Advertisement
E-Paper

উঠতিদের আশ্রয় দিয়ে আয় দাগিদের

লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের অন্তত ছ’-সাত জন দাগির প্রত্যেকে ২৫-৩০ জন করে উঠতি বা নতুন দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিয়ে মোটা টাকা রোজগার করছে। বেহালার দু’জন, হরিদেবপুরের দু’জন, বেনিয়াপুকুর এলাকার দু’জন ও কালীঘাটের এমনই এক জন দাগির সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৪০
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

চল্লিশ পেরোনোর পরে স্বেচ্ছাবসর। শুধু জমানো পুঁজি ভাঙিয়ে গ্রাসাচ্ছাদন চলছে ভাবলে ভুল হবে। নতুন কাজে যুক্ত হওয়া আছে। তবে তাতে গতর খাটানো নেই। ঈষৎ মস্তিষ্কের ব্যায়াম আছে আর আছে দীর্ঘ কালের অভিজ্ঞতা ও যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে এক ধরনের কনসালট্যান্সি। যা থেকে মাসে গড়ে হাজার চল্লিশেক টাকা আরামে রোজগার।

ব্যাঙ্ককর্মী না, কর্পোরেটের কর্তাও না। এরা কলকাতার কয়েক জন দাগি দুষ্কৃতী। একটা সময়ে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতা জুড়ে তোলাবাজ হিসেবে এদের ‘নামডাক’ ছিল। প্রোমোটার, অন্য ব্যবসায়ীদের থেকে তোলা আদায় ছিল এদের কাছে জলভাত। সাধারণ মানুষ ত্রস্ত থাকতেন, ব্যস্ত থাকত পুলিশও। সেই দাগিরা এখন ছোটখাটো দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিচ্ছে। বিনিময়ে নিচ্ছে তোলা, ছিনতাই বা চুরি থেকে রোজগারের কমিশন। যার পরিমাণ ৫ থেকে ২০ শতাংশ।

লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের অন্তত ছ’-সাত জন দাগির প্রত্যেকে ২৫-৩০ জন করে উঠতি বা নতুন দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দিয়ে মোটা টাকা রোজগার করছে। বেহালার দু’জন, হরিদেবপুরের দু’জন, বেনিয়াপুকুর এলাকার দু’জন ও কালীঘাটের এমনই এক জন দাগির সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি লেক এলাকার এক প্রোমোটারের থেকে তোলা না পেয়ে তাকে খুনেক ছক জেলে বসে কষেছিল এক দুষ্কৃতী। আবার, টালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে এক বৃদ্ধকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়। ওই দু’টি ঘটনার তদন্তে নেমে দাগিদের সুলুক-সন্ধান করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, এদের একাংশই ‘আশ্রয়দাতা’ হয়ে মোটা আয় করছে।

বেনিয়াপুকুর এলাকার এক দাগি একদা তোলাবাজ হিসেবে ত্রাস ছিল পার্ক স্ট্রিট, এন্টালি, কড়েয়া ও ট্যাংরায়। দেড় যুগ আগে, শহরের কুখ্যাত তোলাবাজ গব্বরকেও সে চ্যালেঞ্জ জানাত। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই দুষ্কৃতী এখন ‘স্বেচ্ছাবসর’ নিয়ে আশ্রয় দিচ্ছে বেনিয়াপুকুর এলাকায় জনা কুড়ি তোলাবাজকে। ওই তল্লাটে কয়েকটি বিপিও-তে কাজ করা তরুণ-তরুণীদের থেকে তোলা আদায় করে ওই উঠতি দুষ্কৃতীরা।

আবার কসবার বাসিন্দা এক তোলাবাজ ‘কাজ’ করত কালীঘাট এলাকায়। স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পর পাততাড়ি গুটিয়ে সে এখন বেহালার গোবরঝুড়িতে বাসা বেঁধেছে আর সিঁধেল ও ছিঁচকে চোর ও ছোটখাটো ছিনতাইবাজদের আশ্রয় দিচ্ছে।

আশ্রয় দেওয়া মানে কিন্তু গোপন ডেরায় লুকিয়ে রাখা নয়। দুষ্কৃতীরা রাতে নিজেদের ডেরা বা বাড়িতেই থাকে। এখানে আশ্রয় দেওয়া মানে রসেবশে রাখা। নাম-কা-ওয়াস্তে ক্লাবঘর তৈরি করে সেখানে ক্যারম, তাস, জুয়া এবং মদ্যপানের বন্দোবস্ত করে দিনভর দুষ্কৃতীদের সেখানে রাখার আয়োজন। স্থানীয় থানার পুলিশের একাংশ ও কয়েক জন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে চলে ওই ‘দাদা’ বা ‘ভাইয়া’। পুলিশের হাতে ‘সেয়ানা’-দের কেউ ধরা পড়লে তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব তারই।

তবে আশ্রয় পেতে গেলে মানতে হবে কিছু শর্ত। এক, ওস্তাদের নাগালের বাইরে যাওয়া চলবে না। দুই, বড় কোনও অপরাধ করা বা তাতে জড়িত হওয়া যাবে না। তিন, কোনও ‘কাজ’ হলে কমিশন আবশ্যিক।
চার, রাজনৈতিক কারণে বলা মাত্র কোথাও চড়াও হতে হবে বা মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে হবে। প্রয়োজনে ‘দাদা’ বলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে ধরা দিতে হবে, পরে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব দাদার।

লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দাগিদের এই ভোল বদলের কথা জেনে আমরা থ। অপরাধ জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে অথচ নিজেরা অপরাধে না জড়িয়ে এক-এক জন মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা রোজগার করছে।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘তাড়াহুড়ো করে এদের গ্রেফতার করা যাবে না। কেউ অপরাধ করেছে, সেটা জানার পরেও যদি তাকে আশ্রয় দেয়, কেবল তখনই ধরা যাবে। কিন্তু সেটাও প্রমাণ করা মুশকিল।’’

mischief miscreants shelter earning methods Extortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy