E-Paper

উৎসবে শিল্পীর সৃজনে সঙ্গী বিজ্ঞানী, গবেষকও

পুজোয় উঠে আসছে নানা ভাবনা। ফুটে উঠছে সমাজ, ইতিহাসের ছবি। তা নিখুঁত করতে শিল্পীদের সঙ্গী গবেষকেরাও।

সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৭
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কলকাতার পুজো কেবলই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরিধি ছাড়িয়েছে অনেক দিনই। সামাজিক উৎসবেররূপ নেওয়া সেই আয়োজন এখন অনেকাংশে মৌলিক শিল্পচর্চার পরিসরও। গত কয়েক বছর ধরে যোগ হচ্ছে বৌদ্ধিক অনুসঙ্গও। পুজোর কাজে শিল্পীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, গবেষকেরাও।

ক’বছর আগেই ইউনেস্কোর বিশ্ব আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। তবে তার অনেক আগে থেকেই পুজো মৌলিক শিল্পচর্চার পরিসর হয়ে উঠছিল। ইউনেস্কোর তালিকায় দুর্গাপুজোকে ঠাঁই দেওয়ার প্রস্তাবটি যাঁর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছিল, সেই ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা জানাচ্ছেন, প্রায় দু’দশক আগে থেকে পুজোর কাজকে শিল্পচর্চার মাধ্যম করে তোলেন পেশাদার শিল্পীদের একটা গোষ্ঠী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সনাতন দিন্দা, ভবতোষ সুতার, সুশান্ত পাল ও আরও বেশ কয়েক জন। তপতী বলছেন, ‘‘এখন সেই শিল্পীদের সঙ্গে গবেষক বা বিশেষজ্ঞদের জড়িয়ে যাওয়া সেই শিল্পচর্চাকে অন্য রূপ ও মাত্রা দিচ্ছে।’’

শিল্পচর্চার গভীরতা এবং চিন্তার প্রামাণ্য রূপকে এখনকার পুজোর কাজে খোঁজা হচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞদেরও প্রয়োজন হচ্ছে বলে মনে করছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। দু’দশকের বেশি সময় ধরে পুজো-শিল্পী হিসেবে কাজ করা ভবতোষ অনেক দিন ধরেই নিজের কাজে শব্দ, আলোর বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করছেন। এ বার টালা প্রত্যয়ের পুজোয় ভবতোষের সঙ্গেই এক দিকে যেমন যুক্ত হয়েছেন দেশি ধান সংরক্ষণের বিশেষজ্ঞ, কৃষিবিজ্ঞানী দেবল দেব, তেমনই রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি ও বায়ো-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক প্রশান্তকুমার বিশ্বাস। ভবতোষ বলছেন, ‘‘শিল্পচর্চা তো কখনওই জীবন, অর্থনীতি বা রাজনীতির থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। আর পুজো এখন যে ভাবে একটা বিশাল জন-উৎসবের চেহারা নিয়েছে, সেখানে কেবল দৃশ্যকলা নয়, শিল্পের সব রকম প্রকাশের মাধ্যম হাত ধরাধরি করে চলছে।’’

ভবতোষের মতে, কলকাতার পুজোয় এখন শিল্পচর্চার সঙ্গে সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতির মতো নানা উপাদান মিশে গিয়ে নতুন আঙ্গিক সৃষ্টি করেছে। তিনি জানালেন, গত বছর পুজোয় সল্টলেক এ কে ব্লক বা অর্জুনপুরে তিনি যে কাজ করেছিলেন, সেখানেও বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞেরা যুক্ত ছিলেন। ভবতোষের কথায়, ‘‘কয়েক দশক আগেও অনেক বাঙালি পুজো দেখতেন না, পুজোর ছুটিতে ঘুরতে চলে যেতেন। কিন্তু এখন পুজো সেই গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন আগে যাঁরা পুজোয় বেরোতেন না, সেই ধরনের মানুষেরাও পুজো দেখেন।’’

তপতীও মনে করছেন, এই শতকের আগেকার পুজো-সংস্কৃতির সঙ্গে বাঙালি বিশিষ্ট মহলের একটা দূরত্ব ছিল। কিন্তু এই শতকের গোড়ার দিক থেকে যখন পুজো শিল্পচর্চা, শিল্পকলা ও নান্দনিকতা প্রকাশের একটা মঞ্চ হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন থেকেই সেই দূরত্ব কমতে থাকে। তপতীর কথায়, ‘‘এখন পুজোয় যে ভাবে গোটা শহর একটা শিল্প প্রদর্শনীর রূপ নেয়, তা আন্তর্জাতিক স্তরের শিল্পী-বিশিষ্টদেরও আকৃষ্ট করছে।’’ পুজোর ব্যাপ্তিটা এ ভাবে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে যাওয়াটাও পুজোর কাজে গবেষকদেরও চাহিদা তৈরি করার একটা কারণ বলে অনেকের মত। (চলবে)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bhabatosh Sutar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy