E-Paper

‘বীরু’র দাপাদাপির জ্যোতির পর্দায় শুধুই শূন্যতা

জ্যোতির প্রকাণ্ড সিনেমা হলের পর্দার জায়গাটা এখন খাঁ-খাঁ করছে। ওই তল্লাটে গাদাখানেক ধুলো জমা গাড়ির পার্কিং।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৩
জ্যোতি সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা।

জ্যোতি সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা। নিজস্ব চিত্র ।

দিনকয়েক আগে ‘শোলে’ ছবিতে তাঁর ‘মরনা ক্যানসেল’ করে ফিরে আসার দৃশ্য মিম হয়ে ছড়িয়ে পড়ে নেট-রাজ্যে। শোলের বীরুর মতোই যেন কোনও বাসন্তীর সমর্পণে বিশল্যকরণী খুঁজে পেয়ে আইসিইউ থেকে বাড়ি ফেরেন ৯০ ছুঁই ছুঁই ধর্মেন্দ্র। সোমবার সেই দৃশ্যটাই ফের তাড়া করছিল কলকাতায় ধর্মেন্দ্রর স্মৃতিজড়িত পাড়ায়। ভারত-কাঁপানো শোলের অন্যতম তীর্থক্ষেত্র জ্যোতি সিনেমার খণ্ডহরে বসে নিরাপত্তাকর্মী সঞ্জয় সিংহ, এলাকার কয়েক জন দোকানির গল্পে উঠে আসছিল সদ্যপ্রয়াত বীরুপাজির কথাই। সবার মুখে একটাই কথা— মৃত্যুসংবাদ মিথ্যে করে আবার কি ফিরে আসবেন বলিউডের প্রথম হি-ম্যান নায়ক ধরমজি?

সঞ্জয় বা তাঁর সঙ্গীরা কেউই ৫০ বছর আগে জ্যোতির ৭০ মিমি পর্দায় শোলে দেখেননি। যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের এখনও মনে আছে কয়েকটি দৃশ্যে বীরুর জন্য হল-কাঁপানো সিটি, হাততালির কথা। শোলের ডিস্ট্রিবিউটর দাগা ফিল্মসের কর্ণধার কৃষ্ণকান্ত দাগার বাবা ভৈরোবৎস দাগা জড়িয়ে ছিলেন ধর্মেন্দ্রর অজস্র হিট ছবির সঙ্গে। কৃষ্ণকান্ত বললেন, ‘‘শোলে প্রথমে এলিটে রিলিজ় করে। কে ভেবেছিল, অমন অস্বাভাবিক হিট করবে? ১১ সপ্তাহ বাদে কোনও ইংরেজি ছবির স্লট বুক করা ছিল বলে শোলেকে পাশের পাড়ায় জ্যোতি সিনেমায় সরিয়ে আনা হল।’’ তার পরে কেটে গিয়েছিল ১০৩ সপ্তাহ। ৭২১ দিনশোলের বসত অনড় থাকে সেখানে। পূর্ব ভারতের সিনে-প্রযোজকদের সংগঠনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, চেয়ারপার্সন কৃষ্ণ হেসে বলছিলেন, ‘‘ধরমপাজির জলের ট্যাঙ্ক থেকে সেই সুইসাইডের হুমকির সিনটায় যা পয়সা পড়ত! অমিতাভের সঙ্গে ইয়ে দোস্তি গানেও দর্শকেরা পাগল হয়ে যেতেন। বিশেষত পয়সা নিয়ে হেড-টেলের মুহূর্তে।’’

জ্যোতির প্রকাণ্ড সিনেমা হলের পর্দার জায়গাটা এখন খাঁ-খাঁ করছে। ওই তল্লাটে গাদাখানেক ধুলো জমা গাড়ির পার্কিং। কিছু দিন বাদে হয়তো শপিং মল উঠবে। ধর্মেন্দ্রর প্রয়াণ-দিনে রাজকীয় সিনেমা হলের শূন্যতার ছবিটাও প্রতীকী।

কৃষ্ণের মতো গুটিকয়েক বৃদ্ধের স্মৃতিতে অবশ্য ধর্মেন্দ্র মানেই দামাল উপস্থিতি। কৃষ্ণ বলেন, ‘‘ধর্মেন্দ্রর ‘মেরা গাঁও, মেরা দেশ’, ‘শোলে’, ‘বাহারে ফিরভি আয়েগি’র মতো ছবি পূর্ব ভারতে রিলিজ় করি। পরে ‘জানি দোস্ত’ও প্রযোজনা করেছি। প্রমোদ চক্রবর্তীর ‘তিন মূর্তি’ আমার পিসতুতো দাদাদের দামানি ফিল্মস রিলিজ় করে।’’ তখন মুম্বইয়ের পরে গোটা দেশের রিলিজ়-মানচিত্রে এগিয়ে ছিল বাংলাই। কৃষ্ণের কথায়, ‘‘বাংলার শিল্পী, কলাকুশলী, পরিচালকদের তখন বম্বেয় খাতিরই আলাদা।ধর্মেন্দ্রর কোনও নায়কসুলভ চালচলন ছিল না। মাটিতে খেতে বসে যেতেন। আমার ভাইয়ের বিয়ের নিমন্ত্রণেও আসেন।’’

টালিগঞ্জে বাংলা ছবি ‘পাড়ি’তে অভিনয় ছাড়াও ‘বাহারে ফিরভি আয়েগি’র জন্য হাওড়ার জাহাজবাড়িতে শুটিং করেন ধর্মেন্দ্র। ইন্ডাস্ট্রির প্রবীণ কলাকুশলীদের আজও মনে আছে সুচিত্রা সেন-উত্তমকুমারদের সঙ্গে ওঁর হৃদ্যতার কথা। তখন শোলে, জুগনু-সহ একাধিক ছবির প্রিমিয়ার বা জুবিলিতে কলকাতায় দেখা গিয়েছে ধর্মেন্দ্রকে। ‘তিন মূর্তি’ ছবির কলকাতার গোলকধাঁধা গানেও এ শহরের সঙ্গে গেঁথে আছে তাঁর উপস্থিতি। পুজোয় যে গান আজও মাইকে বাজে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jyoti Cinema Hall Dharmendra Sholay

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy