Advertisement
২১ মে ২০২৪
Mocambo

সঙ্গীর পোশাক নোংরা বলে মহিলাকে ঢুকতেই দিল না পার্ক স্ট্রিটের মোকাম্বো

এক সপ্তাহের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা দিলাশি হেমনানি। ফিরে যাওয়ার আগের রাতে গাড়িচালককে নিয়ে তিনি নৈশভোজে গিয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ মোকাম্বোয়। কিন্তু, রেস্তোরাঁয় ঢোকার জন্য গাড়িচালকের পোশাক ‘মানানসই’ নয়।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১৮:৩৯
Share: Save:

এক সপ্তাহের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন ভিন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা দিলাশি হেমনানি। ফিরে যাওয়ার আগের রাতে গাড়িচালককে নিয়ে তিনি নৈশভোজে গিয়েছিলেন পার্ক স্ট্রিটের জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ মোকাম্বোয়। কিন্তু, রেস্তোরাঁয় ঢোকার জন্য গাড়িচালকের পোশাক ‘মানানসই’ নয়। তাই দরজা থেকেই তাঁদের অপমান করে ফিরিয়ে দেয় মোকাম্বোর কর্মীরা। বাড়ি ফিরে ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা লেখেন দিলাশি। শনিবার রাতের সেই পোস্ট এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার শেয়ার হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে ‘বয়কট মোকাম্বো’ প্রতিবাদও। এ দিন মোকাম্বো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরাও মেনে নিয়েছেন এই অভিযোগ। তাদের দাবি, ‘‘ওর পোশাক নোংরা ছিল। অন্য কাস্টমাররা আপত্তি করতে পারতেন। তাই আমরা ঢুকতে দিইনি।’’

দিলাশি ওই পোস্টে লিখেছেন—

এ ভাবে মনুষ্যত্ব হারিয়েছি আমরা?

গত রাত কলকাতায় আমার শেষ দিন ছিল। ভাবলাম পার্ক স্ট্রিটের বিখ্যাত রেস্তোরাঁ মোকাম্বোতে খেতে যাব। কলকাতায় এক সপ্তাহ ছিলাম। ড্রাইভার মণীশ ভাইয়া দারুণ কাজ করেছেন আমার জন্য। গতকাল দুপুরেও আমার জন্য লাঞ্চ করা হয়নি ওঁর। খুব খারাপ লাগছিল আমার। তাই ঠিক করি রাতে ওঁকে নিয়ে ডিনারে যাব।

সেই মতো রাত আটটা চল্লিশ নাগাদ মোকাম্বো পৌঁছই। অনুরোধ করি দু’জনের জন্য একটা টেবল দিতে।

কর্মচারী: ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে।

আমি: (মোকাম্বোতে খাওয়ার ইচ্ছা আমার বহুদিনের। তাই খুশি হয়ে রাজি হয়ে গেলাম।)

এর মধ্যেই ওই কর্মচারীর চোখ পড়েছে মনীশ ভাইয়ার দিকে। আমাকে এগিয়ে এসে জানায় ৪৫ মিনিট সময় লাগবে।

আমি: (একটু অবাক হয়ে) একটু আগেই তো বললেন ১৫ মিনিট লাগবে।

কর্মচারী: হ্যাঁ টেবলটা খালি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু ওরা হঠাত্ আরও খাবার অর্ডার করেছেন।

আমি: (কাচের দেওয়ালের ভিতরে একটু উঁকি মেরে) কিন্তু আমি তো কয়েকটা খালি টেবল দেখতে পাচ্ছি।

কর্মচারী: ওগুলো সব চার জনের টেবল। আজ শুক্রবার…ওই টেবল দিতে পারব না।

আমি: আচ্ছা।

১০-১৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখলাম আমার পরে এসেও আগে টেবল পেয়ে যাচ্ছেন অন্যেরা।

আমি: আমাকে টেবল দিচ্ছেন না কেন?

কর্মচারী: আপনাকে টেবল দিতে পারব না আমরা।

আমি: কিন্তু কেন?

কর্মচারী: আপনি কার সঙ্গে রয়েছেন?

আমি: (মণীশ ভাইয়াকে অবাক হয়ে দেখাই)

কর্মচারী: আহহহ….উনি ঠিকঠাক পোশাক পরেননি।

আমি: (উনি পরিষ্কার জামা-কাপড় পরেছিলেন। ক্রিম ট্রাউজারের ওপর শার্ট…পায়ে চটি) আপনাদের ড্রেস কোড কী?

কর্মচারী: আমাদের কোনও ড্রেস কোড নেই।

আমি: তা হলে??

কর্মচারী: দেখুন এটা তো ফাইন ডাইন রেস্তোরাঁ, আমরা এই পোশাকে ঢুকতে দিতে পারি না।

আমি: (রেগে গিয়ে)ওঁর পোশাক নিয়ে কী সমস্যা আপনাদের?

কথাবার্তা ইংরেজিতে চললেও মণীশ ভাইয়া কিছুটা আন্দাজ করেছিলেন। আমাকে বললেন, ‘‘দিদি হম নহি খায়েঙ্গে, আপ খানা খা লিজিয়ে না।’’

আমি: আপনারদের ম্যানেজারকে ডাকুন কথা বলব।

কর্মচারী গিয়ে এক জনকে ডেকে আনেন।

আমি: স্যর, উনি কেন আসতে পারবেন না ভিতরে?

কর্মচারী: কারণ উনি মদ্যপ অবস্থায় রয়েছেন।

আমি: (রেগে) আপনি কী ভাবে জানলেন?

কর্মচারী: আমার সহকর্মী জানিয়েছেন।

আমি: কীসের ভিত্তিতে এই সব কথা বলছেন আপনি? আপনার সামনে উনি মদ্যপান করেছেন? সকাল ৮টা থেকে উনি গাড়ি চালাচ্ছেন। খাবারও খাননি।

কর্মচারী: কিন্তু আমি জাননি উনি মদ্যপ।

আমি: প্রমাণ করুন। আপনার নাম কী?

কর্মচারী: আপনাকে আমি আমার নাম বলতে পারবো না।

আমি: কেন?

কর্মচারী: না না আমি আপনাকে ওঁকে নিয়ে ভিতরে আসতে দিতে পারব না।

আমি: আমি আপনার রেস্তোরাঁয় খেতে চাই না।

আমি জীবনে অনেক দিন পর মণীশ ভাইয়ার মতো কোনও মানুষ দেখলাম। যে দিন আমার সঙ্গে দেখা হয়েছে, সে দিন থেকে উনি দরদ দিয়ে নিজের দায়িত্ব সামলেছেন। ১২ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে প্রতি দিন উনি ২৭৫ টাকা করে পান। এর অর্ধেক টাকা উনি বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। জীবনে অনেক কষ্ট রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সারা দিন উনি হাসিখুশি থাকেন। অনেক ‘ভদ্রলোক’-এর থেকে উনি অনেক বেশি দরদী মানুষ।

পার্ক স্ট্রিটের মোকাম্বোর মতো রেস্তোরাঁগুলোকে জানাচ্ছি, তোমরা মানুষকে মানুষ মনে করো না। আইফোন না থাকলে, ইংরেজি না জানলে তোমরা তাদের ভদ্রলোক মনে করো না। মণীশ ভাইয়ার মতো এক জন বড় মনের মানুষ তোমাদের রেস্তোরাঁয় বসে খাবেন সেই সৌভাগ্য তোমাদের নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mocambo Park Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE