Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Covid Infection

Covid in kolkata: আইসিইউ-এ ভিড় বাড়ছে করোনা রোগীর, বাড়ছে শয্যাও

করোনা সংক্রমিতদের একটা অংশ ভিড় করছেন হাসপাতালে। সংক্রমিতের সংখ্যার তুলনায় ভর্তির ওই সংখ্যা কম হলেও সেটা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের।

ফের কোভিড শয্যার সংখ্যাও বাড়াতে শুরু করেছে।

ফের কোভিড শয্যার সংখ্যাও বাড়াতে শুরু করেছে। ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৫:০৮
Share: Save:

নীরবে বদলে যাচ্ছে ছবিটা। করোনা সংক্রমিতদের একটা অংশ ভিড় করছেন হাসপাতালে। সংক্রমিতের সংখ্যার তুলনায় ভর্তির ওই সংখ্যা কম হলেও সেটা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে চিকিৎসকদের। পরিস্থিতি বলছে, যাঁরা হাসপাতালের দরজায় পৌঁছচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সংক্রমণের বাড়াবাড়ি পর্যায়ে। অর্থাৎ, সঙ্কটজনক ওই রোগীরা। তাঁদের তাই বাধ্য হয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি করতে হচ্ছে। এই সব দেখে-শুনে হাসপাতালগুলি ফের কোভিড শয্যার সংখ্যাও বাড়াতে শুরু করেছে। প্রতিষেধকের একটি, দু’টি বা বুস্টার ডোজ় নেওয়া অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী নাগরিকদের বেশির ভাগই কী ভাবে ভুলে গেলেন শয্যা আর অক্সিজেনের আকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া সহনাগরিকদের? বিস্মিত এবং বিরক্ত চিকিৎসক মহলের প্রশ্ন এখন এটাই।

সোমবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে অ্যাক্টিভ কেসের ২.৬১ শতাংশ বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। অর্থাৎ, ২৪,২০৯টি অ্যাক্টিভ কেসের মধ্যে ৬৩৩ জন ভর্তি আছেন। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বড় অংশ বয়স্ক কিংবা কোমর্বিডিটিতে আক্রান্ত। অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়ের পরে সংক্রমণের প্রভাব কমে যাওয়ায় সব হাসপাতালই কোভিড শয্যা কমিয়ে দিয়েছিল। এখন প্রতিদিনই ৫-১০টি করে শয্যা বাড়াতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলি জানাচ্ছে, তাদের ওখানে রোগীর বড় অংশই সঙ্কটজনক।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩০। তার মধ্যে সিসিইউ-এ রয়েছেন ২০ জন। তিন জনকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না বলছেন, “এমনও হচ্ছে, এক দিনে ১০ জনের ছুটি হচ্ছে। কিন্তু তা সে দিনই ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। নিজেরা উপসর্গহীন হয়ে বাড়িতে সংক্রমণ বহন করছি। ফলে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের হারানোর আশঙ্কা তৈরি করছি।”

সিএমআরআই হাসপাতালের পালমোনোলজিস্ট রাজা ধরের কথায়, “সাত দিনে পাঁচ জন রোগীকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছে। পরিস্থিতি কি খুব সহজ মনে হচ্ছে? এ বারের করোনা একেবারে কিছুই নয়, বড় অংশের মানুষের এই ভেবে নেওয়াটা একেবারেই ঠিক হচ্ছে না। এতেই বিপদ বাড়ছে।” ওই হাসপাতালে এই মুহূর্তে ভর্তি ৪০ জন করোনা রোগী। তাঁদের মধ্যে ১৪ জন আইসিইউ-এ রয়েছেন। রাজা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের সকলেই যে ওমিক্রনে আক্রান্ত তেমনটা নয়। খুব সামান্য শতাংশ হলেও ডেল্টার মতো ফুসফুসে সংক্রমণ বা কোভিড নিউমোনিয়া মিলছে। তাঁর পরামর্শ, “করোনার থেকে সতর্ক থাকতেই হবে। না হলে আসন্ন বড় বিপদের ধাক্কা সামলানো মুশকিল হবে।”

আর এক বেসরকারি হাসপাতাল পিয়ারলেসে এ দিন সকাল পর্যন্ত ৩২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তার মধ্যে ৭ জন আইটিইউ-এ। যাঁদের এক জন ভেন্টিলেশন সাপোর্টে আছেন। ২৫ জন রোগী সাধারণ কোভিড ওয়ার্ডে আছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনের অক্সিজেন চলছে বলে জানাচ্ছেন হাসপাতালের কর্তা চিকিৎসক সুদীপ্ত মিত্র। এ দিকে পরিস্থিতি আঁচ করে আমরি গোষ্ঠীর তিনটি হাসপাতাল মিলিয়ে কোভিড শয্যা বাড়িয়ে ৭৭ করা হয়েছে। তার মধ্যে সিসিইউ-এ রাখা হয়েছে ৪৩টি শয্যা। এ দিন সকাল পর্যন্ত ওই গোষ্ঠীর তিন হাসপাতালে ৬২ জন করোনা আক্রান্ত ভর্তি ছিলেন। যার মধ্যে ২৮ জন সিসিইউ-এ রয়েছেন।

ডায়াবিটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনির সমস্যায় ভোগা পুরনো রোগী, যাঁরা আগে ঠিক মতো চিকিৎসা করাননি, ওমিক্রনের ধাক্কায় তাঁরাও সঙ্কটজনক হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন উডল্যান্ডস হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসক সৌতিক পান্ডা। তাঁর কথায়, “করোনা সংক্রমিত হয়ে ওই সব পুরনো রোগ মারাত্মক মাথাচাড়া দিচ্ছে। যেমন, কোনও কিডনি রোগীর করোনা হয়ে ডাইরিয়া হল, তাতে শরীরে জলের পরিমাণ আরও কমল। ফলে ক্রিয়েটিনিন আরও বেড়ে সমস্যা তৈরি করল।” তাঁর কথায়, করোনাভাইরাসের পাশাপাশি অনেকের ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণও মিলছে। ওই হাসপাতালের সিসিইউ-এ ৬টি শয্যাই ভর্তি।

ভর্তি হতে আসা করোনা রোগীর ভিড় বাড়তে দেখে শয্যা বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ফর্টিস হাসপাতালের আঞ্চলিক অধিকর্তা প্রত্যুষ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, “মোট ৩৩ জন রোগীর মধ্যে ৫ জন আইসিইউ-এ রয়েছেন। পঞ্চাশোর্ধ্ব রোগীর সংখ্যাও যথেষ্ট।”

‘এ বারে করোনা হলেও, কী আর হবে! একটু গলা ব্যথা, কাশি, না হলে একটু জ্বর।’ বেশির ভাগ মানুষ এই ভ্রান্ত বিশ্বাসে মাস্ক না পরে যাবতীয় কোভিড-বিধি উপেক্ষা করে চলছেন। খেসারত দিচ্ছেন প্রবীণেরা। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, “বুস্টার নিলেও মাস্ক পরতেই হবে। মনে রাখতে হবে, বুস্টার গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা নিলে কোভিড হবে না, এটা ভাবা ভুল। প্রতিষেধক কার শরীরে কতটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে, তা বলা মুশকিল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Infection Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE