E-Paper

নয়া পথের জন্য দেদার বদলি, তীব্র কর্মী-সঙ্কটে মেট্রো

নতুন মেট্রোপথগুলি জুড়ে গেলে যাত্রীদের চাপ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আঁচ করেই শিউরে উঠছেন সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ০৯:৪৯
যাত্রীদের সিংহভাগই যাতায়াত করবেন উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়।

যাত্রীদের সিংহভাগই যাতায়াত করবেন উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়। —প্রতীকী চিত্র।

শহরে নতুন তিনটি মেট্রোপথ চালু হলে প্রায় তিন লক্ষ যাত্রী বাড়তে পারে। আপাতত সেই যাত্রীদের সিংহভাগই যাতায়াত করবেন উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়। নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর মেট্রোর কারণে দৈনিক আরও অন্তত ১৫ হাজার যাত্রী বাড়তে পারে উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়। শুধু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোতেই দু’লক্ষ যাত্রী বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। একই ভাবে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোয় বাড়তে পারে লক্ষাধিক যাত্রী। কিন্তু এখন প্রশ্ন, এই বিপুল সংখ্যক যাত্রীর চাপ সামলানোর মতো কর্মী মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে রয়েছেন কি? মেট্রোর অন্দরেই এ নিয়ে চিন্তা দানা বেঁধেছে।কর্তৃপক্ষ নতুন মেট্রোপথের উদ্বোধনকে শহরের জন্য পুজোর উপহার হিসাবে তুলে ধরছেন। মেট্রোয় ইতিমধ্যেই পুজোর বাজারের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। এর পরে নতুন মেট্রোপথগুলি জুড়ে গেলে যাত্রীদের চাপ কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা আঁচ করেই শিউরে উঠছেন সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন।

নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর মেট্রোর চারটি স্টেশন পরিচালনার জন্য শহরের অন্যান্য মেট্রো থেকে আগেই ২৭ জন আধিকারিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে দু’দফায় রুবি-বেলেঘাটা এবং নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনের জন্য আরও প্রায় ৪০ জনকে বদলি করা হয়েছে। ওই কর্মীদের বদলি করার পরে উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনে কর্মী-সংখ্যা তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড স্টেশন দু’টি শিফট মিলিয়ে জনা আটেক কর্মীর ভরসায় চলছে।এসপ্লানেড-শিয়ালদহ মেট্রোপথ জুড়ে গেলে দুই স্টেশনেই যাত্রীর চাপ বাড়বে। শিয়ালদহ স্টেশনে এক লক্ষ যাত্রী বাড়তে পারে। দুই শিফট মিলিয়ে ওই স্টেশন চলছে সাকুল্যে ১৮ জন কর্মীর ভরসায়।

একই অবস্থা উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে। বহু স্টেশনে কেউ অসুস্থ হলে ছুটি দেওয়ার মতো কর্মীও নেই বলে অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মীদের বাণিজ্যিক কাজের দায়িত্ব সামলাতে বলা হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে ট্র্যাফিক অ্যাসিস্ট্যান্টদের নামমাত্র প্রশিক্ষণে স্টেশন সামলানোর সাময়িক দায়িত্বও দেওয়া হচ্ছে।

মেট্রোর প্রগতিশীল কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শুভাশিস সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘একটি মেট্রোপথের কর্মী দিয়ে চারটি পথের পরিষেবা চালানো সম্ভব নয়। জোড়াতালি দিয়ে পরিষেবা দিতে গিয়ে সমস্যা হলে মেট্রোকর্মীদের যাত্রীদের কাছে গালমন্দ শুনতে হয়। কারণ, তাঁরাই সামনে থাকেন। কর্তারা কেউ সেখানে থাকেন না।’’ মেট্রোয় চালক এবং কর্মীর আকাল ঘোচাতে সমস্যার কথা রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে তাঁরা জানিয়েছেন বলে খবর। মেট্রোর স্বীকৃত মেট্রো রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের নেতৃত্বও কর্মী-সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মেট্রো সূত্রের খবর, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় সেক্টর ফাইভ এবং হাওড়া ময়দানের মধ্যে সারা দিনে ১৮৬টি ট্রেন চলবে। পরিষেবা চালু থাকবে রবিবারেও। নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর পথে সারা দিনে ১২০টি ট্রেন চলবে। নিউ গড়িয়া-বেলেঘাটা পথে চলবে ৬০টি ট্রেন। ওই মেট্রো বাইপাস সংলগ্ন বিভিন্ন হাসপাতালে যাত্রীদের পৌঁছতে সাহায্য করবে বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের। যদিও উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর কবি সুভাষ স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রুবি থেকে নিউ গড়িয়া পথে দৈনিক যাত্রীর সংখ্যা হাজার দেড়েকে এসে ঠেকেছে। ওই মেট্রোর নতুন স্টেশনগুলিতে কর্মীদের বদলি নিয়ে মেট্রোর অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে।

বরং পুজোর আগে উত্তর-দক্ষিণ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উপরেই বেশি জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে মত আধিকারিকদের একাংশের। তাঁদের মতে, মেট্রোর আয়ের বড় অংশ আসবে সেখান থেকেই।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Metro Railways Kolkata Metro

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy