Advertisement
E-Paper

লাগছে ৭০ শতাংশ বেশি, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তাতেই কি দেশ জুড়ে অক্সিজেনের হাহাকার

ভাইরাস এ বার খুব দ্রুত শয্যাশায়ী করে দিচ্ছে রোগীকে। শুরু হচ্ছে প্রবল শ্বাসকষ্ট। প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে না পারলেই সব শেষ!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২১ ০৬:৫০
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

জ্বর আসুক আর না-ই আসুক, স্বাদ-গন্ধ থাকছে না। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ কোনও ব্যক্তি যত ক্ষণে গিয়ে বুঝছেন যে, তাঁর স্বাদ-গন্ধ নেই, তার মধ্যেই শুরু হয়ে যাচ্ছে বুকের চাপ। এর পরে দ্রুত শুরু হচ্ছে প্রবল শ্বাসকষ্ট। তৎক্ষণাৎ প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে না পারলেই সব শেষ! এই গোটা ঘটনাটাই ঘটে যাচ্ছে খুব দ্রুত।

সংক্রমণের এই দ্রুততার নিরিখেই গত বারের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই ভাইরাস এ বার যেমন দ্রুত ছড়াচ্ছে, তেমনই খুব দ্রুত শয্যাশায়ী করে দিচ্ছে রোগীকে। আর রোগী-পিছু প্রয়োজন পড়ছে গত বারের চেয়েও প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ বেশি অক্সিজেন। গত কয়েক দিনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফেরা করোনা রোগীদের ফোনে ‘সাক্ষাৎকারের’ ভিত্তিতে এই সমস্ত তথ্যই জানতে পেরেছেন সেখানকার চিকিৎসকেরা। প্রত্যেক রোগীর সেই তথ্যই তাঁরা প্রতিদিন আপলোড করে দিচ্ছেন আইসিএমআর-এর ন্যাশনাল কোভিড রেজিস্ট্রিতে।

সূত্রের খবর, কোভিড নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে এবং এই ভাইরাসের চরিত্র-বদল আরও ভাল ভাবে অনুধাবন করতে আইসিএমআর-এর তৈরি ‘ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল রেজিস্ট্রি অব কোভিড-১৯’ প্রকল্পে এ রাজ্যের তিনটি সরকারি হাসপাতালকে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও রয়েছে আইডি এবং সাগর দত্ত হাসপাতাল। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের অধীনে বেশ কয়েক জন কর্মী কোভিড রোগীদের তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন। সেই তথ্যই নির্দিষ্ট রোগীর নাম, বয়স এবং হাসপাতালে তিনি কত দিন ছিলেন, সেই সব বিবরণ-সহ আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে ন্যাশনাল কোভিড রেজিস্ট্রি-তে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই তথ্য সংগ্রহের কাজ করা সৌপর্ণ পাল ও পূর্ণিমা দেবনাথরা বলছেন, “গত ডিসেম্বর থেকেই কোভিড ওয়ার্ডে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছি আমরা। রোগীর ছুটি হয়ে গেলে ফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে হয়। জানতে চাওয়া হয়, তাঁর কী কী উপসর্গ ছিল? প্রথম কোন কারণটির জন্য মনে হয়েছিল যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত? এ ছাড়া, হাসপাতালে চিকিৎসা কেমন হয়েছে এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে কী কী সমস্যা হচ্ছে— এ সবও জানতে চাওয়া হয়।”

আইডি হাসপাতালে এমনই তথ্য সংগ্রহের কাজ করা এক কর্মী বললেন, “রোগীর পরিবারে কত জন সদস্যের মধ্যে কী কী ধরনের সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে, সেটাও জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেখা যাচ্ছে, জ্বর হোক বা না হোক, স্বাদ-গন্ধ না থাকাই এ বারের মূল লক্ষণ।” সাগর দত্ত হাসপাতাল সূত্রের খবর, সেখানকার কর্মীরা দেখেছেন, আপাত ভাবে সুস্থ রোগী বাড়িতে থাকাকালীনই দ্রুত গভীর প্রভাব পড়ছে ফুসফুসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হচ্ছে প্রবল শ্বাসকষ্ট। কম বয়সি রোগীদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে এই সমস্যা।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক তথা এই কাজের প্রিন্সিপ্যাল ইনভেস্টিগেটর অরুণাংশু তালুকদার বললেন, “সব চেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, খুব কম দিনের মধ্যেই এই ভাইরাসের মারাত্মক প্রভাব শুরু হয়ে যাওয়া। তার সঙ্গেই অক্সিজেনের বিপুল চাহিদা বৃদ্ধি। গত বার এক জন রোগীর যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছিল, এ বার তা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। যে হেতু সবটাই খুব দ্রুত হচ্ছে, চিকিৎসকেরাও তাই হাতে সময় কম পাচ্ছেন।”

তা হলে উপায়? এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তিন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই বলছেন, “মৃদু উপসর্গ দেখা দিলেও দ্রুত পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে হবে। আপাত ভাবে সুস্থ মনে হওয়া কেউ আদৌ সুস্থ কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। এ বার ভাইরাস এমনিই কম সময় দিচ্ছে, ফলে কোনও মতেই তা নষ্ট করা চলবে না।”

COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy