গায়ে গায়ে: প্রায় কারও মুখে নেই মাস্ক, দূরত্ব-বিধি মেনে চলার বালাইও নেই। কোভিড-বিধি উড়িয়ে এ ভাবেই ছট পালন হল দইঘাটে। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
লরির উপরে বাঁধা বিশালাকৃতি একাধিক সাউন্ড বক্স। তাতে বাজছে চটুল সব গান। লরিতে বসানো নানা রঙের বাতিস্তম্ভও। সেই আলোর ছটায় রাজপথ যেন ‘ডান্স ফ্লোর’! আলোর ঝলকানি আর চটুল গানের তালে তালে লরির পিছনে উদ্দাম নাচে ব্যস্ত জনা ষাটেকের দলটা। দূরত্ব-বিধি কোন ছাড়, অধিকাংশের মুখই মাস্কহীন। নাচতে নাচতে রাস্তায় শুয়ে পড়া কয়েক জনকে লরির উপর থেকেই মাইক হাতে ‘ডিজে’ তখন হিন্দিতে বাহবা জানিয়ে উৎসাহিত করে চলেছেন।
কয়েক হাত দূরেই যে সাইলেন্স জ়োন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সে দিকে খেয়ালই নেই কারও। হাসপাতালের গেটে দাঁড়ানো পুলিশকর্মীরাও তখন নীরব দর্শক। আর জি কর রোডের এই ছবিই বুধবার ছটপুজোর শহরে ঘুরেফিরে দেখা গেল। সুভাষ সরোবর বা রবীন্দ্র সরোবর থেকে পুজোর ভিড় সরিয়ে রাখা গেলেও বিধিভঙ্গের প্রবণতা কিন্তু বদলানো গেল না ছোট ছোট জলাশয়ে।
পুজো দিতে সেখানে অধিকাংশই হাজির হলেন গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে লরিতে চেপে। কেউ সঙ্গে আনলেন তাসা। ইতিউতি ফাটল নিষিদ্ধ বাজিও। এ দিনের মতো পুজো সেরে তারস্বরে বক্স বাজিয়ে তাঁরাই এলাকা ঘুরতে বেরোলেন। দইঘাটে উপস্থিত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোভিড-বিধি মেনে উৎসবে অংশ নেওয়ার আবেদনও কাজে লাগল না। যা দেখে সচেতন নাগরিক ও চিকিৎসকদের বড় অংশ বলছেন, ‘‘দুর্গা এবং কালীপুজোয় যা শুরু হয়েছিল, তা চলল ছটেও। আরও এক বার প্রমাণ হল, আমাদের প্রাধান্যের তালিকায় জীবনযাপনের অধিকারের চেয়ে এগিয়ে উৎসব পালনের অধিকার।’’
এ দিন আরও একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আদালতের নির্দেশ মেনে দূষণ থেকে রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরকে রক্ষা করা। সকালেই দুই সরোবর ঘুরে দেখেন পরিবেশকর্মীরা। ছিলেন কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (কেএমডিএ) আধিকারিকেরাও। অতীতে এই দুই সরোবরেই জোর করে ঢুকে পড়ার এবং ঢুকতে না পেরে বিক্ষোভ দেখানোর ঘটনা ঘটেছে। সে জন্য এ বার এক জন ডিসি এবং পাঁচ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। রবীন্দ্র সরোবরের পাঁচটি গেটই ‘স্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত করে বাড়তি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। বিশেষ করে লেক গার্ডেন্স স্টেশনের লেভেল ক্রসিংয়ের পিছনের রাস্তায় আগের রাত থেকেই ব্যারিকেড বসানো হয়। বরজ রোডের দু’পাশে যে পাঁচটি গেট রয়েছে, তার সামনে দিয়ে বার বার টহল দিয়েছে পুলিশের ভ্যান। একই তৎপরতা দেখা গিয়েছে সুভাষ সরোবর ঘিরেও। তা সত্ত্বেও বাঁশ টপকে এক জন ঢুকে পড়েন সুভাষ সরোবরে। তাঁকে কার্যত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বার করে দেন পুলিশকর্মীরা।
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে ব্যবস্থা দেখে আমি খুশি। তবে আদালতের নির্দেশ ঠিক মতো মানা হয়েছে কি না, তা বৃহস্পতিবারের পরে স্পষ্ট হবে।’’ দুই সরোবরের ভারপ্রাপ্ত, কেএমডিএ-র সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার দিলীপকুমার বড়াল বলেন, ‘‘অন্য ১৩৮টি বিকল্প জলাশয়েও একই রকম নজরদারি চলছে। সকাল থেকেই দুই সরোবরের কন্ট্রোল রুম থেকে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কোথাও সমস্যা হলে তা সমাধানের চটজলদি ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, উত্তর শহরতলির দমদমের তিনটি পুর এলাকা থেকেও কোভিড-বিধি ভঙ্গ করে ছটপুজো পালনের অভিযোগ এসেছে। পুর প্রধানদের দাবি, পুণ্যার্থীদের সতর্ক করতে প্রচার চালানো হয়েছে। জল যাতে দূষিত না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখা হয়েছে। তবু যে অনেকেই বিধি মানেননি, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা।
কিন্তু বিধিভঙ্গের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সেই উত্তর মেলেনি কোনও মহল থেকেই। আজ, বৃহস্পতিবার পুজোর দ্বিতীয় দিন কী ভাবে কাটে, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy