E-Paper

অভিভাবকের পরিকল্পনাই ভরসা! চিন্তা বিশেষ সন্তানকে ঘিরে

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকেরা যদিও জানাচ্ছেন, ঠিক মতো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলেই কিন্তু এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৫ ০৯:০৭
যথাযথ পরিকল্পনা করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা সত্যিই সম্ভব।

যথাযথ পরিকল্পনা করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা সত্যিই সম্ভব। — প্রতীকী চিত্র।

কে হাঁটাতে নিয়ে যাবে? কে ওষুধ খেতে সাহায্য করবে? কে নিয়ে যাবে থেরাপির ক্লাসে? আমার মৃত্যুর পরে কে ওকে দেখবে? এই সমস্ত ভাবনাই কি গ্রাস করেছিল বেহালায় অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার থাকা মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া বাবার? শনিবার একটি বাড়ি থেকে ওই বাবা এবং মেয়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে পরিবার সূত্রে মেয়েকে নিয়ে বাবার দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ্যে আসতেই এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এমন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে-মেয়েদের অভিভাবকেরা যদিও জানাচ্ছেন, ঠিক মতো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলেই কিন্তু এই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাঁরা বলছেন, ‘‘প্রথমে বুঝতে হবে, আমার সন্তান অসুস্থ নয়, শুধু আলাদা। সমাজ যা-ই বলুক, নিজের অবস্থান ঠিক রেখে চাই যথাযথ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।’’

অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার থাকা ৩১ বছরের এমনই এক তরুণের বাবা সৌমেন উপাধ্যায় জানাচ্ছেন, তাঁর সন্তান কথা বলেন না। একটা সময়ের পর থেকে তিনি তাই লেখার মধ্যে দিয়ে ভাব প্রকাশ করতে শিখিয়েছেন সন্তানকে। সম্প্রতি সেই লেখা নিয়ে বইও বেরিয়েছে। ৭৩ বছরের সৌমেন বলেন, ‘‘আমার সন্তানের মতো যারা, তাদের এলিজিবিলিটি এক্সপ্লোর করতে হয়। মূল সমস্যা হয় এদের ভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে। মানুষ মাত্রেই নিজের ভাবনা প্রকাশ করতে চায়। যথাযথ ভাবে তা না করতে পারলেই এরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অভিভাবক হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করার পরিসর তৈরি করে দিতে হয় সে ক্ষেত্রে। এ ছাড়াও বহু ক্ষেত্রেই যে হেতু প্রবল নির্ভরশীলতা থেকে যায়, তাই চিন্তা হয়, আমার অবর্তমানে কে ওকে দেখবে!’’

একই ভাবনা অটিজ়ম স্পেকট্রাম ডিজ়অর্ডার থাকা আর এক সন্তানের মা অদিতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বললেন, ‘‘সন্তানের বয়ঃসন্ধির সময়ে চিন্তা আরও বেড়ে যায়। এই সময়ে শারীরিক ভাবে যে বদল আসছে, তার সঙ্গে মানসিক বিকাশের দিকটার মিল থাকে না। অভিভাবকেরা কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়ে ভাবতে শুরু করেন, আর তো পেরে ওঠা যাচ্ছে না। তাঁদের বয়স আরও বাড়লে কী হবে? তাঁদের মৃত্যুর পরেই বা কী হবে, সেই ভাবনা অবসাদ তৈরি করে। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনা করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা সত্যিই সম্ভব।’’

অদিতির দাবি, ‘‘কমিউনিটি লিভিং খুব গুরুত্বপূর্ণ এই ক্ষেত্রে। অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও এই সময়ে আরও বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন। বহু ক্ষেত্রেই বাবা-মা হয়তো মনোরোগ চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না, তাই তাঁরা যাতে মনের কথা ও চিন্তা খুলে বলতে পারেন, আশপাশে এমন পরিসর প্রয়োজন।’’

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, অটিজ়মকে রোগ ভেবে চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন অভিভাবকেরা। আর পাঁচটা বাচ্চার সঙ্গে তুলনা টানা বন্ধ করে বাচ্চার বিকাশ নিয়ে ভাবা দরকার। এ ভাবে না ভাবলে অবসাদ গ্রাস করতে পারে। সেই থেকেই চরম পথ বেছে নেন কেউ কেউ। বেহালার ঘটনায় শুনলাম, চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে ছুটছিলেন বাবা। নিশ্চয়ই তিনি এমন পরিসর পাননি, যেখান থেকে বুঝতে পারেন, তাঁর মেয়ে রোগাক্রান্ত নয়।’’

রিহ্যাবিলিটেশন সাইকোলজিস্ট শবনম রহমান আবার বললেন, ‘‘বাবা-মা তো বটেই, দাদু-ঠাকুরমারাও প্রবল চিন্তায় পড়েন। নাতি-নাতনির সঙ্গেই তাঁরা ভাবেন, নিজের ছেলে-মেয়ের কথা। সন্তানের দায়িত্ব একা সামলানো বাবা বা মায়েরা সমস্যায় পড়েন আরও বেশি। সব চেয়ে কাছের মানুষটিরই হয়তো সমর্থন পান না তাঁরা। কিন্তু নিজের সম্পত্তি নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা দরকার। এ ছাড়াও সরকারি বহু প্রকল্প রয়েছে, যা নিয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনা করলেই সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হতে পারে।’’

‘অটিজ়ম সোসাইটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইন্দ্রাণী বসু বলছেন, ‘‘২০১৬ সালের দ্য রাইটস অব পার্সনস উইথ ডিজ়এবিলিটিজ় আইন অনুযায়ী, এমন অভিভাবকহীন সন্তান সরকারি ভাতা পাওয়ার যোগ্য। এমন সন্তানকে রাখার বহু হোমও রয়েছে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ এ ব্যাপারে তেমন চোখে পড়ে না।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Autism Autism Spectrum Disorder

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy