অভিযোগকারিণীর তরফে শ্বশুরবা়ড়ি থেকে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
একই সঙ্গে প্রশ্ন এবং রহস্য!
বিয়ের ১৪ বছর পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষণের অভিযোগ তোলা কতটা যুক্তিযুক্ত? বালিগঞ্জের এক অভিজাত পরিবারের বধূর দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের নানা মহল থেকে এই প্রশ্ন উঠছে।
ওই বধূর অভিযোগ, বহু বছর ধরে ভাশুর ও স্বামী তাঁকে ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষণ করেছেন। স্বামী ও ভাশুর গ্রেফতার হয়ে এখন পুলিশি হাজতে। যে-দু’টি পরিবার ঘিরে এই ঘটনা, তারা খাস কলকাতার, শিক্ষিত। তাদের যোগাযোগ সমাজের নানা স্তরে। একটি মেয়ে আছে ওই বধূর। সে-ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ জানাতে এত দিন সময় লাগল কেন, অনেকের কাছেই সেটা রহস্যজনক ঠেকছে।
‘রহস্যজনক’ ঠেকছে পুলিশের ভূমিকাও। কেন ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করল, সেই প্রশ্ন উঠছে। তুলনায় আসছে প্রায় এক দশক আগেকার রিজওয়ানুর-কাণ্ডের কথা। পুলিশের অতি সক্রিয়তা সেই বিষয়টিকে গুরুতর মাত্রা দিয়েছিল। শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: আট সন্তানকে খুঁজে চলেছে পরির ব্যাকুল দু’টি চোখ
এ বারের ঘটনায় গ্রেফতারের কথা লালবাজারের শীর্ষ মহলও আগে থেকে জানতে পারেনি। স্থানীয় পুলিশ যে-ভাবে এগিয়েছে, তা যথাযথ নয় বলেই মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। অভিযোগ এত দিন পরে দায়ের হল কেন, সেটা তাঁদেরও প্রশ্ন। এমনকি অভিযোগকারিণীর বয়ানে কিছু অস্পষ্টতাও নজরে এসেছে।
তা হলে এমন একটি অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে ধরপাকড় পর্যন্ত হয়ে গেল কী করে? তবে কি এ-সবের পিছনে অন্য কোনও ‘প্রভাব’ কাজ করেছে? সূত্রের খবর, বধূর বাপের বাড়ি চেতলার একটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। সেই ক্লাব বড় দুর্গাপুজো করে এবং তার মাথায় আছেন অতি প্রভাবশালী এক নেতা। তাঁর পরিবারের সঙ্গে বধূর বাপের বাড়ির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। সেই যোগাযোগ কাজে লাগিয়েই কি দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ? রবিবার এই প্রশ্ন করা হলে ওই বধূর বাবা বলেন, ‘‘উনি (ওই নেতা) কেন সাহায্য করবেন! কেউ কিছু করেনি।’’ বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওই নেতার বক্তব্য জানা যায়নি।
আরও পড়ুন: টিকিট থাকতেও ভেন্ডারে জরিমানা
প্রক্রিয়াটি যে-ভাবে এগিয়েছে, তা ‘যথাযথ’ নয় বলেই মনে করছেন অনেক আইনজীবী। ‘‘এত দিন পরে অভিযোগ দায়ের হলে তার সত্যতা যাচাই করে নেওয়া উচিত। এমন অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে সমাজের কাছে বিরূপ দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মানুষগুলির মারাত্মক সম্মানহানি হচ্ছে,’’ বলেন আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। প্রবীণ পুলিশকর্তাদের একাংশও বলছেন, অভিযোগ মিথ্যা হলে পাল্টা মামলায় ফাঁসতে পারেন অভিযোগকারিণী।
অভিযুক্ত পরিবারের আইনজীবী শেখ সেলিম রহমানের অভিযোগ, তাঁর মক্কেলের পরিবারে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান রয়েছে। সামনের মাসে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে পরিবারের এক জনের। শ্বশুরবাড়ির পরিবারকে বিপাকে ফেলার জন্য এই মওকা বেছে নিয়েছেন ওই বধূ। তবে তাঁর আইনজীবী গোপাল হালদার ও অনির্বাণ গুহঠাকুরতার দাবি, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। সেলিমের দাবি, ‘‘জুলাইয়ে অভিযোগকারিণী ও তাঁর স্বামীর মধ্যে সমস্যা শুরু হয়। মহিলা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে মিউচুয়াল ডিভোর্সের কথাও হয় দু’পক্ষের মধ্যে।’’ যদিও বধূর মায়ের দাবি, এমন কোনও কথা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy