সাবধানি: ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের মরসুমে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোচ্ছেন ফুটপাতবাসীরা। ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
টালিনালার দু’পাশে অসংখ্য ছোট ছোট গর্ত। আর সেই গর্তে জমা জলেই আস্তানা গেড়েছে মশার লার্ভা। টালিনালার পাড়ে পড়ে থাকা ডাবের খোলা, চায়ের ভাঁড়ও মশার বংশবিস্তার করার জায়গা। ডেঙ্গির মরসুমে মশার লার্ভার উৎসের খোঁজ পেতে ড্রোনের সাহায্য নিচ্ছে কলকাতা পুরসভা। আর সোমবার টালিনালা সংলগ্ন এলাকায় ড্রোন ওড়াতেই নজরে এসেছে এই ছবিটাই।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, টালিনালার দু’পাশ বরাবর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। সপ্তাহ দুয়েক আগে মেয়র ফিরহাদ হাকিমও বলেছিলেন, ‘‘টালিনালার দু’পাশে ভাল করে দেখা হবে, কোথাও মশার লার্ভা রয়েছে কি না। পুরসভা টালিনালার দু’পাশে লার্ভা ধ্বংস করতে যৌথ অভিযানে নামবে।’’ এ দিন ড্রোন উড়তেই দেখা গেল, মেয়রের সেই আশঙ্কাই সত্যি। গর্তের মধ্যে অবাধে বাড়ছে মশার লার্ভা। ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ড্রোন উড়িয়ে টালিনালার দু’পাশে প্রচুর গর্ত দেখা গিয়েছে, যা মশার লার্ভায় ভর্তি। ড্রোনের মাধ্যমেই মশা মারার কাজ শুরু হয়েছে।’’ টালিনালা সংলগ্ন এলাকায় পড়ে থাকা ডাবের খোলা, ভাঁড় সরিয়ে ফেলার কাজও শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
পুজোর মুখে খাস কলকাতায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে চিন্তায় পুর প্রশাসন। বিশেষত ৮১, ৮৩, ১০১, ১০৬, ১০৭, ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডগুলিই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরসভার পরিসংখ্যান বলছে, গত ২৮ অগস্ট পর্যন্ত ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৯, যা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫০! সপ্তাহ দুয়েক আগে সেখানে একই দিনে দুই ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর অরিজিৎ দাসঠাকুর বলেন, ‘‘কয়েক জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন, অনেকে ভর্তিও হচ্ছেন। ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বৃদ্ধিতে প্রতিদিনই পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে।’’ একই ভাবে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডেও বাড়ছে ডেঙ্গি। ২৮ অগস্ট পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৫, যা বর্তমানে দুশোর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত জানান, তাঁর ওয়ার্ডে ফুলবাগান, রবীন্দ্রপল্লি এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, উত্তর কলকাতার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুর রোড, লকগেট রোড, ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের এ কে মহম্মদ সিদ্দিকি লেন, নবাব আবদুল রহমান স্ট্রিট, ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, বেলতলা বস্তি, আহিরীপুকুর ফার্স্ট লেন, ৮৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালীঘাট রোড, কালী টেম্পল রোড, মহিম হালদার স্ট্রিট, নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। ৮১ নম্বর ওয়ার্ডে চলতি বছরের ২৮ অগস্ট পর্যন্ত ৮০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। এই ওয়ার্ডের মণ্ডল টেম্পল লেন, দুর্গাপুর কলোনি, টালিগঞ্জ রোড, চেতলা রোড ও নিউ আলিপুরের বিভিন্ন ব্লকে ডেঙ্গির প্রকোপ বেড়েছে। একই ছবি ৮৮ নম্বর ওয়ার্ডের টালিগঞ্জ রোড এবং বাওয়ালি মণ্ডল রোডের দু’টি বস্তি এলাকারও। ১১৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদেবপুরের ব্যানার্জিপাড়ায় ২৮ অগস্ট পর্যন্ত ৪৬ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে দু’জন মহিলার।
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ কলকাতার ইএম বাইপাস লাগোয়া একাধিক ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। উত্তরের ৩ এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডেও বাড়ছে ডেঙ্গির দাপট। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বেলগাছিয়ার শান্তি কলোনি এলাকায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। ফলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দক্ষিণ ও পূর্ব কলকাতার ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর বরো এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি রয়েছে। ওই সব বরোর ওয়ার্ডগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy