Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মেট্রোয় চড়া তো নয়, যেন হাঁটুর পরীক্ষা

এ দিন চাঁদনি চকে ৮৫টি সিঁড়ি ভেঙে বেরিয়ে প্রায় কেঁদেই ফেললেন এক বৃদ্ধা। দমদম স্টেশনে ঢোকার সময়েও ভাঙতে হয়েছিল প্রায় ৯০টি সিঁড়ি। তাঁকে পিছন থেকে যিনি সাহায্য করছিলেন, তাঁর বয়সও ৮০ ছুঁইছুঁই।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০১:০৫
Share: Save:

‘‘হাঁটুর জোর থাকলে তবেই মেট্রো চড়ুন! নইলে নয়।’’

রবিবার দুপুরে এমন কথাই শোনা গেল তিতিবিরক্ত এক যাত্রীর মুখে। পাশ থেকে অন্য এক ক্ষুব্ধ যাত্রীর টিপ্পনি, ‘‘লোকাল ট্রেনে চড়তে গেলে এখন অনেকটা লাফ দেওয়া জানতে হবে। আর মেট্রোতে শিখতে হবে সিঁড়ি ভাঙা।’’

ঘটনাস্থল চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন। কয়েক সপ্তাহ আগেই এই স্টেশনের একটি চলমান সিঁড়ি বন্ধ ছিল প্রায় এক মাস। রবিবার সকাল থেকে সেই সিঁড়িটি ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও রাতে সেটি চালু হয় বলে সূত্রের খবর।

এ দিন চাঁদনি চকে ৮৫টি সিঁড়ি ভেঙে বেরিয়ে প্রায় কেঁদেই ফেললেন এক বৃদ্ধা। দমদম স্টেশনে ঢোকার সময়েও ভাঙতে হয়েছিল প্রায় ৯০টি সিঁড়ি। তাঁকে পিছন থেকে যিনি সাহায্য করছিলেন, তাঁর বয়সও ৮০ ছুঁইছুঁই। স্ত্রীর ওই অবস্থা দেখে তিনি আর নিজের কষ্ট মুখ ফুটে বলতে চাননি। তবে দীর্ঘ সময় নিয়ে উপরে উঠে রীতিমতো হাঁপাচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধও।

মাসখানেক ধরেই বন্ধ পড়ে রয়েছে দমদম স্টেশনের চলমান সিঁড়িটিও। মেট্রো কর্তৃপক্ষই স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার সেঁটে যাত্রীদের জানিয়েছিলেন, ‘‘সিঁড়ি চালু করা হবে ১৪ অগস্ট।’’ কিন্তু তার পরেও কেটে গিয়েছে প্রায় ১৫ দিন। চালু করা তো দূর অস্ত্‌। চলমান সিঁড়িটি সেই খোলা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। মেট্রোর এক কর্তা অবশ্য জানান, ‘‘দমদম স্টেশনের চলমান সিঁড়ির তলায় জল জমে গিয়েছিল। তাই সমস্যা হয়েছে। শীঘ্রই ঠিক করে দেওয়া হবে।’’
ওই কর্তারা যাই বলুন না কেন, যাত্রীদের বক্তব্য, ওই সিঁড়িতে কোনও কাজই হচ্ছে না। সব খোলা অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে।

দিনের পর দিন দমদমের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রান্তিক স্টেশনে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা থেকে শুরু করে হাজার হাজার যাত্রী এ ভাবে কষ্ট করেই কোনও মতে প্ল্যাটফর্মে উঠছেন। কিন্তু মেট্রো কতৃর্পক্ষের তাতে কোনও হেলদোল নেই। উল্টে রবিবার এর সঙ্গে যুক্ত হল চাঁদনি চকের সিঁড়িটিও। ফলে যাঁরা এ দিন দমদম থেকে মেট্রো চড়ে চাঁদনি চকে নেমেছেন, তাঁরা চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

কয়েক মাস আগে কবি সুভাষ স্টেশনের একটি চলমান সিঁড়ি মাঝপথ থেকে উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। পড়ে গিয়ে জখম হন বেশ কয়েক জন যাত্রী। এর পরেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রতিটি চলমান সিঁড়ি নিয়মিত পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার পর থেকেই চলমান সিঁড়িগুলি একে একে বন্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুলিকে ফের সচল অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে যা সময় নেওয়া হচ্ছে, তাতেই মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।

সময় মতো কেন সারানো যাচ্ছে না সিঁড়িগুলি? মেট্রো কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘ওই সব সিঁড়ির যন্ত্রাংশের মান ভাল না হওয়ায় এই অবস্থা।’’ তাঁরা বলছেন, গোড়াতেই গলদ। যে সংস্থা সিঁড়ি সরবরাহ করেছিল, তারা আর মেরামতির দায়িত্ব নিতে চাইছে না। ফলে অন্য ঠিকাদার সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ওই সংস্থা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, তা দেখার লোক কই? তাঁদের অভিযোগ, কোনও কর্তারই যাত্রীদের পরিষেবা দেওয়া নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। জোড়াতালি দিয়ে কোনও মতে ট্রেন চালাতে পারলেই হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

escalator metro station Kolkata metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE