আতঙ্ক: নিজের বাড়িতে সাদাফ। নিজস্ব চিত্র
বাড়ির কাছেই একটি স্কুলে ক্লাস সেভেনে প়়ড়ি। স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষায় আজ ফিজিক্স-এর পেপার ছিল। রোজই আমি আর ভাই একসঙ্গেই স্কুলের জন্য রেডি হই। পাপা ভাই এয়মাসকে মোটরবাইকে করে স্কুলে নিয়ে যায়। আমি স্কুল অবধি রাস্তা হেঁটেই চলে যাই।
আজ তৈরি হতে-হতেই শুনি ভোলা আঙ্কল বাইরে থেকে পাপাকে ডাকল। পাপা তো শুনেই বেরিয়ে গেল। তখনও আঁচ করতে পারিনি, কী ঘটতে চলেছে। আমি পরীক্ষার কথাই ভাবছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট শব্দ শুনি বাইরে থেকে, আর তার সঙ্গে পিসির চিৎকার। সেটা যে গুলির আওয়াজ তা প্রথমে বুঝতে পারিনি।
এমন সময়ে কে এক জন এসে বলল, ‘সাদাফ, তেরি পাপা কো গোলি মার দিয়া!’ আমি, মা, দাদি তখন পড়ি কি মরি করে বাইরে ছুটে এসেছি। দেখি পাপা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে বুক। ভোলা আঙ্কলকে আশপাশে দেখলাম না। কাকা চলে এল প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই। পাপাকে রক্তাক্ত অবস্থায় সবাই হাসপাতালে নিয়ে গেল। একটু বাদে খবর এল, পাপা আর নেই।
আমি শুধু ভাবছি, এটা কী করে হবে? আমার পাপা তো চা খাচ্ছিল। সেই পাপা হঠাৎ মরে যাবে কী করে? একটু আগেই তো ভাইকে বলল, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিতে। পরীক্ষা ছিল বলে আমাকেও তাড়া দিল। পরীক্ষার টেনশন থাকলেও আমি কী একটা মজার কথা বললাম। সবাই হেসে উঠল। পাপাও! রোজকার মতোই একটা সুন্দর সকাল।
তখনও কি জানতাম, পাপার সময় ফুরিয়ে এসেছে! পাপাই তো আমার আর দাদার হিরো! আমাদের সব গল্প, সব আবদার তো পাপার কাছেই। পাপা বলত, কোনও কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না! শুধু মন দিয়ে পড়ালেখা করে যা!
দুপুরে স্কুলের প্রিন্সিপালকে ফোন করে আমি সব জানিয়েছি। উনি খুবই ভালমানুষ! আমায় সান্ত্বনা দিয়েছেন। বলেছেন, কোনও চিন্তা না-করতে। পরে পরীক্ষায় বসার বন্দোবস্ত ঠিক হয়ে যাবে বলে উনি আমায় বারবার কথা দিয়েছেন। কষ্ট হলেও পরীক্ষা আমায় ঠিকঠাক দিতেই হবে! তা না-হলে আমার পাপা যে একটুও শান্তি পাবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy