মহম্মদ ওয়াসিক
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, পুলিশ সেই মতো অভিযানও চালাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও হেলমেট না পরার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না এক শ্রেণির মোটরবাইক চালক ও আরোহী। বুধবার সকালে শহরের রাস্তায় ফের এক মোটরবাইক চালকের মৃত্যু সেই ছবিটাকেই সামনে আনল। প্রথমে ওই যুবক রাস্তায় ছিটকে পড়েন, তার পরে একটি টাটা সুমো তাঁকে পিষে দেয়। বিবেকানন্দ রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ের কাছের ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ ওয়াসিক (১৮)। বাড়ি মদনমোহন বর্মণ স্ট্রিটে। পুলিশ জানিয়েছে, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছোট ভাইকে গিরিশ পার্কের কাছে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে তিনি যখন ফিরছিলেন, তখন তাঁকে প্রথমে একটি অটো ধাক্কা মারে। তিনি মোটরবাইক থেকে ছিটকে পড়েন। তার পরে গাড়িটি তাঁকে পিষে দেয়। ওয়াসিকের হেলমেট না পরার কথা তাঁর বাড়ির লোকজন স্বীকার করেছেন। ওয়াসিকের আত্মীয়েরাও জানিয়েছেন, ওয়াসিক তাঁর ছোট ভাইকে রোজ যখন মোটরবাইকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যেতেন, তখন চালক বা আরোহী— কারওরই হেলমেট থাকত না।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, একে তো ওই যুবক হেলমেট পরেননি। তার উপরে তিনি মোটরবাইক নিয়ে কেরামতি করছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ রাস্তা তখন বেশ ফাঁকা ছিল। কিন্তু ওই কেরামতি করতে গিয়েই ওয়াসিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। প্রত্যক্ষদর্শীদের এক জন, পেশায় চা-বিক্রেতা সরস্বতী সাউ জানান, দোকানের সামনে রাস্তার ধার ঘেঁষে ফুলবাগান-গণেশ টকিজ রুটের একটি অটো দাঁড়িয়ে ছিল। সেটি ফুলবাগান থেকে বিবেকানন্দ রোড হয়ে গণেশ টকিজ যাচ্ছিল।
সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘ফাঁকা রাস্তায় একটি ছেলে মোটরবাইক নিয়ে কসরত করতে করতে গিরিশ পার্ক মোড়ের দিকে যাচ্ছিল। বাইকের গতিও কিছু কম ছিল না। ছেলেটির মাথায় হেলমেট দেখিনি।’’ ওই মহিলার কথায়, ‘‘আমার দোকানের কাছে এসেই মোটরবাইকটা টাল সামলাতে না পেরে সোজা ধাক্কা মারে অটোর পিছনে। ছেলেটি রাস্তায় ছিটকে পড়ে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি টাটা সুমো এসে ওকে চাপা দেয়।’’
স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা ওয়াসিককে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনার পরেই গাড়িটি নিয়ে পালায় চালক। বুধবার রাত পর্যন্ত ঘাতক গাড়ি বা তার চালককে ধরা যায়নি।
মৃত যুবকের দাদা মহম্মদ ইকবাল জানান, মাধ্যমিক পাশ করার পরে ওয়াসিক দক্ষিণ কলকাতার একটি মলের রেস্তারাঁয় রান্নার কাজ শিখছিল। ইকবাল বলেন, ‘‘আমার ছোট ভাই, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ওয়াকিসকে নিয়ে রোজ মোটরবাইকে গিরিশ পার্কের কাছে স্কুলে পৌঁছতে যেত ওয়াসিক।
এ দিনও গিয়েছিল। ওরা কেউই হেলমেট পরত না।’’ ইকবালের অবশ্য দাবি, অটোর ধাক্কাতেই তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু ওয়াসিক বা তার ভাই হেলমেট পরতেন না কেন? মহম্মদ ইকবালের যুক্তি, ‘‘সকালে রাস্তায় গাড়ি কম থাকে। তা ছাড়া, আমাদের বাড়ি থেকে গিরিশ পার্কের ওই স্কুলের দূরত্ব বেশি নয়। সে জন্যই হেলমেটের প্রয়োজন হতো না।’’
লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘হেলমেটহীন মোটরবাইক আরোহী বা চালককে দেখতে পেলে ধরা হয়। তবে সব সময়ে রাস্তার সর্বত্র নজরদারি রাখা সম্ভব নয়। সে জন্য নাগরিকদেরই সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy