তদন্ত: মৃত শুভজিৎ দাসের (ইনসেটে) গাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
মালবাহী গাড়ির চালক এক যুবককে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল তাঁর বন্ধুকে। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বেহালায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম শুভজিৎ দাস (২২) ওরফে শুভ। বাড়ি ২৪/৪ চণ্ডীতলা মেন রোডে।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ভোর চারটে নাগাদ বেহালা চণ্ডীতলা অটো স্ট্যান্ডের কাছ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ওই যুবককে প্রথমে এম আর বাঙুর হাসপাতাল এবং পরে এসএসকেএমে নিয়ে যান তাঁর দুই বন্ধু। ওই দুই যুবক চিকিৎসকদের জানান, দুর্ঘটনায় তাঁদের বন্ধুর মাথায় চোট লেগেছে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা শুরু হতে না হতেই মারা যান শুভ। চিকিৎসকেরা জানান, যুবকের মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করার চিহ্ন রয়েছে। মস্তিষ্কের সেই চোট থেকেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। এর পরেই চিকিৎসকেরা এসএসকেএমের ফাঁড়িতে খবর দেন। খবর যায় বেহালা থানায়। প্রথমে শুভর দুই বন্ধুর বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ দুর্ঘটনার মামলা রুজু করে তদন্তও শুরু করে দেয়। কিন্তু তার পরেই শুভর বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, বুধবার রাতে শুভ আরও কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন।
এর পরেই তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, বুধবার রাতে চণ্ডীতলার অটো স্ট্যান্ডের কাছেই নিজের মালবাহী গাড়ি দাঁড় করিয়ে শুভ আর কয়েক জনের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। সেই সময়েই কোনও কারণে শুভর সঙ্গে সঙ্গীদের বচসা হয়। তার জেরেই তাঁকে ভারী কোনও জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা গাড়ির ভিতরে রক্তের দাগ, খাবার এবং মদের বোতল-সহ যাবতীয় জিনিসের অবশিষ্ট অংশও পান এবং তা সংগ্রহ করেন। বন্ধুদের দাবি, শুভর দেহ পাওয়া গিয়েছিল গাড়ির বিপরীত দিকে। সেখান থেকেও পুলিশ এ দিন নমুনা সংগ্রহ করে। শুভর পরিবারের লোকজন এবং বন্ধুদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। যাঁরা শুভকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই রাকেশ হালদার নামে এক বন্ধুর কথায় কিছু অসঙ্গতি পান তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, টানা জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাকেশ ভেঙে পড়ে শুভকে মারার কথা স্বীকার করেছেন। এর পরে বৃহস্পতিবার বিকেলেই রাকেশকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরই মাঝে শুভর মা লক্ষ্মীদেবী জানান, বুধবার সকালেই মালবাহী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন শুভ। সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ শুভর স্ত্রী রূপা, তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। শুভ জানান, জিনিস সরবরাহ করতে তাঁকে আবার বেরিয়ে যেতে হবে। তাই তিনি বাড়ি ফিরতে পারবেন না। বৃহস্পতিবার ভোর চারটে নাগাদ পুলিশ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ
করে জানান, শুভ গুরুতর চোট পেয়েছেন। তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লক্ষ্মীদেবী বলেন, ‘‘শুভর সঙ্গে কখনও কারও বচসা হয়েছে বলে জানি না। কোনও ঝামেলাও ছিল না। তবে প্রথমে এটাকে দুর্ঘটনা মনে করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনা হলে গাড়ির ভিতরে রক্ত পড়ে থাকবে কেন?’’ লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, শুভ রাকেশের স্ত্রীকে মাঝেমধ্যে ফোন করতেন। কেন তা করতেন, তা নিয়ে বচসার জেরেই খুন হতে হয়েছে শুভকে। এ দিকে, স্বামীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে রূপা বলেন, ‘‘কারা ওকে মারল, জানি না। রাতে বাড়ি ফিরলে হয়তো এই বিপদ ঘটত না। দু’মাসের ছেলে আর তিন বছরের মেয়েকে কী ভাবে সামলাব, বুঝতেই পারছি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy