Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাজ সবই লোক দেখানো, সমস্যা সমাধান দূর অস্ত্‌

রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা। নতুন করে তৈরি হওয়া ডিভাইডারের রেলিংয়ে লেগেছে নীল-সাদা রঙের পোঁচ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরের চার বছরে বরাহনগর থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত বি টি রোডের ছবিটা খানিক বদলেছে ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, যা কাজ হয়েছে, সবই উপর উপর।

আঁধার পথে আসা-যাওয়া। সোদপুরের কাছে, বি টি রোডে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

আঁধার পথে আসা-যাওয়া। সোদপুরের কাছে, বি টি রোডে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

বিতান ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণে বেড়েছে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা। নতুন করে তৈরি হওয়া ডিভাইডারের রেলিংয়ে লেগেছে নীল-সাদা রঙের পোঁচ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট তৈরি হওয়ার পরের চার বছরে বরাহনগর থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত বি টি রোডের ছবিটা খানিক বদলেছে ঠিকই। কিন্তু অভিযোগ, যা কাজ হয়েছে, সবই উপর উপর। সমস্যার শিকড়টা কিন্তু থেকে গিয়েছে পথেই। গাড়ির বেপরোয়া গতির জন্য উত্তর শহরতলির ব্যস্ততম এই রাজ্য সড়কে কার্যত প্রাণ হাতে করে যাতায়াত করতে হয়।

সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, বি টি রোডে প্রতিদিনের গড় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেনি। বরং সাধারণ পথচারী, মোটরবাইক, গাড়ির আরোহীদের পাশাপাশি সিভিক পুলিশের কর্মীরাও যান নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এর একটা বড় কারণ মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির সংখ্যা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে দুই লেনের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দখল করে নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ, অথবা ইমারতি ব্যবসায়ীদের ইট, বালি, সিমেন্ট ডাঁই করে রাখা। এখানেই শেষ নয়। রাস্তার উপরেই গজিয়ে উঠেছে পুরসভাগুলির তৈরি করা অস্থায়ী ভাগাড়। হাওয়ায় সেই আবর্জনা চারদিকে ওড়ায় দূষিত হচ্ছে আশপাশের এলাকা।

মূলত দুর্ঘটনা এড়াতেই শহর কলকাতার সঙ্গে সংযোগকারী এই রাস্তায় ডিভাইডার বসানো হয়েছিল। সেখানে বসেছিল মার্কারি ভেপার। ডিভাইডারের কিছু অংশে লোহার রেলিং লাগানো হয়েছিল, বাকি অংশে বসেছিল বাহারি গাছ। পরিচর্যার অভাবে সেই গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মার্কারি ভেপারও জ্বলে না ঠিক মতো। বিপজ্জনক ভাবে বিদ্যুতের খুঁটি হেলে থাকে রাস্তার উপরে। গোটা রাস্তায় ডিভাইডারে কোনও রিফ্লেক্টর না থাকায় কোথায় ডিভাইডারের শুরু আর কোথায়ই বা তা শেষ, রাতে অনেক ক্ষেত্রে বুঝতেই পারেন না চালকেরা। ফলে লেগেই থাকে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

খড়দহ, পানিহাটি কিংবা আগরপাড়ায় দৃশ্যটা আরও অদ্ভুত। রাস্তার আলোর বাতিস্তম্ভে বিজ্ঞাপনের সাইনবোর্ডে আলো জ্বলে কিন্তু রাস্তার আলো জ্বলে না। অন্ধকারে ডিভাইডার দেখতে না পেয়ে বা পিছন থেকে দ্রুত গতিতে আসা গাড়িকে পাশ দিতে গিয়ে রাস্তার ধারে পড়ে থাকা নর্দমার পাঁক, বালি-সিমেন্টে হড়কে যায় বাইক, অটোর চাকা। গত ছ’মাসে এ ভাবে একটি-দু’টি নয়, ১৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আরও অভিযোগ, আগে পৌঁছনোর তাড়ায় শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলাও সুযোগ পেলেই গতি বাড়ান মূলত বাস ও অটোর চালকেরা।

এই রুটে চলা ৭৮, এস১১ বাসের যাত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘একই গন্তব্যের দু’টি বাসের মধ্যে রেষারেষি শুরু হলেই আতঙ্ক হয়, এই বুঝি কিছু হয়ে গেল! বারণ করলেও চালকেরা তখন মরিয়া হয়ে থাকেন।’’ ওভারটেক করতে গিয়ে হঠাৎ করেই ডিভাইডার দেখে নিয়ন্ত্রণ হারান অধিকাংশ চালক। মাস তিন আগে সোদপুরে একটি গাড়িতে ধাক্কা মেরে এ ভাবেই উল্টে গিয়েছিল মাল বোঝাই একটি ট্রাক।

বি টি রোডের উপর বিভিন্ন চৌমাথায় ডিভাইডার কাটা আছে। কিন্তু একে রাস্তার বাতিস্তম্ভে আলো না জ্বলা, অন্য দিকে রাতে খালি হাতে যান নিয়ন্ত্রণ করায় গাড়ির চালকেরা ঠিক মতো দেখতে পান না ট্রাফিক পুলিশ বা সিভিক পুলিশকর্মীদের। তাঁদের নির্দেশও বুঝতে পারেন না। ফলে হঠাৎ করে ব্রেক কষতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ির ধাক্কায় জখম হন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও।

গোদের উপর বিষফোড়ার মতো যোগ হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়া রাস্তা। বি টি রোডের নীচ দিয়ে বিদ্যুৎ, নিকাশি, পানীয় জল, টেলিফোনের লাইন গিয়েছে। ফলে বিভিন্ন সময় খোঁড়াখুঁড়ি করার পরে জোড়াতালি দিয়েই কাজ সারা হয়। সেই তাপ্পি বেশি দিন না টেকায় বি টি রোডের বিভিন্ন জায়গায় হাঁ-মুখ তৈরি হয়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ভোটের ব্যস্ততা মিটলেই সব জায়গায় রিফ্লেক্টর লাগানো হবে।’’ কিন্তু এত দিন কেন হয়নি? জবাব মেলেনি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কাছে। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, ‘‘এটা খুবই বড় সমস্যা। পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আধিকারিকদের নিয়ে আগামী প্রশাসনিক বৈঠকেই বিষয়টি আলোচনা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

halogen lights Not sufficient BT Road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE