ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ রুটের একটি বেসরকারি বাসের মধ্যে মঙ্গলবার তুমুল ঝগড়া। বাস কন্ডাক্টরের সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দিয়েছেন এক যাত্রী। তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন বাসের অন্য যাত্রীরাও। তাঁরাও ওই যাত্রীর মতোই কন্ডাক্টরকে মাস্ক পরার অনুরোধ করছেন। কেউ আবার কড়া কথা শোনাতেও পিছপা হচ্ছেন না। কন্ডাক্টর মাস্ক না পরলে ভাড়া দেবেন না বলেও জানাচ্ছেন অনেকে। বেশ কিছু ক্ষণ এ ভাবে তর্কাতর্কি চলার পরে কন্ডাক্টর বাসের দরজার কাছে চলে এলেন। কিন্তু এত কিছুর পরেও তিনি মাস্ক না পরেই গেটে দাঁড়িয়ে মৌলালি, শিয়ালদহ বলে চিৎকার করতে শুরু করলেন আগের মতোই।
বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের মাস্ক না পরার এই দৃশ্য শহরের সব প্রান্তেই দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আর এই প্রবণতাই চিন্তায় ফেলেছে তাঁদের। সরকারি বাসের ক্ষেত্রে কিছু চালক এবং কন্ডাক্টরকে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও বেসরকারি বাসে এই প্রবণতা প্রায় নেই বললেই চলে। অল্প সংখ্যক কন্ডাক্টরের কাছে মাস্ক থাকলেও কখনও তা থাকছে মুখের নীচে, আবার কখনও পকেটে। শহর ও শহরতলির একটা বড় অংশের মানুষ প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারি বাসে যাতায়াত করেন। তাঁদের সকলেই কোনও না কোনও ভাবে কন্ডাক্টরদের সংস্পর্শে আসেন। এর ফলে তাঁদের সংক্রমিত হওয়া এবং তাঁদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর একটা আশঙ্কা রয়েই যায়।
নিউ টাউনের একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত, শ্যামবাজারের বাসিন্দা জয়িতা পোদ্দার বলেন, ‘‘এই সব দেখেই আমি আপাতত বাসে উঠছি না। মাস্ক পরার কথা বললেই ঝগড়া ছাড়া আর কিছুই লাভ হয় না। আমি আপাতত অ্যাপ-ক্যাবের ভরসাতেই অফিসে যাতায়াত করছি। তাতে হয়তো টাকা অনেকটা বেশি যাচ্ছে, কিন্তু কী করব বলুন? আগে তো জীবন!’’
একই অভিযোগ যাদবপুরের বাসিন্দা অমিতাভ চৌধুরীর। তিনি বলেন, ‘‘বাসচালক, কন্ডাক্টরদের মাস্ক পরার কথা বললে উল্টে তাঁরা দু’কথা শুনিয়ে দেন। কোনও কথাতেই পাত্তা দেন না।’’
যদিও এই বিষয়ে পাল্টা যুক্তি দিয়ে এক বাস কন্ডাক্টর বলেন, ‘‘সারা দিন এই গরমের মধ্যে মাস্ক পরে থাকা যায় না। আর আমরা তো গেটে থাকি, বাসের ভিতরে ঢুকলে মাস্ক পরে নিই।’’
বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের মাস্ক না পরার প্রবণতার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস-এর সম্পাদক টিটু
সাহা। তিনি বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে একাধিক বার ইউনিয়নগুলিকে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। আমরা নিজেরাও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রচার চালাচ্ছি। এটা আসলে সামাজিক শিক্ষার অভাব। চালক ও কন্ডাক্টরদের এই প্রবণতা কখনওই সমর্থন করা যায় না।’’
অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাস চালক ও কন্ডাক্টরদের বেশ কয়েক জন ইতিমধ্যেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইউনিয়ন থেকে তাঁদের সচেতন করার প্রয়াস শুরু হয়েছে।’’ পাশাপাশি, তিনি এ বিষয়ে প্রশাসনের তরফে উদ্যোগ নেওয়ার আবেদনও করেন।
কোনও উদ্যোগে লাভ হবে কি না, তা এখনও জানা নেই। নিত্যযাত্রীরা যা নিশ্চিত ভাবে জানেন, তা হল আপাতত ঝুঁকি নিয়েই তাঁদের বাসে সফর করতে হবে।