন বাজারের ভিতরে দেখা গিয়েছে, কোথাও ন্যূনতম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছু নেই। অপরিকল্পিত ভাবে তারের ঝুড়ি সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। মিটার বক্সের ঘরও দেখে বোঝা যায় ওয়্যারিং নিয়ে কতখানি অবহেলা করা হয়েছে এত দিন ধরে।

বাজারের ডিম ব্যবসায়ী প্রদীপ দত্ত বললেন, ‘‘বহু কষ্টে ডিমের দোকানটাকে দাঁড় করিয়েছিলাম। সামান্য কিছু বাঁচাতে পেরেছি। বাকি সব আগুনেই শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ টাকা জমিয়ে নিজের দোকানটা সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন মাছ ব্যবসায়ী আনন্দ সাহা। আগুনে শুধু দোকান নয়, মজুত করা কয়েক হাজার টাকার মাছও তাঁর পুড়ে গিয়েছে তাঁর।

আগুন লাগার খবর পেয়ে রাতেই বাজারে চলে আসেন দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহ। তিনি জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের পাশে পুরসভা থাকবে। কত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজার চালু করা যায় সে চেষ্টা করা হবে।

ক্ষয়-ক্ষতির হিসেব বুঝতে আজ, মঙ্গলবার দমদম পুরসভায় পুলিশ-প্রশাসন, বাজার কমিটি ও পুরসভাকে নিয়ে বৈঠকে বসবেন স্থানীয় বিধায়ক ব্রাত্য বসু। বিধায়ক ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে এই বাজার চলছে। বাম আমল থেকে এই বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বলতে কিছু ছিল না। আমাদের আমলে হচ্ছে।’’

fire fire accident Dum Dum gorabazar Dumdum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy