গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মোবাইলে ঋণ নেওয়ার অ্যাপ থেকে সাত দিনের মেয়াদে সাড়ে তিন হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার নেতাজি নগরের বাসিন্দা এক মহিলা। কিন্তু ঋণ পাওয়ার দিন পাঁচেক পর থেকেই অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসতে থাকে। মহিলার ছবিকে সুপার ইমপোজ করে আপত্তিকর ছবি তৈরি করে তাঁকে পাঠানো হয়। মহিলা নেতাজি নগর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
মহিলার দাবি, গত ৩০ মে এবং ৩১ মে মোবাইলে দু’টি লোন অ্যাপ থেকে তিন বারে মোট সাড়ে ৯ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। দু’টি ঋণ নেন ৩ হাজার টাকার এবং একটি ঋণ সাড়ে ৩ হাজার টাকার। সব ক’টি ঋণই শোধের সময়সীমা ছিল এক সপ্তাহ। ৬ দিনের মাথায় তিনি প্রথম নেওয়া ৩ হাজার টাকা পরিশোধ করে দেন। মহিলার দাবি, সেই সময় অপর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করে ১১ জুন করে দেয় সংস্থাটি। অন্য দিকে, মহিলা ৩১ মে অ্যাপ ব্যবহার করে যে সাড়ে ৩ হাজার টাকা ঋণ নেন তা পরিশোধের সময়সীমা ছিল ৬ জুন। সমস্যা তৈরি হয় সেই ঋণ নিয়েই। মহিলার দাবি, গত ৫ জুন তাঁকে ফোন করে ঋণের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মহিলা জানান, তিনি সাত দিনের মেয়াদে ঋণ নিয়েছেন, এখনও সময়সীমা পেরোয়নি। কিন্তু মহিলার কথা না শুনেই তাঁকে ঋণ নেওয়া অর্থ পরিশোধের কথা বলা হয়। এ ভাবেই পর পর বেশ কয়েক বার তাঁর কাছে একই দাবি জানিয়ে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসতে থাকে। কিন্তু মহিলা প্রতি বারই জানান, যে দিন মেয়াদ শেষ হচ্ছে, সে দিনই তিনি টাকা পরিশোধ করবেন, আগে নয়।
মহিলার অভিযোগ, এর পরেই তাঁর মোবাইলে আসে একটি ছবি। যে ছবিতে রয়েছে মহিলার মুখ, কিন্তু শরীর অন্য কারও। আপত্তিকর অবস্থায় তোলা ছবিটিতে সুপার ইমপোজ করে মহিলার মুখের ছবি বসানো হয়েছে। মহিলাকে ফোনে জানানো হয়, এখনই টাকা না দিলে এই ছবি তাঁর পরিজনদের মোবাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করার সময় মহিলার মোবাইলে থাকা সমস্ত ফোন নম্বরের হদিস পেয়ে যায় ঋণপ্রদানকারী সংস্থাটি। মহিলার অভিযোগ, নির্দিষ্ট দিনে তিনি চেষ্টা করেও ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। কারণ, যে উপায়ে তাঁকে ঋণ পরিশোধের কথা সংস্থাটি জানিয়েছিল, সে ভাবে টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের দ্বারস্থ হন নেতাজি নগরের বাসিন্দা ওই মহিলা। নেতাজি নগর থানা তাঁকে সাইবার ক্রাইমের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই ঘটনার কথা শুনে বলেন, ‘‘অতিমারির সময় যখন মানুষের হাতে টাকাপয়সা কম, তখন কিছু চিনা সংস্থা এই ধরনের কারবার ফেঁদেছিল। এই সংস্থাগুলি আপনাকে ঋণ দেওয়ার নাম করে আপনার মোবাইলে সেভ করা সমস্ত ফোন নম্বর চুরি করে। তার পর ঋণ পরিশোধে কোনও সমস্যার কথা বলে আপনাকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে। এ ভাবে টাকা আদায় করাই উদ্দেশ্য। জানি না নেতাজি নগরের বাসিন্দা ওই মহিলাও এদের খপ্পরেই পড়েছেন কি না।’’ মানুষকে এই ধরনের অ্যাপ থেকে চটজলদি ঋণ নেওয়ার আগে আরও সতর্ক হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিভাস। তাঁর দাবি, এই ধরনের অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ। তিনি বলছেন, ‘‘পুলিশের উচিত এই ধরনের কারবার বন্ধ করতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি মানুষকেও সতর্ক হতে হবে। না হলে এই প্রতারণার কারবার ঠেকানো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy