সম্প্রতি লেক এলাকার এক প্রোমোটারের থেকে তোলা না পেয়ে তাকে খুনেক ছক জেলে বসে কষেছিল এক দুষ্কৃতী। আবার, টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে এক বৃদ্ধকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। ওই দু’টি ঘটনার তদন্তে নেমে দাগিদের সুলুক-সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, এদের একাংশই ‘আশ্রয়দাতা’ হয়ে মোটা আয় করছে।
বেনিয়াপুকুর এলাকার এক দাগি একদা তোলাবাজ হিসেবে ত্রাস ছিল পার্ক স্ট্রিট, এন্টালি, কড়েয়া ও ট্যাংরায়। দেড় যুগ আগে, শহরের কুখ্যাত তোলাবাজ গব্বরকেও সে চ্যালেঞ্জ জানাত। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই দুষ্কৃতী এখন ‘স্বেচ্ছাবসর’ নিয়ে আশ্রয় দিচ্ছে বেনিয়াপুকুর এলাকায় জনা কুড়ি তোলাবাজকে। ওই তল্লাটে কয়েকটি বিপিও-তে কাজ করা তরুণ-তরুণীদের থেকে তোলা আদায় করে ওই উঠতি দুষ্কৃতীরা।
আবার কসবার বাসিন্দা এক তোলাবাজ ‘কাজ’ করত কালীঘাট এলাকায়। স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পর পাততাড়ি গুটিয়ে সে এখন বেহালার গোবরঝুড়িতে বাসা বেঁধেছে আর সিঁধেল ও ছিঁচকে চোর ও ছোটখাটো ছিনতাইবাজদের আশ্রয় দিচ্ছে।
আশ্রয় দেওয়া মানে কিন্তু গোপন ডেরায় লুকিয়ে রাখা নয়। দুষ্কৃতীরা রাতে নিজেদের ডেরা বা বাড়িতেই থাকে। এখানে আশ্রয় দেওয়া মানে রসেবশে রাখা। নাম-কা-ওয়াস্তে ক্লাবঘর তৈরি করে সেখানে ক্যারম, তাস, জুয়া এবং মদ্যপানের বন্দোবস্ত করে দিনভর দুষ্কৃতীদের সেখানে রাখার আয়োজন। স্থানীয় থানার পুলিশের একাংশ ও কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলে ওই ‘দাদা’ বা ‘ভাইয়া’। পুলিশের হাতে ‘সেয়ানা’-দের কেউ ধরা পড়লে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব তারই।
তবে আশ্রয় পেতে গেলে মানতে হবে কিছু শর্ত। এক, ওস্তাদের নাগালের বাইরে যাওয়া চলবে না। দুই, বড় কোনও অপরাধ করা বা তাতে জড়িত হওয়া যাবে না। তিন, কোনও ‘কাজ’ হলে কমিশন আবশ্যিক।
চার, রাজনৈতিক কারণে বলা মাত্র কোথাও চড়াও হতে হবে বা মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে ‘দাদা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে ধরা দিতে হবে, পরে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব দাদার।
লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দাগিদের এই ভোল বদলের কথা জেনে আমরা থ। অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে অথচ নিজেরা অপরাধে না জড়িয়ে এক-এক জন মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা রোজগার করছে।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘তাড়াহুড়ো করে এদের গ্রেফতার করা যাবে না। কেউ অপরাধ করেছে, সেটা জানার পরেও যদি তাকে আশ্রয় দেয়, কেবল তখনই ধরা যাবে। কিন্তু সেটাও প্রমাণ করা মুশকিল।’’